সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশে চলে যাওয়ার অভিযোগ উঠা ব্যাংকার পি কে হালদারের সহযোগী সুকুমার মৃধা ও অনিন্দিতা মৃধাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ডে পেয়েছে দুদক।
বৃহস্পতিবার দুপুরে গ্রেপ্তারের পর বিকাল চারটার দিকে ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতের এজলাসে হাজির করা হয় দুই জনকে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদক উপপরিচালক মো. আলাউদ্দিন বাবা-মেয়েকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক তা গ্রহণ করেন।
দুদকের আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর সাংবাদিকদের জানান, দুই আসামি দুইটি লিজিং কোম্পানি থেকে প্রতারণা করে ১০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন। আরও তথ্যের জন্য তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা আবশ্যক।
রিমান্ড আবেদন বলা হয়, পি কে হালদারের সঙ্গে যোগসাজসে দুই আসামি বেনামে দেশে বিদেশে সম্পদ অর্জন করেছেন।
পি কে বর্তমানে কানাডায় অবস্থান করছেন। এই দুই আসামিও বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন বলে জানিয়েছে দুদক।
এর আগে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে দুই জনকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে অনুসন্ধান কর্মকর্তা কমিশনের উপ-পরিচালক মো. সালাউদ্দিন তাদের গ্রেপ্তার দেখান।
দুদকের তদন্তে দেখা যায়, পি কে হালদার ভুয়া ঋণ দেখিয়ে প্রায় ১০০ কোটি টাকা তার মা লিলাবতী হালদারের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে রাখেন।
পরে লিলাবতী হালদারের ব্যাংক হিসাব থেকে সুকুমার মৃধা, অবন্তিকা বড়াল ও অনিন্দিতা মৃধার মাধ্যমে আবার পি কে হালদারের হিসাবে স্থানান্তর করা হয়।
সুকুমার মৃধার প্রায় ২০ কোটি টাকার সম্পদ এবং তার মেয়ে অনিন্দিতার প্রায় দেড় কোটি টাকার সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে জানিয়ে দুদক সচিব আনোয়ার হোসেন বলেন, এসব আসলে পি কে হালদারের অবৈধ উপায়ে অর্জিত সম্পদ।
অনিয়মের মাধ্যমে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আছে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে। তিনি কানাডায় অবস্থান করছেন। সম্প্রতি দেশে ফিরতে চেয়েছিলেন টাকা উদ্ধারের কথা জানিয়ে। এ জন্য উচ্চ আদালতে আবেদন করেন, যেন দেশে এলে তাকে গ্রেপ্তার করা না হয়।
তবে উচ্চ আদালত হালদারকে দেশে আসার অনুমতি দিয়ে তাকে বিমানবন্দরেই গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেয়। এরপর তিনি আর ফেরেননি। আর তাকে ধরে আনতে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের কাছে সাহায্য চেয়েছে দুদক। আর ইন্টারপোল তার বিষয়ে জারি করেছে রেড অ্যালান্ট।
অভিযোগ আছে, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে বিভিন্ন কৌশলে দেড় হাজার কোটি এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে আরও দুই হাজার কোটি টাকা বের করে বিদেশে পাচার করেছেন পি কে হালদার।
দুদকের করা মামলায় বলা হয়েছে, রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক থাকা অবস্থায় আত্মীয়-স্বজনকে দিয়ে ৩৯টি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন পি কে হালদার। এসব প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হিসেবে থাকা ৮৩ জনের ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে কৌশলে তিনি ও তার সহযোগীরা অর্থ আত্মসাৎ করেন।
আলোচিত এই ব্যাংকারের একাধিক সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে দুদক। তাদের এক হাজার ৫৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা ফ্রিজ করা হয়েছে।