বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

গ্যাস লাইনের ছিদ্রান্বেষণে এবার প্রযুক্তি

  • অরুণ কর্মকার, কন্ট্রিবিউটর রিপোর্টার   
  • ২৬ জানুয়ারি, ২০২১ ০৯:১৩

বিদ্যমান পদ্ধতিতে গ্যাসের পাইপলাইনে ছিদ্র অন্বেষণের জন্য অনুমাননির্ভর মাটি খনন, পাইপলাইনের কাছে পানিতে দৃশ্যমান বুদবুদ প্রভৃতিই প্রধান।

পুরো নেটওয়ার্কে গ্যাস বিতরণ পাইপলাইনের অজস্র ছিদ্র চিহ্নিত করার প্রযুক্তিভিত্তিক পদ্ধতি চালুর উদ্যোগ নিয়েছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (টিজিটিডিসিএল)।

এই পদ্ধতি চালু হলে এখনকার মতো অনুমাননির্ভর ও বিক্ষিপ্তভাবে মাটি খুঁড়ে ছিদ্র চিহ্নিত করতে হবে না। কাজটি অনেক সহজ ও নির্ভরযোগ্য হবে।

কোম্পানির সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জাতীয় গ্রিডের মাধ্যমে দেশে যে পরিমাণ গ্যাস বিতরণ করা হয়, তার প্রায় ৭০ শতাংশই করে তিতাস। তিতাসের সঞ্চালন ও বিতরণ নেটওয়ার্কে রয়েছে প্রায় ১ হাজার ৪০০ কিলোমিটার পাইপলাইন। ঢাকা মহানগরীসহ তিতাসের বিশাল বিতরণ এলাকায় গ্রাহকের আঙিনা পর্যন্ত জালের মতো ছড়িয়ে রয়েছে এসব লাইন।

কোনো কোনো এলাকায় স্থাপিত লাইনের বয়স প্রায় ৬০ বছর। প্রাকৃতিক কারণে এবং বিভিন্ন উন্নয়নকাজের সময় এসব লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আসছে। এ ছাড়া কোনো কোনো এলাকায় এমনও হয় যে, পাইপলাইনের যে নকশা তিতাসের কাছে রয়েছে, সে অনুযায়ী লাইন খুঁজেই পাওয়া যায় না। তাই ছিদ্রান্বেষণের পাশাপাশি ডিজিটাল ম্যাপিং করাও জরুরি হয়ে পড়েছে।

জানতে চাইলে তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আলী ইকবাল মো. নূরুল্লাহ্‌ বলেন, বিদ্যমান পদ্ধতিতে ছিদ্র অন্বেষণের জন্য অনুমাননির্ভর মাটি খনন, পাইপলাইনের কাছে পানিতে দৃশ্যমান বুদবুদ প্রভৃতিই প্রধান। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ‘মিথেন গ্যাস ডিটেক্টর মেশিন’ও ব্যবহার করা হয়। তবে এ ধরনের মেশিন তিতাসের কাছে বেশি নেই। আর এর কার্যকারিতাও শতভাগ নিশ্চিত হওয়ার মতো নয়।

তিতাসের এমডি বলেন, ছিদ্রান্বেষণ পদ্ধতি আধুনিক ও নির্ভরযোগ্য করার লক্ষ্যে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) শিগগিরই ১০টি উন্নত মানের গ্যাস ডিটেক্টর মেশিন দিচ্ছে। জরুরি গ্যাস নিয়ন্ত্রণ বিভাগের জন্য একই ধরনের আরও ১২টি মেশিন কেনা হচ্ছে। এরপর গ্রাহকের আঙিনায় ‘ইন্টেলিজেন্ট প্রিপেইড মিটার’ স্থাপন করা হবে, যা একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত পাইপলাইনের ছিদ্র স্বয়ংক্রিয়ভাবে শনাক্ত করবে।

