ঢাকায় বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেলসহ খালের জায়গা দখল করে গড়ে ওঠা বিভিন্ন অবকাঠামো উচ্ছেদের ঘোষণা দিয়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেছেন, নাগরিক সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে বিঘ্ন আসে, এমন কোনো কিছুর সঙ্গেই আপস করা হবে না।
রোববার সচিবালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মেলন কক্ষে ঢাকা মহানগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে বৃষ্টির পানি নিষ্কাষণ এবং প্রাকৃতিক খালসমূহের রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার বিষয়ে সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের লক্ষ্যে একটি সভা হয়।
সভায় দুই সিটির মেয়র, স্থানীয় সরকার বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব, ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানসহ মন্ত্রণালয় এবং সংস্থাগুলোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেন।
সভা শেষে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও ঢাকা জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে সিএস ও আর এস দাগ দেখে আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেলসহ নদী ও খালের জায়গা দখল করে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করা হবে। উচ্ছেদ অভিযানও চলবে সমন্বয়ের ভিত্তিতে। এ ক্ষেত্রে কোনো কমপ্রোমাইজ (আপস) করা হবে না।’
পুরান ঢাকার সোয়ারীঘাটের কিছুটা পশ্চিমে চাঁদনীঘাট এলাকায় দুই ভাগে ভাগ হয়ে যাওয়া বুড়িগঙ্গার উত্তর দিকের শাখাটি আদি চ্যানেল হিসেবে পরিচিত। আর দক্ষিণের শাখাটি এখনকার মূল বুড়িগঙ্গা। এ দুই ধারার মাঝেই অবস্থিত কামরাঙ্গীরচর।
বর্তমানে এই এলাকার অল্প কিছু প্রবহমান অংশ ছাড়া আদি চ্যানেলের অধিকাংশ জায়গায় গড়ে উঠেছে নানা অবৈধ স্থাপনা।
দুই দশক আগেও চ্যানেলটি হাজারীবাগ, রায়েরবাজার ও মোহাম্মদপুরের পাশ দিয়ে আবার বুড়িগঙ্গার সঙ্গে সংযুক্ত ছিল।
২০১৬ সালে পরিবেশ অধিদপ্তরের তৈরি করা এক তালিকায় এই চ্যানেল দখলকারী ছোট-বড় ৫২টি প্রতিষ্ঠানের নাম উঠে আসে।
গণপূর্ত মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য সংস্থার অধীনে থাকা খাল ও জলাশয়গুলোও সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তরের বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করা হবে বলে জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, জনপ্রতিনিধিত্বমূলক প্রতিষ্ঠান বেশি দায়িত্বশীল হবে বলেই ওয়াসা থেকে খালের দায়িত্ব দুই সিটি করপোরেশনকে দেয়া হয়েছে। অন্য সংস্থার অধীনে থাকা খালের দায়িত্বও দুই সিটি করপোরেশনকে দেয়ার বিষয়ে সভায় আলোচনা হয়েছে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মেলন কক্ষে আলোচনায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম
সভায় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে সম্প্রতি ওয়াসার কাছ থেকে বুঝে নেয়া খালগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী ও স্বল্পমেয়াদী কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরে। এছাড়া দক্ষিণ সিটি করপোরেশন খালগুলো নিয়ে চলতি বছর থেকে শুরু করে ২০২৪ সাল পর্যন্ত নেয়া বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা জানায়।
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, দুই সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে যেসব মতামত, কর্মপরিকল্পনা ও প্রকল্পের কথা বলা হয়েছে। তার বাইরেও কিছু প্রকল্প ও কর্মপরিকল্পনা নিতে হবে।
এই কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের ক্ষেত্রেও সমন্বয়ের তাগিদ দেন মন্ত্রী।
সভায় দুই সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে খাল পরিষ্কারের জন্য ওয়াসার কাছ থেকে পাওয়া যন্ত্রপাতির বাইরে কিছু নতুন যন্ত্র কেনার বিষয়ে মন্ত্রীকে অবহিত করা হলে তিনি তাতে সায় দেন।