দেশে করোনার টিকা প্রয়োগ শুরু যখন সময়ের অপেক্ষা, তখন প্রশ্ন জেগেছে, এই টিকা কার কার জন্য অনিরাপদ হতে পারে।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা আগেই জানিয়েছে, গর্ভবতী ও ১৮ বছরের নিচে কাউকে করোনার টিকা দেয়া হবে না। এর কারণ, এদের ওপর টিকার কার্যকারিতার পরীক্ষা করা হয়নি।
তবে চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর বাইরেও শারীরিক অবস্থার বিবেচনায় কারও কারও টিকা না নেয়া ভালো।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কারো যদি অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস থাকে, অতিরিক্ত অসুস্থার কারণে যদি হাসপাতালে ভর্তি থাকেন বা ঘরেও তীব্রভাবে অসুস্থ থাকেন, শুধু আমরা তাদের ক্ষেত্রে বলছি এই টিকা তাদের দেয়া যাবে না।’
এ ছাড়া যারা বর্তমানে আক্রান্ত বা আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হওয়ার পর চার সপ্তাহ পার হয়নি, তাদেরও এখন টিকা দেয়া হবে না।
সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি ইপিআই এর কর্মসূচি ব্যবস্থাপক মওলা বক্স চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অন্য কোনো টিকা নিয়ে যদি রিঅ্যাকশন দেখা দেয় তা হলে করোনা টিকা নিতে পারবে না।’
এই বক্তব্যের ব্যাখ্যা এমন: বাংলাদেশে ১০টি রোগের জন্য টিকা দেয়া হয়। হাম, রুবেলা, ধনুষ্টংকার, ডিপথেরিয়া, পোলিও, নিউমোনিয়া, জরায়ুর ক্যান্সার, হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস সি, জলাতঙ্ক প্রভৃতি।
এসব টিকা নিয়ে যাদের কোনো রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে, তাদের আপাতত করোনার টিকা থেকে দূরে থাকা ভালো।
অক্সফোর্ডের উদ্ভাবিত ৫০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন নেয়া হচ্ছে বেক্সিমকোর ওয়্যারহাউজে
একেকজনকে করোনার টিকা দেয়া হবে দুটি করে। প্রথম টিকা দেয়ার আট সপ্তাহ পর দেয়া হবে দ্বিতীয় ডোজ।
মওলা বক্স চৌধুরী জানান, প্রথম ডোজ নেওয়ার পরে রিঅ্যাকশন দেখা দেয় তাহলে তাদেরও করোনা টিকা দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হবে না।
স্বাস্থ্য অধিপ্তরের সহকারী পরিচালক রওশন জাহান আক্তার আলো বলেন, ‘কেউ যদি প্রচণ্ড অসুস্থ হন বা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন বা খুব বেশি অ্যালার্জি আছে তাদেরকেও করোনার টিকা দেয়া হবে না।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘৮০ শতাংশ মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে এমন অসুস্থ কাউকে টিকা দেয়া হবে না। এটা যে কোনো রোগে আক্রান্তের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
‘যাদের জ্বর বা অ্যালার্জি আছে, যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম বা যারা এমন কোনো ওষুধ খাচ্ছেন যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে তাদের টিকা না নিতে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।’
তবে তিনি ওষুধ খাওয়া শেষ করলে বা রোগ থেকে সুস্থ হলে টিকা নিতে পারবেন।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মডার্না, ফাইজার, স্পুৎনিক, সিনোভ্যাক ও অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা প্রয়োগ শুরু হয়েছে।
বাংলাদেশ প্রয়োগ করতে যাচ্ছে অক্সফোর্ড উদ্ভাবিত টিকা, যেটির উৎপাদন করছে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট।
আগামী বুধবার একজন নার্সকে টিকা প্রয়োগের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে টিকা কার্যক্রমের উদ্বোধন হচ্ছে। তবে গণটিকাদান শুরু আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে।
এক নার্সকে টিকা প্রয়োগের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে টিকা কার্যক্রমের উদ্বোধন হচ্ছে
টিকা নিতে আগ্রহীদেরকে আগামী বুধবার থেকে অনলাইনে নিবন্ধন করতে হবে। যদিও বহু মানুষ টিকা নিতে অনাগ্রহী বলে জানা যাচ্ছে।
এই অনাগ্রহ কেবল বাংলাদেশ নয়, পশ্চিমা দুনিয়াতেও ৩০ শতাংশের মতো মানুষ করোনার টিকা নিচ্ছে না বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসেছে। নিউজবাংলাও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নানা শ্রেণিপেশার ১০৮ জন মানুষের সঙ্গে কথা বলে একই রকম চিত্র পেয়েছে। টিকা নিতে অনাগ্রহের কারণ এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে ভয়।
টিকা নিবন্ধনের সময় জানাতে হবে কারও দীর্ঘমেয়াদী রোগ উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি রোগ, শ্বাসতন্ত্রের রোগ (টিবিসিওডিসি, অ্যাজমা) আছে কি না।
তাহলে কি এসব রোগীরা টিকা পাবেন না?- এমন প্রশ্নে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার মোহাম্মাদ খোরশীদ আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিষয়টি এমন না। ভ্যাকসিন নেওয়ার পর যদি তার কোনো উপসর্গ দেখা দেয় বা কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়, তা হলে তাদের প্রোফাইলটা যেন চিকিৎসকরা অ্যানালাইসিস করতে পারে, সেই কারণে ডেটাবেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে।’
মীরজাদী সেব্রীনা ফ্লোরা বলেন, ‘আমরা যে টিকা নিয়ে আসছি, এটার বড় কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।’
তিনি জানান, টিকা প্রদানের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে ষাটোর্ধ্বরা। এমন বয়সী মানুষ দেশে রয়েছে এক কোটি ২০ লাখ।
পর্যায়ক্রমে টিকা দেয়ার জন্য যারা বয়স ষাটোর্ধ্ব এবং দীর্ঘমেয়াদী রোগে ভুগছেন তাদেরকে আগে টিকা দেয়া হবে। এ জন্য তাদের তথ্যগুলো সংগ্রহ করা হচ্ছে।
সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি ইপিআই এর কর্মসূচি ব্যবস্থাপক মওলা বক্স চৌধুরী জানান, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস, কিডনির সমস্যা, শ্বাসকষ্ট, যক্ষ্মা, অ্যাজমা রোগী এমনকি ক্যান্সারে ভোগা রোগীও টিকা নিতে পারবেন। ওপেন হার্ট সাজার্রি করেছেন এমন ব্যক্তিও করোনার টিকা নিতে পারবেন।
কী ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে
সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি ইপিআই এর কর্মসূচি ব্যবস্থাপক মওলা বক্স চৌধুরী জানান, টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে জ্বর, মাথাব্যথা, এবং বমিভাব। এ ছাড়া টিকাদানের পর শরীরের সেই স্থানে লাল হয়ে যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, বাংলাদেশে যেসব টিকা দেয়া হয়, তার প্রতিটিরই কোনো না কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। তবে তা সবার ক্ষেত্রে হয় এমন না।