করোনাভাইরাস আক্রান্তের অ্যান্টিবডি টেস্টের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। দেশে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার ১০ মাস পর এ ধরনের পরীক্ষার অনুমোদন দেয়া হলো।
সচিবালয়ে রোববার সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, ‘দেশে অনেকের দাবি ছিল অ্যান্টিবডি টেস্টের অনুমতি দেয়ার। এখন এটা চালু করার অনুমতি দিয়ে দিয়েছি। আজ আপনাদের যখন বললাম তখন থেকেই এটা চালু হয়ে গেল।’
তবে মন্ত্রী এ ঘোষণা দিলেও ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর এ ব্যাপারে এখনও কিছু জানে না। কোনো প্রতিষ্ঠান এখনও অ্যান্টিবডি টেস্ট কিট আমদানির অনুমতি নেয়নি। এমনকি এই কিট সরকারি নাকি বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় আনা হবে, এ বিষয়েও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের উপপরিচালক ও মুখপাত্র আইয়ুব হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হয়তো আজকালের মধ্যে আমরা এ বিষয়ে লিখিত কিছু পেতে পারি। মন্ত্রী মুখে বলেছেন, হয়তো প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমাদের জানাতে পারেন। তখন বিস্তারিত জানতে পারব।‘
অ্যান্টিজেন টেস্টের প্রসঙ্গে টেনে তিনি বলেন, অ্যান্টিজেন পরীক্ষা দেশের ১০টি উপজেলায় করা হচ্ছে সরকারি ব্যবস্থাপনায়। এই পরীক্ষায় ব্যবহৃত কিট সরকারিভাবে কানাডার একটি কোম্পানির মাধ্যমে আসছে। যদি সরকার চায় অ্যান্টিবডি টেস্ট সরকারি ব্যবস্থাপনায় করতে, সেটা সরকারের বিষয়।
অ্যান্টিবডি টেস্টের মাধ্যমে সরাসরি করোনাভাইরাস শনাক্ত করা যায় না। তবে যারা উপসর্গহীন আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাদের রোগ পরবর্তী সময়েও অ্যান্টিবডি যাচাইয়ের ভিত্তিতে শনাক্ত করা সম্ভব। শরীরে নির্দিষ্ট কোনো রোগের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে কি না- সেটি জানতে এ ক্ষেত্রে রক্তের নমুনা পরীক্ষা করা হয়।
বাংলাদেশে গত বছরের ৮ মার্চ প্রথম করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হওয়ার তথ্য জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এরপর থেকে আক্রান্ত শনাক্তে আরটি-পিসিআর টেস্টের ওপরেই নির্ভর করছিল সরকার। তবে পরীক্ষার হার বাড়াতে ১৭ সেপ্টেম্বর যুক্ত হয় অ্যান্টিজেন টেস্ট।
দেশে করোনা মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় পরামর্শক কমিটি গত ৩ জুন এক সভায় র্যাপিড টেস্টের জন্য সুপারিশ করে। কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনা সংক্রমণের বর্তমান অবস্থা জানতে অ্যান্টিবডি টেস্ট চালু করা দরকার। এর মাধ্যমে সংক্রমণের পরিষ্কার চিত্র পাওয়া যাবে। সংক্রমণ বুঝতে হলে অ্যান্টিবডি টেস্ট শুরু করা জরুরি।’
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য নজরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনাভাইরাস উপসর্গহীনভাবে অনেকের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। উপসর্গহীন আক্রান্তদের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে কি না- তা এই টেস্ট ছাড়া বলা যায় না। এজন্য অ্যান্টিবডি টেস্ট খুব জরুরি।’
বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের কিছুদিনের মধ্যেই অ্যান্টিবডি ও অ্যান্টিজেন কিট উদ্ভাবনের ঘোষণা দিয়েছিল গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যালস। তবে পরে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে এই দুটি কিটের প্রত্যাশিত কার্যকারিতা না পাওয়ার কথা জানায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
গণস্বাস্থ্যের র্যাপিড টেস্টিং কিট তৈরির প্রসঙ্গে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মুখপাত্র বলেন, ‘মানোত্তীর্ণ’ না হওয়ার কারণে তাদের অনুমতি দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে অনেক বিতর্কও হয়।