বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বৃদ্ধা নির্যাতন: মেয়ের কাছে ক্ষমা চান সেই গৃহকর্মী

  •    
  • ২২ জানুয়ারি, ২০২১ ১৭:৩৭

রাজধানীর মালিবাগে বাসা ফাঁকা পেয়ে বৃদ্ধাকে বেদম মারপিট করে টাকা, স্বর্ণালঙ্কার, মোবাইল ফোন ও টেলিভিশন ছিনিয়ে নেয়ার মামলায় গ্রেপ্তার গৃহকর্মী রেখা আক্তারকে আট দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ। আদালতে তিনি বলেন, ‘আমি যে মালামাল নিছি তার সব তো দিয়া দিছি স্যার। আমার মাথা ঠিক না থাকার কারণে আমি মাইরপিট করছি।’

বাসা ফাঁকা পেয়ে বৃদ্ধাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুটের অভিযোগে গ্রেপ্তার গৃহকর্মী আদালতে বলেছেন, সে সময় তার মাথা ঠিক ছিল না। বৃদ্ধার মেয়েকে অনুরোধ করেছেন তাকে ক্ষমা করে দেয়ার।

রাজধানীর মালিবাগে একটি বাসায় এই ঘটনার পুরোটাই সিসিটিভি ক্যামেরায় রেকর্ড হয়ে আছে। ফলে গ্রেপ্তার রেখা আকতার কী কী করেছেন, তার চাক্ষুষ সাক্ষী না থাকলেও ভিডিও প্রমাণ রয়েছে।

গত ১৮ জানুয়ারি এই ঘটনার ধারণ করা ভিডিও গণমাধ্যমে প্রচারের তিন দিনের মধ্যে রেখা ধরা পড়েন।

সুচতুর রেখা গ্রেপ্তার এড়াতে তার মোবাইল ফোনের সিম পাল্টেছেন একাধিকবার। বারবার স্থান পরিবর্তন করেছেন। জ্ঞান হওয়ার পর যোগাযোগ না রাখা মামার বাড়িতে আত্মগোপন করেছেন।

তবে পার পাননি। ঢাকা থেকে পুলিশের একটি দল তাকে ট্র্যাক করে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসে বৃহস্পতিবার।

শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন রেখাকে আদালতে তোলে পুলিশ।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) রেজাউল করিমকে নিউজবাংলাকে বলেন, তারা রেখাকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করেছিলেন। বিচারক আট দিনের অনুমতি দিয়েছেন।

রেখা আদালতে কী বলেছেন- জানতে চাইলে তাকে গ্রেপ্তার করা পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “কোর্টে আজ তাকে বিচারক বলেছেন, তোমার কি কোনো বক্তব্য আছে? বল তো তোমার কী সমস্যা?’ উত্তরে সে বলে, স্যার আমার মাথা ঠিক ছিল না।”

রেখার লুট করা মোবাইল ফোন সেট, অর্থ, স্বর্ণালঙ্কার ও টেলিভিশন উদ্ধার করেছে পুলিশ।

এই গৃহকর্মী সেই বিষয়টি তুলে ধরে আদালতে বলেন, ‘আমি যে মালামাল নিছি তার সব তো দিয়া দিছি স্যার। আমার মাথা ঠিক না থাকার কারণে আমি মাইরপিট করছি।’

রেখাকে আদালতে তোলার খবর পেয়ে সেখানে যান বৃদ্ধার মেয়ে মেহবুবা জাহানও। তাকে দেখে রেখা বলেন তাকে যেন ক্ষমা করে দেয়া হয়।

নিউজবাংলাকে মেহবুবা বলেন, ‘রেখা এখন আমার কাছে মাফ চায়। বলে, আপা আমার ভুল হইছে। আমাকে মাফ করে দেন।’