তিনি জানান, ফেব্রুয়ারিতে আধুনিক যন্ত্রপাতি সজ্জিত এমন একটি গাড়ির (প্রাইভেট কার) কার্যক্রম সরেজমিনে পরীক্ষা করা হচ্ছে। এ গাড়িটি রাস্তা দিয়ে চলার সঙ্গে সঙ্গে সেখানকার পাইপলাইনের ছিদ্র চিহ্নিত করবে।

এ ছাড়া জাইকার সহযোগিতায় ‘স্মল ওয়ার্ল্ড’ অ্যাপভিত্তিক ছিদ্র শনাক্তকরণ এবং ‘লাইন ডিটেকশন ও ডিজিটাল ম্যাপিং’ ঢাকার মিরপুর ও বনানী এলাকায় পরীক্ষামূলক প্রকল্প হিসেবে শুরু করা হয়েছে বলে তিতাসের এমডি জানান।

কোম্পানির হিসাব বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, তিতাসের বিতরণ নেটওয়ার্ক থেকে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৪৫ কোটি ঘনমিটার গ্যাস উধাও হয়ে যাচ্ছে। এই হিসাব গত ৫ বছরের।

এই হিসাব অনুযায়ী, তিতাসের নেটওয়ার্ক থেকে এক বছরে যে পরিমাণ গ্যাস উধাও হয়ে যায়, তা দিয়ে তাদের বিতরণ নেটওয়ার্কভুক্ত তিনটি সার কারখানা ২ বছর চালানো যায়। আর গত ৫ বছরে যে গ্যাস উধাও হয়ে গেছে, তা দিয়ে তিতাসের নেটওয়ার্কভুক্ত ১৭টি সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র এক বছর পূর্ণ ক্ষমতায় চালানো যেত।

বর্তমান বাজার দরে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের গড় (ওয়েটেড অ্যাভারেজ) দাম ১২ টাকা ৬০ পয়সা। সে হিসাবে প্রতি বছর উধাও হয়ে যাওয়া গ্যাসের আর্থিক মূল্য ৫৬৭ কোটি টাকা। উধাও হয়ে যাওয়া এই গ্যাস সিস্টেম লসের হিসাবে যুক্ত করা হয়।

তবে তিতাসের একটি সূত্র জানায়, উধাও হয়ে যাওয়া গ্যাসের পরিমাণ বা সিস্টেম লস প্রকৃতপক্ষে আরও অনেক বেশি। কেননা তাদের ২৭ লাখেরও বেশি মিটারবিহীন আবাসিক গ্রাহকের অব্যবহৃত গ্যাস আসলে কোম্পানির ‘সিস্টেম গেইন।’ সেটা হিসাবে না ধরেই উপরোক্ত সিস্টেম লস বা উধাও হয়ে যাওয়া গ্যাসের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়।

অবশ্য জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিছুর রহমানও মনে করেন, পাইপ লাইনের ছিদ্র দিয়ে গ্যাস উড়ে যাওয়া বন্ধ করার জন্য লাইন প্রতিস্থাপন, প্রিপেইড মিটার এবং ইভিসি মিটার স্থাপনের মতো কাজগুলো সম্পন্ন না হলে প্রকৃত সিস্টেম লস এবং অপচয়ের সঠিক হিসাব জানা সম্ভব হবে না। তাই এই কাজগুলো দ্রুত সম্পন্ন করা দরকার। আগামী বছর তিনেকের মধ্যে যাতে এই কাজগুলো শেষ করা যায়, সেই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

দেশের সবচেয়ে বড় গ্যাস বিতরণ কোম্পানি তিতাস। ঢাকা মহানগরী ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ ও জামালপুর জেলাজুড়ে তিতাসের বিতরণ নেটওয়ার্ক বিস্তৃত। বর্তমানে তিতাসের দৈনিক চাহিদা ২২০ কোটি ঘনমিটার। কিন্তু চাহিদার তুলনায় গ্যাসের সরবরাহ কম থাকায় তিতাস ১৮০ কোটি ঘনমিটারের বেশি পায় না।

এ বিভাগের আরো খবর