চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচারের শেষ দিন জনসংযোগের বদলে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে ছুটছেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী শাহাদাত হোসেন।
বুধবার ভোট। দুই দিন আগে সোমবার প্রচারের শেষ সুযোগ প্রার্থীদের সামনে।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী কথা বলেছেন নিউজবাংলার সঙ্গে। শেষবারের মতো ব্যস্ত ভোটারের সঙ্গে।
অন্যদিকে বিএনপির প্রার্থী শাহাদাত ছুটছেন রিটার্নিং কর্মকর্তার মুহম্মদ হাসানুজ্জামানের কাছে। তার দাবি, তার কয়েকজন নেতা-কর্মীকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। তার সেই তালিকা নিয়ে যান তাদের ছাড়িয়ে আনতে। প্রথমে সকালে দুপুরের আগে, পরে দুপুরের পর আবার।
৬৯ জনকে গ্রেপ্তারের অভিযোগ নিয়ে সকালে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে যান শাহাদাত।
তিনি বলেন, ‘যদি এদের আজকেই ছেড়ে দেয়া না হয়, তবে এই নির্বাচন অর্থহীন। আমি অবস্থান কর্মসূচি পালন করব।’
শাহাদাত জানান, সাত দিন ধরে নতুন মামলা ও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে তার কর্মীদের।
তিনি বলেন, ‘আর দুই দিন সময় আছে। এর মধ্যে আমাদের নেতাকর্মীদের ছেড়ে দিতে হবে।’
রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধ রয়েছে। আমরা আগে করা মামলাতে কাউকে গ্রেপ্তার করতে মানা করেছি। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী দলের অনেককেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমরা কাউকে ছাড় দিইনি।’
‘আমরা কারণ ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করেছি না। এর আগে এক জনকে খুন করা হয়েছে, আমরা চার ঘণ্টার মধ্যে আসামিকে গ্রেপ্তার করেছি। এরপর একজন সংখ্যালঘু কাউন্সিলর প্রার্থীকে কটুক্তি করার অপরাধে তাদেরকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
তখন শাহাদাত ফিরে আসেন। এরপর দুপুরের পর আবার যান সেখানে। এবার আটক ৮৫ জনের নামের তালিকা তুলে দেন।
এ সময় রির্টানিং কর্মকর্তার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আমি সকালে এসেও আপনাকে বলেছিলাম। এখনও কাউকে ছাড়েনি। তিনটা বেজে গেলে তাদের সবাইকে কোর্টে চালান করা হবে।’
‘আপনি এখনই ফোন দেন’-বলেও রির্টার্নিং কর্মকর্তার কাছে অনুরোধ জানান তিনি।
জবাবে হাসানুজ্জামান বলেন, ‘আমার কথাতে আপনি আশ্বাস পাচ্ছেন না?’
শাহাদাত বলেন, ‘আমি ১০ মাস ধরে একটা প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। অনেক কষ্ট করে এই পোলিং এজেন্টদেরকে বুঝিয়ে রাজি করিয়েছি। এখন যদি এভাবে তাদের ধরে নিয়ে যায়, তাহলে নির্বাচন করে কী লাভ?’
তখন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার সালেহ মুহম্মদ তানভীরকে ফোন দেন হাসানুজ্জামান।
তিনি বলেন, ‘আমাদের মাননীয় মেয়র প্রার্থী শাহাদাত হোসেন সাহেব একটা তালিকা দিয়েছিলেন। তার কিছু লোকজন গ্রেপ্তার হচ্ছিলেন। সেই তালিকাটা আপনার ওখানে পাঠিয়েছি। সিটিএসবির সঙ্গে কথা বলেছি, যাচাই বাছাই করে যদি কেউ নির্দোষ থাকে, তাদের ছেড়ে দিতে… জাস্ট আপনাকে আমি বিষয়টি জানালাম।’
ফোনে কথা বলার সময়, শাহাদাত বারবার তার পোলিং এজেন্ট কথাটা উল্লেখ করার তাগাদা দিতে থাকেন।
সিএমপি কমিশনারের সঙ্গে ফোনালাপ শেষে রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, ‘আমি কথা বললাম। উনারা যাচাই বাছাই করছে। তারপর দেখবে।’
তাতেও সন্তুষ্ট হন নি শাহাদাত। বললেন, ‘আমার এজেন্ট কথাটা তো উল্লেখ করেননি।’
তখন রিটার্নিং কর্মকর্তা প্রতিউত্তরে বললেন, ‘আপনি তো আমাকে কোনো এজেন্টের তালিকা দেননি।’
ফিরতি কথায় শাহাদাত বলেন, ‘এভাবে কথা বললে তো কাজ হবে না। যে স্টাইলে কথা বলেছেন, তাতে কাউকে ছাড়বে না। এভাবে হবে না। স্ট্রংলি বলতে হবে। যেহেতু আপনি দায়িত্বে আছেন। আপনাকে আরও বোল্ডলি বলতে হবে। এভাবে বললে জিন্দেগিতেও ছাড়বে না। এমন একটা স্টেজে চলে গেছে, তারা চাইবে না আমাদের লোকজনকে ছাড়তে।’
এর মধ্যেই আরও দুজনের আটকের খবর আসে শাহাদাতের কাছে। বিষয়টি রিটার্নিং কর্মকর্তার নজরে আনা হলে তিনি নাম দুটি লিখে দিয়ে যেতে বলেন।
বিএনপির প্রার্থীকে হাসানুজ্জামান বলেন, ‘আপনারাও তো বললেন, যাচাই বাছাই করে আমরা দেখব। আমাকে একটু সময় দেন। আমি একটু নিরিবিলি কাজ করি।’