নাটোরে কলেজছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দেড় লাখ টাকায় মীমাংসার অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি।
অভিযোগ উঠার পর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে গঠন করা হয় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি। রোববার প্রতিবেদন জমা দেবে তারা।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন নিপীড়ন ও সেই সঙ্গে মীমাংসাকারীদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
১৪ জানুয়ারি উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির জানুয়ারি মাসের ভার্চুয়াল সভায় নিপীড়ন ও মীমাংসাকারীদের কঠোর শাস্তির হুঁশিয়ার দেন তিনি।
প্রতিমন্ত্রী সেদিন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারী নির্যাতন দমনে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। তারপরও যৌন হয়রানি ও আপস-মীমাংসার মতো ঘটনা শুনে অবাক হতে হয়। এই নিন্দিত কাজের সঙ্গে যারা যারা জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।’
গত বছরের ডিসেম্বরের শেষে দ্বাদশ শ্রেণির এক কলেজছাত্রী তার ছোট বোনকে ভর্তি করাতে নাটোরের হাতিয়ান্দহ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে যান।
ভুক্তভোগী মেয়েটি জানান, তাকে দেখে অফিস সহকারী রেজাউল করিম বলেন, তিনি বেশ লম্বা এবং এ কারণে তার পুলিশে চাকরি হয়ে যাবে। এই কথা বলে তাকে ওজন মাপার জন্য পাশের কক্ষে নিয়ে গিয়ে হয়রানি করেন।
লেজছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে গ্রেপ্তার রেজাউল করিম। ছবি: নিউজবাংলা
মেয়েটির পরিবার কলেজের অধ্যক্ষ ইসমাইল হোসেনকে বিষয়টি জানায়। পরদিন কলেজের এক কক্ষে অধ্যক্ষ বিচার বসান। সেখানে রেজাউলকে চড়থাপ্পড় মেরে পা ধরে মাফ চাওয়ানো হয়। জরিমানা করা হয় দেড় লাখ টাকা।
মেয়েটি জানান, সালিশে উপস্থিত ছিলেন কলেজের সহকারী অধ্যাপক প্রবীর কুমার সাহা, শেরকোল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজাউল ইসলাম, স্কুল কমিটির সভাপতি ভেটু চৌধুরী, শিক্ষক আমিনুল ইসলাম, হাসান আলী ও চিকিৎসক মো. সামাদ।
অধ্যক্ষ ইসমাইল হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যৌন হয়রানির সত্যতা পেয়ে ম্যানেজিং কমিটির লোকজন ও সহকারী অধ্যাপক প্রবীর কুমার সাহাকে নিয়ে সমঝোতা করে দিয়েছেন।’
ভুক্তভোগী পরিবার বলছে, চাপের মুখে তারা মীমাংসা করতে বাধ্য হয়েছে।
পরে ঘটনাটি পুলিশ সুপার (এসপি) লিটন কুমার সাহা জানতে পারেন। তার নির্দেশে ৭ জানুয়ারি সন্দেহভাজন রেজাউলকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায় পুলিশ।
এর আগে ভুক্তভোগী ছাত্রী অভিযুক্ত রেজাউলকে আসামি করে একটি মামলা করেন। কিন্তু মামলায় আপস-মীমাংসার কথা উল্লেখ না থাকায় মীমাংসাকারীরা আইনের বাইরে থেকে যান।
আরও পড়ুন: যৌন নিপীড়ন: দেড় লাখে মীমাংসার চেষ্টা অধ্যক্ষের
তদন্ত কমিটির প্রধান জেলা শিক্ষা অফিসার রমজান আলী আকন্দ বলেন, ‘কলেজের অফিস সহকারী যৌন নিপীড়ন করে যতটুকু অপরাধী; যারা ঘটনাটি আপস মীমাংসা করেছিল তারাও সমান অপরাধী। তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পেয়েছি। কর্তৃপক্ষের কাছে অধ্যক্ষ ও শিক্ষকদের বহিষ্কারের সুপারিশসহ বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত করার সুপারিশ করা হবে।’
শিক্ষক নেতারাও দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবী জানিয়েছেন। নাটোর জেলা শাখার বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতি সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক জানান, পুরো ঘটনাটি অন্যন্ত ন্যাক্কারজনক। দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দিয়ে একটা উদাহরণ সৃষ্টি করতে হবে। যাতে যৌন নিপীড়নের মতো ভয়াবহ অপরাধ এবং তা ধামাচাপা দেবার মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।
রোববারে তদন্ত রিপোর্ট মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর মহাপরিচালক ঢাকা ও রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো হবে।