চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী শাহাদাত হোসেন ভোট কেন্দ্রে তাদের এজেন্টদের নিরাপত্তা চেয়েছেন।
ভোটের প্রচারের শেষ দিন তিনি দিনভর রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে দেনদরবার করেছেন। তার দলের কয়েক জন কর্মীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে জানিয়ে তাদের তালিকা নিয়ে গেছেন।
শাহাদাতের দাবি, যে ৮৫ জনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে, তাদের অনেকেই তার এজেন্ট ছিলেন।
নিইজবাংলাকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন-ইভিএমে ভোট হলেও কারচুপির আশঙ্কা থাকে। ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা কেন্দ্রের ভেতর দাঁড়িয়ে থেকে তাদের পছন্দের প্রার্থীদেরকে ভোট দিতে বাধ্য করে।
এটা যেন না হয়, সে জন্যই কেন্দ্রে এজেন্ট নিশ্চিত করতে চান শাহাদাত।
ভোট হবে ইভিএমে। এই যন্ত্র নিয়ে আপনার অবস্থান কী?
ইভিএমে ভোট হলে একটি দলের সন্ত্রাসী, মাস্তানেরা ইভিএমের পাশে থেকে গার্ড দেয়। তাদের ইচ্ছামতো ভোট দিতে বলে। এজেন্ট বের করে দেয়।
এ জন্য আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে বলেছি তারা ভোটের দিন আমার এজেন্টদের সুরক্ষা দেয়।
জয়ের ব্যপারে আপনি কতটুকু আশাবাদী?
যদি এখানে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, তবে আমি জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। তবে আজকের দিন থেকে মনে হচ্ছে নির্বাচনটা সুষ্ঠ হবে না। কারণ এখন পর্যন্ত আমার প্রায় ৮৫ জন ছেলেকে অ্যারেস্ট করে ফেলেছে। তারা ম্যাক্সিমাম এজেন্ট হওয়ার কথা ছিল। ঘরে ঘরে তারা যেভাবে গত সাত আটদিন ধরে তল্লাশি চালাচ্ছে, মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়েছে!
কারা এমন করছে বলে মনে হয়?
পুলিশের কিছু অতি উৎসাহী অফিসার এ কাজে নেমেছে। কিছু আওয়ামী লীগের চাঁদাবাজ, চিহ্নিত সন্ত্রাসী এখনও ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু গ্রেপ্তার করা হয়নি। অথচ আমাদের নিরীহ নেতা-কর্মী যারা আছে তাদের বাসায় বাসায় গিয়ে তুলে আনছে।
যেখানে নির্বাচন নিয়ে একটা উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করার ছিল, সেখানে মানুষের মনে একটা আতঙ্ক বিরাজ করছে। কাজেই আমি মনে করি এখনও দুইদিন সময় আছে, প্রশাসন শক্ত হাতে এটা হ্যান্ডেল করতে পারে। চিহ্নিত সন্ত্রাসীদেরকে আইনের আওতায় এনে নির্বাচনের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে পারে।
মানুষের ভোটের অধিকার গণতান্ত্রিক অধিকার। নির্বাচন কমিশনের উচিত সেটা ফিরিয়ে নিয়ে আসা।
আপনি যে পরিস্থিতির কথা বলছেন, তা অব্যাহত থাকলে আপনারা কী করবেন?
এই অবস্থা চলতে থাকলে আমরা আমাদের কমিটির সঙ্গে বসব এবং পরবর্তীতে সিদ্ধান্তে যাব।
নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা কীভাবে দেখছেন?
আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে বারবার ধরণা দিচ্ছি। গণতন্ত্রের জন্য, গণতন্ত্রের অধিকার রক্ষার জন্য, মানুষের অধিকার রক্ষার জন্য আমরা রাজনীতি করি। আমরা মনে করি, ভোটের মাধ্যমে মানুষ তার অধিকার ফিরে পাবে। আমি আবার বলছি, যে দুই দিন আছে সেই দুইদিন যদি প্রশাসন চাই তবে সেটা আয়ত্বে আনতে পারবে।
আপনাকে কেন ভোট দেবে মানুষ?
