নিজাম শিপিং লাইন্সের দুটি লঞ্চের দুই মাস্টারকে কারাগারে পাঠানোর প্রতিবাদে লঞ্চ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে শ্রমিকরা।
সোমবার দুপুর দুইটা থেকে কর্মবিরতি শুরু করে তারা। আড়াইটার দিকে বরিশাল নদী বন্দরে নোঙর করা লঞ্চগুলো পন্টুন থেকে সরিয়ে নিয়ে কীর্তনখোলা নদীর মাঝে রাখা হয়।
বরিশাল নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মাস্টার আবুল হাসেম জানান, অ্যাডভেঞ্জার-১ ও অ্যাডভেঞ্জার-৯ এর মাস্টার জামাল হোসেন ও রুহুল আমিনের জামিন নাকচ করে কারাগারে পাঠায় ঢাকার মেরিন আদালত। প্রতিবাদে লঞ্চ শ্রমিকরা কর্মবিরতির ডাক দিয়ে লঞ্চ চলাচল বন্ধ করেছেন। এটি সংগঠনের কোনো সিদ্ধান্ত নয়।
কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চের মাস্টার কবির হোসেন জানান, তারা চান না কর্মবিরতি ডেকে যাত্রীদের ভোগান্তিতে ফেলতে। তারপরও বাধ্য হয়ে সরকারের কিছু কর্মকর্তার এমন সিদ্ধান্তের কারণেই তাদের এ পদক্ষেপ।
বরিশাল নদী বন্দর কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘নৌযান শ্রমিকরা আন্দোলন করছে। আমরা বিষয়টি ঊর্ধতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। তারা লঞ্চ মালিকদের সঙ্গে কথা বলবেন। আশা করি দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।’
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)-বরিশালের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর কবির হোসেন জানান, ধর্মঘট প্রত্যাহার হলে বরিশাল থেকে ঢাকায় মানামী, অ্যাডভেঞ্চার ১, সুরভী ৮, কীর্তনখোলা ১০, পারাবাত ৯ ও ১১ এবং সুন্দরবন ১০ লঞ্চ ছেড়ে যাওয়ার কথা রয়েছে। তবে ধর্মঘটের কারণে লঞ্চগুলো নদীর মাঝে নোঙর করা রয়েছে।
এদিকে পটুয়াখালীতে লঞ্চ শ্রমিকদের ধর্মঘটের কোনো প্রভাব পড়েনি।
পটুয়াখালী নদী বন্দরের কর্মকর্তা খাজা সাদিকুর রহমান জানান, সঠিক সময়ে বন্দর থেকে প্রিন্স আওলাদ, ছত্তার খান ও সুন্দরবন ১৪ লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে।
সুন্দরবন নেভিগেশন কোম্পানি- পটুয়াখালীর সুপারভাইজার আবু জাফর জানান, লঞ্চ শ্রমিকদের ধর্মঘটের কোনো বিষয় তিনি জানেন না।
ঝালকাঠি থেকে ফারহান ৭ লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে গিয়েছে। এ লঞ্চের মাস্টার জানান, ধর্মঘটের বিষয়ে তাদের কোনো খবর দেয়া হয়নি।
এদিকে পিরোজপুরের হুলারহাট লঞ্চঘাট থেকে আটটি লঞ্চ ছেড়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন লঞ্চ শ্রমিকরা।
কেন্দ্রীয় লঞ্চ মালিক সমিতির সহসভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু জানান, মাস্টারের জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় নৌ শ্রমিকরা কোনো ঘোষণা ছাড়াই ঢাকা-বরিশাল নৌ রুটে লঞ্চ বন্ধ করে দিয়েছেন। তারা লঞ্চগুলো ঘাটের অন্য পারে নিয়ে গেছে।
লঞ্চ বন্ধে ভোগান্তিতে যাত্রীরা২০২০ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বরিশাল জেলার হিজলা উপজেলায় মেঘনা নদীর মিয়ার চরে ঘন কুয়াশায় নিজাম শিপিং লাইন্সের দুটি লঞ্চের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে দুটি লঞ্চ ক্ষতিগ্রস্থ হলেও যাত্রীরা হতাহত হয়নি। এ ঘটনায় দুই লঞ্চের মাস্টারসহ চার জনের সনদ চার মাসের জন্য জব্দ করে কর্তৃপক্ষ।
পরে বিআইডব্লিউটিএ বাদী হয়ে মেরিন আদালতে মামলা করে। মামলার নির্ধারিত তারিখে সোমবার আদালতে হাজিরা দেন মাস্টার রুহুল আমিন ও মাস্টার জামাল হোসেন। তাদের জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠায় মেরিন আদালত।