খুলনা নগরীর লবনচরা এলাকায় সাড়ে ৮ বিঘা জমির ওপর গড়ে উঠেছে সজিব হ্যাচারি অ্যান্ড মিনি পার্ক। নানা জাতের পাখি থাকলেও পার্কটির মূল আকর্ষণ সুন্দরবনের চিত্রা হরিণ। সেখানে আছে ১১টি চিত্রা হরিণ, যার মধ্যে দুইটি নবজাতক।
যশোরের কেশবপুরের একটি খামার থেকে চারটি হরিণ কিনে লালন-পালন শুরু করেন পার্কটির প্রতিষ্ঠাতা গল্লামারি এলাকার ইমরান হোসেন সজিব।
তিনি জানান, প্রথমে শৌখিন লাইসেন্স করলেও ১০টির বেশি হরিণ থাকায় এবার তিনি খামারির লাইসেন্স করবেন।
কিন্তু চিত্রা হরিণ পালন কেন?
উত্তরে সজিব জানান, হরিণ বন্যপ্রাণী হলেও গৃহপালিত প্রাণীর মতো পোষ মানে। হরিণের মধ্যে এই জাতটিই সবচেয়ে আকর্ষণীয়। এর তেমন কোনো রোগ-বালাই হয় না। তাই পালনটা সহজ।
সজিব আরও জানান, এক-একটি প্রাপ্তবয়স্ক চিত্রা হরিণের দাম ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। তার কাছ থেকে হরিণ কিনতে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেকেই যোগাযোগ করছেন।
সজিব হ্যাচারি অ্যান্ড মিনি পার্কের ব্যবস্থাপনায় থাকা মোহাম্মদ আসিফ শেখ বলেন, ‘আমাদের পার্কে হরিণের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। হরিণ খুবই নিরীহ প্রাণী। এরা আমাদের সাথে বন্ধুর মতো হয়ে গেছে।
‘এরা গমের ভুসি, ডালের ভুসি, গুঁড়া সয়াবিন, মালঞ্চ-কলমি পাতা, কেওড়া ফল, বাঁধাকপি এসব খায়। এগুলোর তেমন কোনো রোগ হয় না। তারপরও আমরা নিয়মিত এদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করি।’
সজিবের মতো খুলনায় অনেকেই চিত্রা হরিণ পালনে আগ্রহ দেখাচ্ছেন বলে জানান জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এস এম আওয়াল হক।
তিনি বলেন, ‘খুলনায় ব্যক্তি পর্যায়ে বেশ কিছু হরিণ পালন হচ্ছে। এটি বন্যপ্রাণী হলেও আমরা নিয়মিত হরিণের স্বাস্থ্যসেবা এবং জন্ম ও মৃত্যু সনদ দিয়ে থাকি।
‘সুন্দরবনের চিত্রা হরিণ বিশ্বের একটি ঐতিহ্যবাহী প্রাণী। এটি বনের প্রাণী; এটাকে বনেই মানায়…তবে হরিণ পালন করলে পোষ মানে এবং পোষা প্রাণীর মতো আচরণ করে। তাই অনেকে এটি পালন করছে। আমাদের পরিবেশে হরিণের স্বাস্থ্য ঝুঁকি কম।’
খুলনার খামারে দেখা মেলে চিত্রা হরিণের। ছবি: নিউজবাংলা
খুলনার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা নির্মল কুমার পাল জানান, খুলনা বন ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা বিভাগের আওতায় এখন পর্যন্ত ৩৩টি হরিণ পালনের লাইসেন্স দেয়া হয়। তবে বিধি না মানায় এর মধ্যে ৪টির লাইসেন্স বাতিলও করা হয়েছে।
চিত্রা হরিণ পালনের বিধি কী?
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা নির্মল কুমার বলেন, ‘বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন ২০১২-এর অধীনে হরিণ ও হাতি লালন-পালন বিধিমালা ২০১৭ প্রণয়ন করা হয়েছে। এর আওতায় ব্যক্তি পর্যায়ে শৌখিনভাবে এবং খামার পর্যায়ে লালন-পালন করার সুযোগ হয়েছে।’
তিনি জানান, বিধিমালায় বলা আছে, হরিণ পালন ও খামার করার আগে বন অধিদপ্তরের লাইসেন্স নিতে হয়। বন বিভাগের লিখিত অনুমতি ছাড়া কেউ হরিণ কেনাবেচা ও লালন-পালন করতে পারবে না। এ ছাড়া হরিণ কেনার আগে উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। বন কর্মকর্তারা হরিণের আবাস পরিদর্শন করবেন। তারপর আগ্রহীকে সার্টিফিকেট দেয়া হবে। প্রতি বছর হরিণের লাইসেন্স নবায়ন করতে হবে এবং হরিণপ্রতি ১ হাজার টাকা সরকারি রাজস্ব ও ভ্যাট দিতে হবে।
নির্মল কুমার আরও জানান, ২০০৯ সালের চিত্রা হরিণ লালন-পালন সংক্রান্ত নীতিমালায় হরিণ প্রাপ্তবয়স্ক হলে তার মাংস খাওয়ার অনুমতি ছিল। কিন্তু ২০১৭ সালের নতুন বিধিমালায় তা বন্ধ করা হয়। এ ছাড়া যেসব বনে হরিণ পাওয়া যায় তার ৩০ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে কোনো খামার না করার বিধান রাখা হয়।
হরিণ রপ্তানির বিষয়ে নির্মল বলেন, এখন পর্যন্ত সেই সুযোগ সরকার দেয়নি। কারণ চিত্রা হরিণ সুন্দরবনের অন্যতম আকর্ষণ। এর সংরক্ষণ প্রয়োজন। তবে ব্যাপক আকারে খামার করে এর প্রজনন বাড়ানো গেলে রপ্তানির সুযোগ তৈরি হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।