বাঁশের সাঁকোটি শুকিয়ে গেছে। পারাপারের সময় থরথর করে কাঁপতে থাকে। হুড়মুড় করে ভেঙে পড়তে পারে যেকোনো সময়।
এমন বেহাল দশা সাঁকোটি কপোতাক্ষ নদের সাতক্ষীরা তালার ঘোষনগর অংশে। সাঁকোর এক পাড়ে ঘোষনগর আরেক পাড়ে খুলনার কপিলমুনি।
স্থানীয়রা জানান, এ ঘাটে নৌকা পারাপারের কথা থাকলেও ঘাটের ইজারাদারা বাঁশের সাঁকো তৈরি করে টোল আদায় করে। সাঁকো পারাপারে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটলেও তা কর্তৃপক্ষের নজরদারির বাইরে।
তালা উপজেলার রথখোলা গ্রামের কুদ্দুস শেখ বলেন, ‘সাঁকো দিয়ে আমরা যখন পার হই, দুই টাকাও নেয়, পাঁচ টাকাও নেয়। আসতি-যাতি দশ টাকা খরচা হয়। এমনও হয়, দিনে ম্যালা বার যাতি-আসতি হয়। ব্রিজ না হলি আমাগের এইরাম কষ্ট হতিই থাকপে।’
ঘোষনগর গ্রামের সোহরাব মোড়ল বলেন, ‘আমি দুধের ব্যাপসা করি। প্রতিদিন দুধ নে ঘাট পার হওয়া লাগে। মাঝে-মদ্দি বাঁশের দোলায় দুধ পড়ি যায়। তাতে আমার খুব নোকসান হয়ে যায়।’
কানাইদিয়া গ্রামের উত্তম হালদার বলেন, ‘টোল বেশি নিলিও আমরা সেই মতো সেবা পাইনে। ঝুঁকি নে পার হতি হয়। যারা টাকা নেয়, তারা তো শক্ত করে বান্দে দিতি পারে। তা না দে শুধু টাকাই নেচ্ছে।’
খলিলনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ম অরুণ কান্তি রায় বলে, ‘আমরা স্কুল ছাত্র হলিও টোল থেকে রেহাই পাইনা। প্রতিদিন বেশ টাকা খরচ হয়। একটা ব্রিজ হলি এরাম সমস্যা থেকে আমরা বাছতাম।
এ সব বিষয়ে ঘাটের ইজারাদার আবদুল মালেক জানান, উপজেলা প্রশাসনের কাছ থেকে ঘাটটি ইজারা নিয়ে তারা বৈধভাবে টোল আদায় করছেন। সাঁকোর যেসব জায়গা ভাঙা সেসব জায়গা খুব দ্রুত ঠিক করে দেয়া হবে বলে জানান তিনি।
তালা উপজেলার জালালপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এম মফিদুল হক লিটু জানান, তালার উপজেলার জালালপুর ও পাইকগাছা তালা এলাকার হাজার হাজার মানুষের নদী পারের বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে এ সাঁকো দিয়ে পার হয়।
তিনি আরও জানান, সাঁকোর খন্ড খন্ড চরাটগুলির কোনোটাই নিরাপদ নয়। কোনো গার্ডার না থাকায় শীতের সন্ধ্যা নামতেই কুয়াশার কারণে সাঁকোর পাটাতনগুলো পিচ্ছিল হয়ে যায়। এমন অবস্থায় সাঁকো পারাপারে মানুষের অসুবিধার শেষ নেই।
লিটু বলেন, ‘ঘোষনগর কপোতাক্ষ নদের এ ব্রিজটি নির্মাণের দায়িত্ব সাতক্ষীরা এলজিইডি কর্তৃপক্ষের। তারা যা করবে তাই হবে।’
তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. তারিফ-উল-হাসান বলেন, আমি অতি সম্প্রতি যোগদান করেছি। বিষয়টি আমার জানা ছিল না। তবে জনস্বার্থে বিষয়টি খতিয়ে দেখে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী নারায়ণ চন্দ্র সরকার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তালা উপজেলার ঘোষনগর ব্রিজ নির্মাণের ডিজাইন স্টেজে রয়েছে। একনেকে বিষয়টি উপস্থাপনের পর সিদ্ধান্ত জানানো হবে।’