বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

গৃহকর্মীর নির্যাতন: সেই বৃদ্ধা সংকটাপন্ন

  •    
  • ২৩ জানুয়ারি, ২০২১ ১০:৫২

‘আমি চেয়েছিলাম আরও ভালো কোনো হাসপাতালে নেই। কিন্তু হাসপাতালের লোক বলে, মায়ের মাথায় আঘাত, সারা শরীরে ব্যথা তাই তাকে অন্য কোথাও নিতে গেলে বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’

গৃহকর্মীর নির্মম পিটুনির শিকার বৃদ্ধার মাথা ফেটে যাওয়ায় চার জায়গায় সেলাই করতে হয়েছে। চার দিন পরেও সারা গায়ে তীব্র ব্যাথা। নড়াচড়া করতে পারছেন না তিনি।

গত ১৮ জানুয়ারি এই নির্মমতার শিকার হওয়ার পর তাকে রাজধানীর হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখনও সেখানেই আছেন তিনি।

মেয়ে মেহবুবা জাহান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখন তাকে দুইজনে মিলে ধরে উঠানো লাগে। দাঁড়াতে পারেন না কোমর ব্যথার কারণে।

‘সারা শরীরে পিটাইছে। এই কারণে আমার মায়ের সারা শরীর ফুলে গেছে। হাতে ও মাথার কিছু অংশ ফেটে গেছিল। মাথায় চারটা সেলাই লাগছে।’

মেহবুবা বলেন, ‘ঘটনা শোনার পরে ওই দিনই আমি বিকালের ফ্লাইট ধরে ঢাকায় এসে পৌঁছাই। পৌঁছে আমি ইস্কাটনের হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে যাই। গিয়ে দেখি আমার মা হাসপাতালের আইসিউতে ভর্তি। তখন ডাক্তার আমায় মায়ের সঙ্গে দেখা করতে দেন নাই।’

তিনি বলেন, ‘আমি চেয়েছিলাম আরও ভালো কোনো হাসপাতালে নেই। কিন্তু হাসপাতালের লোক বলে, মায়ের মাথায় আঘাত, সারা শরীরে ব্যথা তাই তাকে অন্য কোথাও নিতে গেলে বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’

৭৫ বছর বয়সী বৃদ্ধার আগে থেকেই কিডনি ও ডায়বেটিসের সমস্যা ছিল। বয়স ৭৫ এর মতো। এরপর এই নির্যাতনের ধকল তিনি সহ্য করতে পারবেন কি না, এ নিয়ে চিন্তিত মেয়ে মেহবুবা।

গ্রেপ্তার গৃহকর্মী রেখা আকতার।

গত ১৭ জানুয়ারি রাতে রাজধানীর মালিবাগের নিজ বাসায় তার বড় বোন, বৃদ্ধ মা ও গৃহকর্মী রেখা আকতারকে রেখে ব্যক্তিগত কাজে বরিশাল যান মেহবুবা জাহান।

পরদিন সকালে বড় বোন ব্যাংকের কাজে বাসার বাইরে যান। এই সুযোগে গৃহকর্মী রেখা আকতার ভুক্তভোগীকে একা পেয়ে তাকে লোহার রড দিয়ে বেদম মারপিট করে গুরুতর আহত করেন।

এরপর রেখা বাসা থেকে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার, টেলিভিশনসহ আনুমানিক ২১ লাখ টাকার মালামাল চুরি করে পালিয়ে যান। যাওয়ার সময় ভুক্তভোগীকে ঘরের মধ্যে তালাবদ্ধ করে যান।

সিসিটিভি ক্যামেরায় ধারণ করা ফুটেজে দেখা যায়, বৃদ্ধা নারীকে রেখা সেবা করছেন। এক পর্যায় তাকে গোসল করাতে কাপড় খুলে বাথরুমে নেয়া হয়।

তীব্র শীতের মধ্যে তার গায়ে ঢালা হয় ঠান্ডা পানি। তখন আলমারির চাবির জন্য তাকে চাপ দেয়া হয়।

বৃদ্ধা চাবি দিতে রাজি না হলে তাকে পেটাতে পেটাতে বাথরুম থেকে টেনে আনা হয়।

বৃদ্ধাকে ভেজা শরীরে মেঝেতে ফেলে তার ওপরে উঠে গলা টিপে ধরেন। তাতেও কাজ না হলে তার হাঁটার লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকেন।

বৃদ্ধা ব্যথায় চিৎকার করতে থাকলেও থামেননি রেখা। এক পর্যায়ে তার মাথায় ক্রমাগত বাড়ি দিতে থাকেন। এতে মাথা ফেটে রক্ত বের হয়ে যায়।

তখন আর প্রতিরোধ করতে পারেননি বৃদ্ধা। আলমারির চাবি দিতে রাজি হন। কিন্তু চাবি নিলেও রেখা আলমারি খুলতে পারছিলেন না। পরে রক্তাক্ত বৃদ্ধাকে টেনে আলমারির কাছে নিয়ে যান রেখা।

নড়াচড়া করতে পারছিলেন না অবস্থাতেই বৃদ্ধা আলমারি খুলে দেন। আর রেখা স্বর্ণালঙ্কার, নগদ টাকা নিয়ে বৃদ্ধাকে রক্তাক্ত অবস্থায় রেখে চলে যান।

হাঁটাচলার জন্য বৃদ্ধা যে লাঠি ব্যবহার করতেন, তা দিয়েই তাকে পেটায় গৃহকর্মী রেখা।

টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে পাশের কক্ষে গিয়ে দেয়ালে ঝোলানো টেলিভিশন খুলে নিয়ে যান রেখা।

এই ঘটনায় রাজধানীর শাহজাহানপুর থানায় মেহবুবা মামলা করার পর মামলাটির তদন্তের বার দেয়া হয় উপপরিদর্শক রেজাউল করিমকে।

বৃহস্পতিবার সকালে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বড় পলাশবাড়ী গ্রামে মামার বাড়ি থেকে রেখাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এই পুলিশ কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওই মহিলাকে যেভাবে মেরেছে, আমার খুব খারাপ লেগেছে। নৈতিক দায়িত্ব থেকে চেষ্টা করেছি আসামিকে গ্রেপ্তার করতে। সেটা করতে পেরেছি বলে স্বস্তি পাচ্ছি।’

রেখাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আট দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ।

এ বিভাগের আরো খবর