আর দুই দিন পরে ভোট। কাকে মেয়র করবেন চট্টগ্রাম মহানগরবাসী?
নৌকা নিয়ে লড়া আওয়ামী লীগের প্রার্থী মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী বলছেন, ভোটের প্রচারে তিনি যে স্বতস্ফুর্ততা দেখেছেন, তাতে জয় নিয়ে তার মধ্যে কোনো সংশয় নেই।
প্রচারের শেষ দিন সোমবার রেজাউল মুখোমুখি হন নিউজবাংলার। কথা বলেন তার পরিকল্পনা, অতীতের ভূমিকা, বিরোধীদের সমালোচনা নিয়ে।
রেজাউল বললেন, নগর পিতা হয়ে নয়, সেবক হিসেবে চট্টগ্রামবাসীর দুঃখ দুর্দশা লাঘবে ‘খেদমত’ করতে চান। জনগণ যদি তার পক্ষে রায় নাও দেয়, তাহলেও তাদের পাশে থাকবেন।
রেজাউলের মনোনয়ন এখানে ছিল চমক জাগানিয়া। তিনি দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করলেও সেভাবে কখনও আলোচনায় আসেননি। তবে স্বচ্ছ ভাবমূর্তি আছে তার পরিচিতজনদের মধ্যে।
এখানে বিএনপি প্রার্থী করেছে শাহাদাত হোসেনকে। তার সঙ্গেই হবে লড়াই।
প্রচারের শেষ দিনে চট্টগ্রামবাসীর প্রতি আপনার কী আবেদন থাকবে?
এই দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে চট্টগ্রামের মেয়র হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছেন। এই নৌকায় ভোট দিয়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, স্বৈরাচারের পতন হয়েছে; নৌকায় ভোট দিয়ে দরিদ্র দেশ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে।
তাই আমি বলতে চাই, এই নৌকায় ভোট দিলে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা হবে, উন্নয়ন আরও বেগবান হবে। চট্টগ্রামকে সমৃদ্ধ নগরী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আমি সবাইকে বিনীতভাবে, সকল শ্রেণি পেশার মানুষকে দল-মত নির্বিশেষে, সকল নাগরিকদের আমি আবেদন জানাব, ২৭ তারিখ ভোট কেন্দ্রে গিয়ে আমার প্রতীক নৌকায় ভোট দিয়ে আমাকে চট্টগ্রামের নগর পিতা হিসেবে নয়, চট্টগ্রামে মানুষের একজন সেবক হিসেবে নির্বাচিত করে চট্টগ্রামবাসীর খেদমত করার সুযোগটা যেন দেয়।
কেন আপনাকে চট্টগ্রামবাসী ভোট দেবে? কী যুক্তি আছে আপনার কাছে?
আমি মানুষের সুখে, দুঃখে ছিলাম। মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য বিশেষ করে আঞ্চলিক সমস্যাগুলো নিরসনে আন্দোলন, সংগ্রাম করেছি। করোনার সময় আমি অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। তাই মানুষ আমার ওপর আস্থা রাখছে। যাকে দুর্দিনে পাওয়া যায়, তার প্রতি মানুষের আস্থা বেড়ে যায়।
সেই হিসেবে আমি যখন যেখানে প্রচারণায় গিয়েছি স্বতস্ফূর্তভাবে মানুষ আমার প্রচারে অংশগ্রহণ করেছে। এমনকি আমার ওপর ফুলের পাপড়ি ছুঁড়ে মেরেছে। আমাকে ‘ভি’ চিহ্ন দেখিয়েছে, তালি দিয়েছে। অনেক মহিলা ঘরের আঙিনায় এসে দাঁড়িয়েছে। আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছে। এত মানুষ দেখে আমি নিজেও অভিভূত হয়েছি।
মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে আমি রাজপথে ছিলাম বলেই মানুষ আমাকে গ্রহণ করেছে।
নির্বাচনি পরিবেশ নিয়ে আপনার অভিমত কী?
আমি বলতে চাই নির্বাচনের খুব সুষ্ঠু সুন্দর পরিবেশ বিরাজ করছে। জনগণ স্বতস্ফূর্তভাবে কেন্দ্রে যাবে। তাদের পছন্দের প্রার্থীকে তারা নির্বাচিত করবে।
জনগণের রায় মেনে নিতে আপনি কতখানি প্রস্তুত?
খেলতে নামলে জয় পরাজয় আছে। নির্বাচনে জনগণ যদি আমাকে ভোট দেয় আমি নির্বাচিত হব। আরেক জনকে ভোট দিলে সে নির্বাচিত হবে। জনগণ তার পছন্দের প্রার্থীকে বেছে নেবে।
আমি আশা করি জনগণ তার পছন্দের প্রার্থী হিসেবে আমাকে বেছে নেবে। নির্বাচনের ফলাফল যেটাই হোক না কেন- অবশ্যই সেটা মেনে নেব।
সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি আছে বিরোধী পক্ষের। বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
সেনাবাহিনী মোতায়েন হওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি এখনও সৃষ্টি হয়নি। আপনার নিজেই বলেন? আপনারা তো মিডিয়া ব্যক্তিত্ব। কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া, এখনও পর্যন্ত সেরকম কোনো সহিংস পরিস্থিতি সংগঠিত হয়নি। তাই এখানে সেনাবাহিনী মোতায়েনের প্রশ্নটা কেন আসবে?
