করোনার কারণে নিজেকে বড় কারাগারের বন্দি মনে হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানমালা উদ্বোধন করার সময় একথা জানিয়ে তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব তার পায়ে শৃঙ্খল বেঁধে দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে করোনাভাইরাসের জন্য বিশ্ব স্থবির। আমিও ঘরে বন্দি। মাঝে মাঝে মনে হয়, ২০০৭ সালে যখন গ্রেপ্তার হয়েছিলাম তখন একটা ছোট কারাগারে ছিলাম। এখন মনে হচ্ছে একটা বড় কারাগারে আছি।
‘আর যে কারণে আজকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদযাপন হচ্ছে কিন্তু সরাসরি উপস্থিত থাকতে পারলাম না। এটা সত্যিই আমার জন্য খুব কষ্টের, দুঃখের। মনটা পড়ে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ে, এটা ঠিক। কিন্তু উপায় নেই। রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব, যেটা আমি বলবো, আমার পায়ে শৃঙ্খল বেঁধে দিয়েছে, এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।’
করোনার টিকা দেশে আশায় শিগগিরই এ অবস্থা থেকে মুক্তি মিলবে বলেও মনে করছেন সরকারপ্রধান।
করোনার টিকা উপহার পাঠানোয় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদও জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আশা করি, এ অবস্থা থাকবে না। ইতিমধ্যে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন, যেটা আমরা পেয়েছি ভারত থেকে উপহার স্বরূপ, সেটা এসে পৌঁছে গেছে। এ জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে আমি ধন্যবাদ জানাই।
‘আর আমরা যেটা টাকা দিয়ে কিনেছি, সেটা ২৫ বা ২৬ তারিখ এসে পৌঁছাবে। এই ভ্যাকসিন কীভাবে দেয়া হবে সব বিষয়ে পরিকল্পনা আমরা নিয়ে রেখে দিয়েছি। অর্থাৎ এ করোনা মোকাবেলায় সব ধরনের পদক্ষেপই আমরা নিচ্ছি। এ অবস্থা থেকে আমরা মুক্তি পাব এটাই আমরা আশা করি।’
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কেন্দ্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে অনুসরণ করেই দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেবে বলে আশা করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সকল অর্জনের বাতিঘর যেটা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। তার সে আলো ছড়িয়ে পড়বে সারা দেশে।
‘শিক্ষার উন্নয়নে আমরা কারিগরি এবং ভোকেশনাল শিক্ষাকে যেমন গুরুত্ব দিয়েছি। তেমনি ভাবে প্রত্যেক জেলায় বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়ও করে দিচ্ছি। শিক্ষাকে আমরা বহুমুখী করে দিচ্ছি। আমি চাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সব সময় একটা অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। এটাই আমাদের লক্ষ্য।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে শুধু একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখলে হবে না। এটা একটা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের, যেটা আমাদের প্রতিটি অর্জনের পথ দেখিয়েছে।
‘আগামী দিনের পথ চলায়, বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য আমাদের যে দক্ষ মানব শক্তি দরকার এ মানবশক্তি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ই গড়তে পারে, যা অনুসরণ করে সমগ্র বাংলাদেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ও চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে তাল মিলিয়ে চলতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হবে তার কেন্দ্রবিন্দু।’
বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের দক্ষতা আছে
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অন্তত এটুকু দাবি করতে পারি, আমরা সরকার গঠন করার পর থেকে আমাদের প্রচেষ্টায় প্রতি রাতে অস্ত্রের ঝনঝনানীও শোনা যায় না। গোলাগুলিও শোনা যায় না, বোমাবাজিও শোনা যায় না।
‘অবশ্য বলা যায় না, আজকেই কথা বললাম, হয়তো আজকেই কেউ টাস করে একটা ফোটাতে পারে। এটা অবশ্য আমাদের দেশে হয়ে থাকে। ওটা কিছু না, এগুলো নিয়ন্ত্রণ করার মতো দক্ষতা যথেষ্ট আছে। এখন তো মানুষের মাঝে সচেতনতা আছে। এটাই বড় কথা যে একটা শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা, যেটা আমরা আনতে পেরেছি।’
মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনই লক্ষ্য
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে জাতির জন্য সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন সে জাতির ভাগ্য পরিবর্তনই নিজের লক্ষ্য বলে জানান তার কন্যা শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনই আমার একমাত্র লক্ষ্য। স্বজনের শোক বুকে নিয়েও আমার একটাই শক্তি, বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ শেষ করা।
‘আর এর জন্য যে কোনো বাধা অতিক্রম করতে আমি স্বচেষ্ট। আমার বিশ্বাস, এটা মানুষও উপলব্ধি করতে পারে। এক যুগ ক্ষমতায় থাকার কারণেই আজ বাজেটের ৯৮ ভাগ নিজেদের অর্থায়নেই আমরা করতে পারছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা সময় ছিল যখন অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হতো। জানি না এ সাহস কোথা থেকে এসেছে। সাহস পেয়েছি বাবার কাছে। সব সময় বাবার আদর্শে চলেছি, তাই মনের মধ্যে কোনো ভয় বা দ্বিধা নেই।
‘মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি, একটা সিদ্ধান্ত নিলে সেটা বাস্তবায়ন করা যায়। বাঙালি বীরের জাতি। বীরের জাতি মাথা উঁচু করে চলতে হবে। বিজয়ী জাতি কারো কাছে হাত পেতে চলতে পারে না। আমরা ভিক্ষুক জাতি হয়ে থাকতে চাই না। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, আর যেন পিছিয়ে পড়তে না হয়।’
দেশের জন্য নিজের ভবিষ্যত পরিকল্পনা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনা আমাদের জন্য অনেক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে এসেছে। কিন্তু এর সব অতিক্রম করতে হবে।
‘আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হবো। এরপরও ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি কাঠামো রেখে যাচ্ছি। ২০৭১ সালে যেদিন দেশের শতবর্ষ উদযাপন হবে সেদিন বেঁচে থাকব না। কিন্তু যারা থাকবে তারা যেন উন্নত দেশে সে দিনটা উদযাপন করতে পারে এটাই আমার ইচ্ছা।’
তিনি বলেন, ‘একটা জাতির সামনে এগিয়ে যেতে একটা দর্শন থাকা দরকার। দিকহারা নাবিক পথ হারায়। দর্শন ঠিক থাকলে লক্ষ্যে পৌঁছানো যায়।
‘আমাদের দেশের মর্যাদা আমাদেরই ধরে রাখতে হবে। আমাদের সব অর্জন এসেছে রক্তের অক্ষরে। এর অমর্যাদা হতে পারে না। আমরা বিজয়ী হয়েই পথ চলব।’