হাঁটাচলার জন্য বৃদ্ধা যে লাঠি ব্যবহার করতেন, তা দিয়েই তাকে পেটানো হয়

রেখা পেশাদার অপরাধী কি না, এই বিষয়টি নিয়ে এখনও নিশ্চিত নন তদন্ত কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘সে আগে থেকে এই ধরনের কাজের সঙ্গে জড়িত কি না, এ বিষয়ে এখনো আমরা তথ্য পাই নাই। তার দেয়া তথ্যগুলো এলোমেলো।

‘এলোমেলো তথ্যের কারণে কোর্ট তাকে বেশি দিনের রিমান্ড দিয়েছে। রিমান্ড শেষে বিস্তারিত জানা যাবে।’

এস আই রেজাউল জানান, ‘আদালতের প্রক্রিয়া শেষে আমরা ভিকটিমের পরিবারকে মালামাল বুঝিয়ে দেবো।

যা ঘটেছিল

সিসিটিভি ক্যামেরায় ধারণ করা ফুটেজে দেখা যায়, বৃদ্ধা নারীকে রেখা সেবা করছেন। এক পর্যায় তাকে গোসল করাতে বাথরুমে নেয়া হয়।

তীব্র শীতের মধ্যে তার গায়ে ঢালা হয় ঠান্ডা পানি। তখন আলমারির চাবির জন্য তাকে চাপ দেয়া হয়।

বৃদ্ধা চাবি দিতে রাজি না হলে তাকে পেটাতে পেটাতে বাথরুম থেকে টেনে আনা হয়।

বৃদ্ধাকে ভেজা শরীরে মেঝেতে ফেলে তার ওপরে উঠে গলা টিপে ধরেন। তাতেও কাজ না হলে তার হাঁটার লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকেন।

বৃদ্ধা ব্যথায় চিৎকার করতে থাকলেও থামেননি রেখা। এক পর্যায়ে তার মাথায় ক্রমাগত বাড়ি দিতে থাকেন। এতে মাথা ফেটে রক্ত বের হয়ে যায়।

তখন আর প্রতিরোধ করতে পারেননি বৃদ্ধা। আলমারির চাবি দিতে রাজি হন। কিন্তু চাবি নিলেও রেখা আলমারি খুলতে পারছিলেন না। পরে রক্তাক্ত বৃদ্ধাকে টেনে আলমারির কাছে নিয়ে যান রেখা।

গৃহকর্মী রেখাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী থেকে। তিনি তার মামার বাড়িতে পালিয়েছিলেন

নড়াচড়া করতে পারছিলেন না অবস্থাতেই বৃদ্ধা আলমারি খুলে দেন। আর রেখা স্বর্ণালঙ্কার, নগদ টাকা নিয়ে বৃদ্ধাকে রক্তাক্ত অবস্থায় রেখে চলে যান।

টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে পাশের কক্ষে গিয়ে দেয়ালে ঝোলানো টেলিভিশন খুলে নিয়ে যান রেখা।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর মেয়ে মেহবুবা জাহান মামলা করেন।

তিনি নিউজবাংলাকে জানান, রেখা এক বছর ধরেই তাদের বাসায় খণ্ডকালীন চাকরি করতেন।

তিনি বলেন, তাদের বাসায় একজন স্থায়ী গৃহশ্রমিক আছেন। তিনি বাড়িতে যেয়ে আর ফেরত আসেননি। তখন রেখা বলেন, তিনি বাসায় থেকে কাজ করবেন।

‘আমার যেহেতু লোক লাগবে সেহেতু আমি তাকে আমার বাসায় রেখে দেই। আমার বড় বোন মহাখালী ডিওএইচএস থাকেন। আমি বরিশাল যাওয়ার সময় বড় বোনকে আর মাকে রেখে যাই।’

মেহবুবা জাহান জানান, রেখাকে চাকরি দেয়ার সময় তিনি নিরাপত্তার জন্য তার জন্ম নিবন্ধন সনদ রেখে দেন।

এ বিভাগের আরো খবর