বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বৃদ্ধা নির্যাতন: সুচতুর গৃহকর্মী রেখা যেভাবে পাকড়াও

  •    
  • ২১ জানুয়ারি, ২০২১ ২৩:২৮

শাহজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শহিদুল হক জানান, রেখা বারবার তার মোবাইল সিম পাল্টেছেন। এভাবে নিজের পরিচয় লুকানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু প্রযুক্তির কারণে তার সেই সব চালাকি ধরা পড়ে যায়।

বৃদ্ধার সেবায় নিয়োজিত গৃহকর্মী। কিডনির রোগী। আছে বয়সজনিত আরও জটিলতা। এমন একজন মানুষকে বাসা ফাঁকা পেয়ে উন্মত্তের মতো মারধর করেছেন গৃহকর্মী। পরে আলমারি থেকে বের করে নিয়ে গেছেন অর্থ ও স্বর্ণালঙ্কার। পাশের কক্ষ থেকে টেলিভিশন।

সেই ভিডিও ধারণ হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরায়। আর তা প্রচার হয়েছে জাতীয় গণমাধ্যমে। ছি ছি পড়ে যায়। নির্যাতনকারীর প্রতি ঝরে পড়ে ঘৃণা।

ঘটনাটি গত ১৮ জানুয়ারির। ন্যাক্কারজনক ঘটনাটি ঘটে রাজধানীর মালিবাগের একটি বাসায়।

মামলার পর নড়েচড়ে বসে পুলিশ। চার দিনের মধ্যেই গ্রেপ্তার করা হয় সন্দেহভাজন রেখা আকতার ও তার স্বামী এরশাদ হোসেনকে।

রাজধানীতে ঘটনা ঘটিয়ে রেখা পালিয়ে যান ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বড় পলাশবাড়ী গ্রামে মামার বাড়িতে। সেখান থেকেই তাকে ধরে আনে পুলিশ।

রেখাকে ঢাকায় নিয়ে আসার পর তার স্বামী এরশাদকেও থানায় ডেকে আনা হয় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। পরে দেখানো হয় গ্রেপ্তার।

এই ঘটনায় মামলা হয় শাহজানপুর থানায়। তদন্তের ভার দেয়া হয় উপপরিদর্শক রেজাউল করিমকে।

এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘ওই মহিলাকে যেভাবে মেরেছে, আমার খুব খারাপ লেগেছে। নৈতিক দায়িত্ব থেকে চেষ্টা করেছি আসামিকে গ্রেপ্তার করতে। সেটা করতে পেরেছি বলে স্বস্তি পাচ্ছি।’

এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, বৃদ্ধারে মারধর করে টাকা, স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে রেখা যান যাত্রাবাড়ীতে তার ননদের কাছে।

তথ্য পেয়ে সেখানে হানা দেয় পুলিশ। কিন্তু তার আগেই সটকে পড়েন সন্দেহভাজন রেখা। চলে আসেন বাসাবো এলাকায়।

এখানে রেখার সতিনের বাসা। সেখানেও পুলিশ যাওয়ার আগে আবারও তিনি চলে যান বাড়ি ছেড়ে।

শাহজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শহিদুল হক জানান, রেখা বারবার তার মোবাইল সিম পাল্টেছেন। এভাবে নিজের পরিচয় লুকানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু প্রযুক্তির কারণে তার সেই সব চালাকি ধরা পড়ে যায়।

হাঁটাচলার জন্য বৃদ্ধা যে লাঠি ব্যবহার করতেন, তা দিয়েই তাকে পেটানো হয়

পুলিশ তদন্তে নেমে প্রথমেই রেখা ও তার স্বামীর পরিচয় জানার চেষ্টা করেছে। রেখা যখন বারবার তার অবস্থান পাল্টাচ্ছিলেন, তখন স্বামীর কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার চেষ্টা করে পুলিশ।

রেখা ওই বাড়ি থেকে যা যা লুট করেছিলেন, তার মধ্যে মোবাইল ফোন দিয়েছিলেন এরশাদকে। আরও দেন কানের দুল।

এরশাদ বলেন, তাকে গ্রেপ্তার না করলে তিনি রেখার অবস্থান জানাবেন। পুলিশ রাজি হলে তিনি জানান তার স্ত্রীর অবস্থান।

এস আই রেজাউল জানান, ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বড় পলাশবাড়ী গ্রামে রেখার মামার বাড়ি। কিন্তু সেখানে জ্ঞান হওয়ার পর তিনি কখনও জাননি।

এসআই রেজাউল জানান, মামার বাড়ি গিয়ে রেখা বলেন, তিনি তার স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া করে এসেছেন। তার সঙ্গে থাকা টাকা পয়সা ও স্বর্ণালঙ্কারের বিষয়ে কিছুই বলেননি। সেগুলো একটি পুটলিতে করে বুকের মধ্যে লুকিয়ে রাখতেন।

রেখাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকায় নিয়ে আসার পর তার ননদের যাত্রাবাড়ীর বাসা থেকে উদ্ধার করা হয় লুট করে নেয়া টেলিভিশনটি।

এস আই রেজাউল জানান, রেখার স্বামীর নির্দিষ্ট কোনো পেশা নেই। তিনি নেশাখোর।

রেখা গৃহকর্মী পরিচয়ের আড়ালে পেশাদার অপরাধী কি না, এমন প্রশ্নে পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘এটা এখনও জানা যায়নি। এটা তদন্ত করে দেখতে হবে।’