আমি গত ৩৫ বছর ধরে এই শহরে রাজনীতি করছি। এর সঙ্গে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে গত ২০ বছর অনেক সেবা করেছি। বিনা মূল্যেও রোগীও দেখি। যখন করোনার প্রাদুর্ভাব হয়, তখন চিকিৎসার একটা ব্যাপার আসে। আমি তখন হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলাম। অক্সিজেন সিলিন্ডার থেকে শুরু করে আর সবকিছু সরবরাহ করেছিলাম। প্রায় এক লাখ ২২ হাজার পরিবারে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেছিলাম।
আমার ডাক্তার হিসেবে আরও কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। সিটি করপোরেশনের মেয়র একজন ডাক্তার হতে পারলে আরও বেশি সুবিধা পাবে।
ভোটাররা আরও মনে করতে পারে যে আমার যে এনার্জি লেভেল, মোবিলিটি লেভেল ও এলিজিবিটি লেভেল আরেকজনের থেকে বেশি হতে পারে। সেটা এই জেনারেশনের সঙ্গে যাবে। আমার থিংকিং লেভেল আরেকজনের থেকে বেশি হতে পারে। আমি আমার ইশতেহারে সেটা দিয়েছি। আমার মনে হয় এই জিনিসগুলো তারা চিন্তা ভাবনা করবে। একজন ডাইনামিক কেউ আসবে যে সিটিকে লিড দিতে পারবে।
করোনাকালে চিকিৎসা সেবার কথা বললেন, কী করেছেন?
করোনা এসেছিল মার্চে। আমার স্পষ্ট মনে আছে, তখন আমিই প্রথম মাস্ক পরানো শুরু করি। এমনকি তখন আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী যিনি আছেন, তাকেও মাস্ক পরিয়েছি। সেটাকে কেউ প্রথমে গুরুত্ব দেয়নি।
আমি বলেছিলাম, জনগণকে যদি স্বাস্থ্যবিধি মানানো না হয়, তবে আমি নির্বাচনে যাব না। তখন আমি একটা আইসোলেশন সেন্টার খুলতে চেয়েছিলাম। তবে অনুমতি পাইনি। তবে আমি সাহায্য করেছি। আমার ফেসবুক পেজে ভিউজ থাকত প্রায় তিন/চার লাখ।
রাজনীতিতে আপনার ভূমিকা কী?
১৯৮৬-৮৭ সালে আমি ছাত্র রাজনীতি শুরু করি। তখন আমি চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে তৃতীয় বর্ষের ছাত্র।
১৯৮৭ সালে আমি কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক হই। ৮৯ সালে ছাত্রদলের চট্টগ্রাম মেডিক্যালের সভাপতি হই।
৯১ সালে পড়া শেষে আমি ছাত্র রাজনীতি ছেড়ে দিই। এরপর আমি ড্যাবের প্রেসিডেন্ট হই। তবে ওই বছরের নির্বাচনে আবার বিএনপির রাজিনীতিতে যুক্ত হই। এভাবে ৯৬ সাল পর্যন্ত আমি বিএমএর সাংগঠিক সম্পাদক ছিলাম।
২০০১ সালে আমি সদস্যসচিব হই আমার থানার। ২০০৪ সালে সেখানে সাধারণ সম্পাদক হই। এরপর ২০০৭ সালে আমি থানার সভাপতি হলাম।
এক এগারোর সময় যখন এখানকার অনেক নেতা দেশের বাইরে চলে গেল, তখন আমাকে চট্টগ্রামের রাজনীতির দায়িত্ব দেয়া হয়। তখন থেকেই স্ট্রংলি কাজ শুরু করি।
২০০৮ সালে এসে একটা আহ্বায়ক কমিটি হয় সেখানে আমি জয়েন্ট সেক্রেটারি ছিলাম। ২০০৯ সালে আমি মহানগর বিএনপির সেক্রেটারি হই। ২০১৬ সাল পর্যন্ত এই দায়িত্বে ছিলাম।
এরপর ওই বছর আমি মহানগর বিএনপির সভাপতি হই। পরে ২০২০ এটা ভেঙে আবার নতুন করে করা হয়। এটাই আমার পলিটিক্যাল ক্যারিয়ার।