বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ফিরোজ রশীদ চরম মূর্খ: নির্মূল কমিটি

  •    
  • ২৫ জানুয়ারি, ২০২১ ১৭:১৮

“কাজী ফিরোজ রশীদ বাংলাদেশে বাস করেও কারা, কী উদ্দেশ্যে ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’ গঠন করেছেন তিনি যদি তা না জানেন সেটা চরম মূর্খতারই পরিচায়ক।”

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটিকে নিষিদ্ধ করার দাবি তোলা জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদকে চরম মূর্খ বলেছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে তিন দশক ধরে সক্রিয় সংগঠনটি।

সোমবার সংগঠনের সভাপতি শাহরিয়ার কবির, সহসভাপতি শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন, কলাম লেখক সৈয়দ মাহবুবুর রশিদ, শিক্ষাবিদ মমতাজ লতিফ ও সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এই কথা বলা হয়।

আগের দিন জাতীয় সংসদে কাজী ফিরোজ রশিদ নির্মূল কমিটি নিয়ে বলেন, ‘আমাদের কিছু সংগঠন আছে। একটি সংগঠন আছে নাস্তিক নির্মূল কমিটি। আরেকটি সংগঠন হচ্ছে ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি। এই নির্মূল করার ক্ষমতা এদের কে দিয়েছে? আমি জানতে চাই। তুমি কে নির্মূল করার?

‘আমার দেশে কোর্ট-কাচারি আছে না? অনেক বিচার করেছে এই সরকার। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হচ্ছে, রাজকারদের বিচার হচ্ছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে, তুমি কেন?... আমি মনে করি যে এদেরকেই প্রতিরোধ করার দরকার।

‘তোমরা নিজেরা পুলিশ প্রোটেকশনে থেকে এই ধান্দাবাজি করছ, এইটা জনগণ বিশ্বাস করে না। আমি মনে করি যে এদেরকেই প্রতিরোধ করার দরকার।’

তার এই বক্তব্যে সেদিনই তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়। শাহরিয়ার কবির বিভিন্ন গণমাধ্যমকে দেয়া প্রতিক্রিয়ায় ফিরোজ রশীদকে মূর্খ বলেন।

১৯৯২ সালে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গঠিত হয় নির্মূল কমিটি। ফাইল ছবি

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সিদ্ধান্তে দালাল আইনে বন্দি সবাইকে ছেড়ে দেয়া হয়। এরপর বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে প্রথমে সাংগঠনিকভাবে সোচ্চার হয় একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটি। ১৯৯২ সালের ১৯ জানুয়ারি শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে নির্মূল কমিটি গঠিত হয়। ১৯৯২ সালেই কমিটির আয়োজনে গণ আদালতে প্রতীকী বিচারে গোলাম আজমের ফাঁসির রায় হয়।

নির্মূল কমিটির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘জাতীয় সংসদের অধিবেশনে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ যে কদর্য ভাষায় একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির প্রতি বিষোদগার করেছেন, আমরা এর তীব্র নিন্দা করি এবং সংসদের ধারাবিবরণী থেকে এ ধরনের অসংসদীয়, কদর্য, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করার জন্য মাননীয় স্পিকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’

নির্মূল কমিটির নেতারা বলেন, “কাজী ফিরোজ রশীদ বাংলাদেশে বাস করেও কারা, কী উদ্দেশ্যে ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি’ গঠন করেছেন তিনি যদি তা না জানেন সেটা চরম মূর্খতারই পরিচায়ক।”

নির্মূল কমিটি বলেছে, নির্মূল শব্দকে নিয়ে তিনি (ফিরোজ রশীদ) ৭১-এর ঘাতক দালাল যুদ্ধাপরাধীদের ভাষায় বিদ্রুপ করে তাদের প্রকারান্তরে হত্যাকারী বলেছেন।

‘দেশের বরেণ্য বুদ্ধিজীবী, মুক্তিযুদ্ধের অধিনায়ক এবং বিশিষ্ট নাগরিকরা এই নামটি নির্ধারণ করেছিলেন ’৭১-এর গণহত্যাকারীদের মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক, স্বাধীনতাবিরোধী রাজনীতির মূল উৎপাটনের জন্য, কাউকে কায়িকভাবে হত্যা করার জন্য নয়’-বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।

১৯৯২ সালে নির্মূল কমিটির আয়োজনে গণ আদালতে গোলাম আজমের প্রতীকী বিচারের পোস্টার। ফাইল ছবি

জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সেনা শাসক থাকা অবস্থায় নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতায় আরোহনের বিষয়টিও স্মরণ করিয়ে দেয়া হয় বিজ্ঞপ্তিতে।

বলা হয়, ‘সংবিধান হত্যা করে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে কীভাবে মুক্তিযোদ্ধা, ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক, জনতা হত্যা করে নয় বছরের স্বৈরশাসন অব্যাহত রেখেছিল এ ইতিহাস জাতির অজানা নয়।’

এতে বলা হয়, ‘৭১-এর ঘাতকদের মন্ত্রী বানিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ভাস্বর অসাম্প্রদায়িক মানবিক সংবিধানে ‘রাষ্ট্রধর্ম’ যুক্ত করে দেশ ও জাতিকে পাকিস্তানের মতো সাম্প্রদায়িক বিভাজন এবং অমুসলিম নাগরিকদের সংবিধান প্রদত্ত অধিকার ও মর্যাদা হরণ করে জাতীয় পার্টি ৩০ লক্ষ শহিদের আত্মদান যেভাবে লাঞ্ছিত করেছে, দেশ ও জাতিবিরোধী এই ঘৃণ্য অপরাধের দায় জাতীয় পার্টিকে ধ্বংসের পূর্ব পর্যন্ত বহন করতে হবে।’

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের প্রাক্কালে নির্মূল কমিটি ’৭১-এর গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য দেশে ও বিদেশে ৩০ লাখ গণস্বাক্ষর সংগ্রহের ঘোষণা দিয়েছে। এই অবস্থায় পাকিস্তানপন্থি গণহত্যাকারীদের দল এবং তাদের পুনর্বাসনকারীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নির্মূল কমিটির প্রতি বিষোদগার আরম্ভ করেছে। ফিরোজ রশীদ একই ভাষায় তার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য বেছে নিয়েছেন, যেখানে নির্মূল কমিটির কোনো প্রতিনিধি ছিলেন না।

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক মাননীয় মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা গত ৩০ বছরে বহুবার নির্মূল কমিটির মঞ্চে বক্তব্য রেখেছেন- এই বিষয়টিও স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নির্মূল কমিটির দাবির কারণে ২৫ মার্চ জাতীয় গণহত্যা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত ২০১৭ সালের মার্চে সংসদে গৃহীত হয়েছে।

নির্মূল কমিটি বলেছে, যখন তারা বাংলাদেশের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির উদ্যোগ নিয়েছে তখন কাজী ফিরোজ রশীদ কাদের তুষ্ট করার জন্য নির্মূল কমিটির প্রতি বিষোদগার করছেন সেটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।

৭১-এর ঘাতক, দালাল, রাজাকার ও নব্য রাজাকারদের বাংলাদেশের মাটি থেকে উৎখাত করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ ও সমাজ গড়ার আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে লা হয়।

নির্মূল কমিটি বিশ্বাস কবে, ৩০ লক্ষ শহিদের রক্তে লেখা সংবিধানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আবার পুনঃস্থাপিত হবে এবং মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তি ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবে।

এ বিভাগের আরো খবর