ওসি শহিদুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মামলার অভিযোগকারী গত ১৭ জানুয়ারি রাজধানীর মালিবাগের নিজ বাসায় তার বড় বোন, বৃদ্ধ মা ও গৃহকর্মী রেখা আকতারকে রেখে ব্যক্তিগত কাজে বরিশাল যান।

‘বড় বোন ১৮ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৯টায় ব্যাংকের কাজে বাসার বাইরে যান। এই সুযোগে গৃহকর্মী রেখা আকতার ভুক্তভোগীকে একা পেয়ে তাকে লোহার রড দিয়ে বেদম মারপিট করে গুরুতর আহত করেন।’

বৃদ্ধাকে পেটানো হয় মেঝেতে ফেলে, পেটানো হয় বিছানাতে

এরপর রেখা বাসা থেকে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার, টেলিভিশনসহ আনুমানিক ২১ লাখ টাকার মালামাল চুরি করে পালিয়ে যান। যাওয়ার সময় ভুক্তভোগীকে ঘরের মধ্যে তালাবদ্ধ করে যান।

সিসিটিভি ক্যামেরায় ধারণ করা ফুটেজে দেখা যায়, বৃদ্ধা নারীকে রেখা সেবা করছেন। এক পর্যায় তাকে গোসল করাতে কাপড় খুলে বাথরুমে নেয়া হয়।

তীব্র শীতের মধ্যে তার গায়ে ঢালা হয় ঠান্ডা পানি। তখন আলমারির চাবির জন্য তাকে চাপ দেয়া হয়।

বৃদ্ধা চাবি দিতে রাজি না হলে তাকে পেটাতে পেটাতে বাথরুম থেকে টেনে আনা হয়।

বৃদ্ধাকে ভেজা শরীরে মেঝেতে ফেলে তার ওপরে উঠে গলা টিপে ধরেন। তাতেও কাজ না হলে তার হাঁটার লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকেন।

বৃদ্ধা ব্যথায় চিৎকার করতে থাকলেও থামেননি রেখা। এক পর্যায়ে তার মাথায় ক্রমাগত বাড়ি দিতে থাকেন। এতে মাথা ফেটে রক্ত বের হয়ে যায়।

তখন আর প্রতিরোধ করতে পারেননি বৃদ্ধা। আলমারির চাবি দিতে রাজি হন। কিন্তু চাবি নিলেও রেখা আলমারি খুলতে পারছিলেন না। পরে রক্তাক্ত বৃদ্ধাকে টেনে আলমারির কাছে নিয়ে যান রেখা।

নড়াচড়া করতে পারছিলেন না অবস্থাতেই বৃদ্ধা আলমারি খুলে দেন। আর রেখা স্বর্ণালঙ্কার, নগদ টাকা নিয়ে বৃদ্ধাকে রক্তাক্ত অবস্থায় রেখে চলে যান।

টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে পাশের কক্ষে গিয়ে দেয়ালে ঝোলানো টেলিভিশন খুলে নিয়ে যান রেখা।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর মেয়ে মেহবুবা জাহান মামলা করেন।

তিনি নিউজবাংলাকে জানান, রেখা এক বছর ধরেই তাদের বাসায় খণ্ডকালীন চাকরি করতেন।

তিনি বলেন, তাদের বাসায় একজন স্থায়ী গৃহশ্রমিক আছেন। তিনি বাড়িতে যেয়ে আর ফেরত আসেননি। তখন রেখা বলেন, তিনি বাসায় থেকে কাজ করবেন।

গৃহকর্মী রেখাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী থেকে। তিনি তার মামার বাড়িতে পালিয়েছিলেন

‘আমার যেহেতু লোক লাগবে সেহেতু আমি তাকে আমার বাসায় রেখে দেই। আমার বড় বোন মহাখালী ডিউএইসএস থাকেন। আমি বরিশাল যাওয়ার সময় বড় বোনকে আর মাকে রেখে বরিশাল যাই।’

মেহবুবা জাহান জানান, রেখাকে চাকরি দেয়ার সময় তিনি নিরাপত্তার জন্য তার জন্ম নিবন্ধন সনদ রেখে দেন।

তিনি জানান, স্বামীর মতো রেখাও আগে একটি বিয়ে করেছিলেন। তার আগের পক্ষের একটা মেয়ে আছে। মেয়েটার বয়স এখন চার বছর।

মেহবুবা জাহান জানান, সেই মেয়েকে রেখা তার কাছে নিয়ে আসেন দত্তক দেয়ার জন্য। তিনি দত্তকের ব্যবস্থা করে দেন। তবে রেখা পরে দত্তক না দিয়ে ১৪ হাজার টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দেন।

যা বলছেন রেখার মামা মামি

রেখাকে গ্রেপ্তারের পর তার মামি আসমা খাতুন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সোমবার সকালে আসছে রেখা। আমি চুলার পাড়ে আছি। এসে বলে আমাক চিনেন নাই? আমি বলি, তোমাক তো বোরকা পড়া আছো, কীভাবে চিনব?’

পরে রেখা পরিচয় দেন। আর মামি তাকে ভাত খেতে দেন।

রেখার মামা কফিল উদ্দিন বলেন, ‘আমার বোনটা মারা যাওয়ার পরে তারা জায়গা-জমি বিক্রি করে তারা ঢাকায় চলে গেছে। ঢাকা যাওয়ার পর আমার সাথে যোগাযোগ নাই। হঠাৎ ভাগ্নিটা আসছে। এসে বলে মামা কয়েকটা দিন আমি তোমার বাসায় থাকব। আমি বলছি থাকো। এখন এইযে ঘটনাটা ঘটাইছে এই কিছুই আমি জানি না।’

এ বিভাগের আরো খবর