কিন্তু আপনারা প্রতিদিনই অভিযোগ করছেন, আপনাদের নির্বাচনী ক্যাম্পগুলোতে হামলা হচ্ছে…
যারা হামলা করছে এরা তো হামলাকারী, এরা তো অগ্নি সন্ত্রাসী, এরা তো ঘুমন্ত মানুষকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মেরেছে। এরা পেট্রল বোমাবাজ। এরা মানুষ হত্যা করেছে, সন্ত্রাস করেছে। আপনারা কি ভুলে গেছেন? এরা চাইবে এতটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে। যাতে আমাদের এই সুষ্ঠু নির্বাচনটা প্রশ্নবিদ্ধ হয়।
দেখেন না প্রতিদিন অভিযোগ। অথচ তারা আমাদের অফিস জ্বালিয়ে দেয়, আমাদের অফিস ভেঙে দেয়। সেটা কিন্তু বলে না। সুন্দর সুন্দর কথা বলে। কথার ফুলঝুড়ি ছড়ায়।
নির্বাচনে ভোটারদের আগের মত উৎসাহ দেখা যায় না। উপস্থিতি কম থাকে। তার ওপর সাধারণ ছুটিও ঘোষণা করা হয়নি।
আমাদের একটা অভ্যাস আছে, ছুটি পেলেই সবাই বাড়ি চলে যাই। আমাদের এখানে যারা ভোটার আছে, তারা সবাই তো এখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন না। একদিন ছুটি পেয়েছে, বাড়ি চলে যাচ্ছে, কাজটা সেরে আসি। বরং খোলা থাকায় ভালো। সবাই শহরে অবস্থান করবে। তার ভোট সে প্রয়োগ করতে পারবে। খোলা রাখাতে মনে হয় ইসি (নির্বাচন কমিশন) সবচেয়ে ভালো একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
পরিসংখ্যান বলছে, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে ভোটার হার আরও কমে যায়। এমন অবস্থায় আপনি কি মনে করেন ভোটাররা আসবে ভোট দিতে?
বললাম তো, বন্ধ থাকলে ভোটার উপস্থিতির ওপর একটু প্রভাব পড়ত। কারণ অনেকে শহর লিভ (ছেড়ে যেতো) করত। এখন তো সবাই শহরে অবস্থান করবে। সেখানে ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার কোনো সম্ভাবনা (আশঙ্কা) দেখছি না।
নির্বাচনের দিন যদি সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, আপনারা কীভাবে মোকাবিলা করবেন?
নির্বাচনের দিন যদি সে রকম কোনো পরিস্থিতি কেউ সৃষ্টি করতে চায়, বা করে, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রেখেছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের আইনের প্রয়োগ করবে। আমরা কেন সেখানে প্রতিহত করতে যাব? বা আমরা কেন সেখানে বাধা দিতে যাব? আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের কাজ করে যাবে।
আপনি বিজয়ী হলে চট্টগ্রামবাসীর কাছে আপনার প্রথম অঙ্গীকার কী থাকবে?
চট্টগ্রামের যে জলাবদ্ধতা আছে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সমস্যা আছে। তারপর রাস্তা-ঘাট, যানজট, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা, সেগুলোও আছে। এগুলো নিয়েই প্রথম কাজ আরম্ভ করব।
সমস্যা তো অনেক আছে, আস্তে আস্তে সেই সমস্যাগুলোর দিকে নজর দেয়া হবে। আমি তো বলেছি, চট্টগ্রামের সকল শ্রেণি পেশার মানুষের সঙ্গে বসে পরামর্শ নিয়ে তাদের মেধা, চিন্তা, চেতনাকে আমি কাজে লাগিয়ে একটি পরিকল্পিত নগরী গড়ে তোলার স্বপ্ন আমি দেখি।
আপনার প্রধান প্রতিপক্ষ ধরা হচ্ছে বিএনপির প্রার্থীকে। তাদের অভিযোগ আপনি ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী হওয়ায় নির্বাচনে প্রভাব খাটাচ্ছেন। বিষয়টিকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
আমরা সরকারি দলে আছি, ঠিক আছে। কোথায় নির্বাচনী প্রভাব খাটিয়েছি? যদি নির্বাচনি প্রভাব খাটাতাম, যদি সরকারি দলের সেই প্রভাব খাটাতাম- ওরা আমার অফিস ভাঙতে পারে? ওরা আমার কর্মীকে মারতে পারে? মাইকিং করতে গিয়ে আমার কর্মীদের আহত করতে পারে?
এটাতে বোঝা যায়, আমরা সরকারে আছি, কিন্তু কোনো উচ্ছৃঙ্খল আচরণে আমরা বিশ্বাস করি না। উচ্ছৃঙ্খল কোনো আচরণ করতেও আমরা রাজি নই। আমরা জনগণের ম্যান্ডেটে বিশ্বাস করি। কারণ আমরা জানি, জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে। জনগণ উন্নয়নের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে। জনগণ এখন জ্বালাও পোড়াও আন্দোলনে বিশ্বাস করে না। তারা জ্বালাও পোড়াও করেছে, জনগণ দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।