ঢাকা থেকে জাপানের নারিতা হয়ে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল এবং কানাডার টরন্টো হয়ে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর সঙ্গে আকাশপথে যুক্ত হতে চায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।
এ জন্য জাপান এয়ার এবং এয়ার কানাডার সঙ্গে চুক্তিও করেছে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠানটি।
এর ফলে বিমানের ফ্লাইটে টিকিট কেটে ঢাকা থেকে যাওয়া যাবে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কসহ যে কোনো গন্তব্যে।
বিমান বলছে, কোভিড পরিস্থিতির উন্নতি হলেই শুরু হবে ফ্লাইট। অবশ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিমানের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা কঠিন হবে।
এভিয়েশনের পরিভাষায় এয়ারলাইন্সগুলোর এ ধরনের জোটকে বলা হয় কোড শেয়ার। দুটি এয়ারলাইন্সের মধ্যে এ ধরনের চুক্তি থাকলে একজন যাত্রী কোনো একটি এয়ারলাইন্সের টিকেট কেটেই অন্য এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে নির্দিষ্ট গন্তব্যে যেতে পারেন।
বিশ্বের বিভিন্ন এয়ারলাইন্স এ ধরনের চুক্তির ভিত্তিতে ফ্লাইট পরিচালনা করলেও বাংলাদেশ এই প্রথম এ ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে।
বিমানের শীতকালীন ও আসন্ন গ্রীষ্মকালীন সূচিও সাজানো হয়েছে এ পরিকল্পনাকে ভিত্তি করে। সম্ভাব্য যাত্রী হিসেবে ধরা হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীদের।
বর্তমানে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গন্তব্যে পয়েন্ট টু পয়েন্ট সেবা দিয়ে থাকে বিমান। এক সময় অস্ট্রেলিয়ার সিডনি ও যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ফ্লাইট চলাচল করলেও এখন সেগুলো বন্ধ।
বিমানের বহরে লম্বা দূরত্বে উড়তে সক্ষম অন্তত ১০টি উড়োজাহাজ থাকলেও রুট না থাকায় দীর্ঘদিন ধরেই সেগুলোর সক্ষমতার পুরোটা ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ছয়টি বোয়িং সেভেন এইট সেভেন ও চারটি বোয়িং ট্রিপল সেভেন মডেলের উড়োজাহাজ। এর প্রত্যেকটি টানা ১৬ ঘণ্টা উড়তে সক্ষম।
লম্বা দূরুত্বের মধ্যে বর্তমানে ফ্লাইট চালু রয়েছে শুধু লন্ডন রুটে। এ রুটে সরাসরি যেতে সময় লাগে প্রায় ১১ ঘণ্টা।
ঢাকা থেকে সরাসরি আকাশপথে নারিতা যেতে সময় লাগে প্রায় সাড়ে ৮ ঘণ্টা। আর সরাসরি টরন্টো যেতে সময় লাগে প্রায় ১৪ ঘণ্টা। নতুন এ রুট দুটি চালু হলে উড়োজাহাজগুলোর সক্ষমতা ব্যবহার করা যাবে বলে মনে করছেন বিমান কর্মকর্তারা।
বিমানের পরিকল্পনা অনুযায়ী, একজন যাত্রী ঢাকা থেকে নারিতা বা টরন্টো যাবেন বিমানের ফ্লাইটে। এরপর সেখান থেকে জাপান এয়ার বা এয়ার কানাডার ফ্লাইটে যাবেন তার পছন্দের গন্তব্যে। যাত্রী যে গন্তব্যে যাবেন তার টিকিটও সংগ্রহ করবেন বিমানের কাছ থেকেই।
বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোকাব্বির হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জাপানে আমাদের ফ্লাইট চালানোর কথা রয়েছে। আমরা প্রস্তুত আছি। কিন্তু করোনার কারণে সেখানে এখন রেসট্রিকশন আছে। এজন্য ফ্লাইট চালু করতে পারছি না।
‘আর টরন্টোও আমাদের পরিকল্পনায় আছে। তারা আমাদের ফ্লাইট চালানোর অনুমতিও দিয়েছে। তবে শর্তও দিয়েছে। শর্তটি হলো আগে তারা ঢাকায় নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে আসবে। এটি জানুয়ারিতেই শেষ হওয়ার কথা। আমরা আশা করছি, কোভিড পরিস্থিতির উন্নতি হলে আগামী মার্চ থেকেই ফ্লাইট শুরু করা যাবে।’
ঢাকা থেকে যে এয়ারলাইন্সগুলো নিয়মিত আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করে তারা সাধারণত মধ্যপ্রাচ্য, মধ্য এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন বিমানবন্দরে ট্রানজিট দিয়ে যাত্রী পরিবহন করে। এতে অনেক সময় যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছাতে সময় লাগে অনেক বেশি।
কোনো এয়ারলাইন্সেরই ঢাকা থেকে সরাসরি টরন্টোতে ফ্লাইট নেই। বিমান আশা করছে, নারিতা ও টরন্টোতে ফ্লাইট শুরু করলে মধ্যপ্রাচ্য, মধ্য এশিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ার অনেক আন্তর্জাতিক যাত্রী তারা পাবে।
বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোকাব্বির বলেন, ‘ভারতের দিল্লি-কলকাতা, থাইল্যান্ডের ব্যাংকক, নেপালের কাঠমান্ডু, মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর থেকে যাত্রীরা ঢাকায় এসে দুই থেকে চার ঘণ্টার মধ্যে জাপান বা টরন্টোতে কানেক্টিভিটি পাবেন।
‘ঢাকাকে যেন একটা হাব হিসেবে তৈরি করা যায় আমরা সেভাবেই আমাদের গ্রীষ্মকালীন সূচি সাজিয়েছি। তবে এটা পুরোপুরি নির্ভর করছে করোনা পরিস্থিতির ওপর।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হলে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন বিমানের জন্য কঠিন।
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ এটিএম নজরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঢাকাকে হাব করার বিমানের যে পরিকল্পনা এটি ভালো চিন্তা। কিন্তু বিনিময়ে বিমান যাত্রীদের কী দেবে?
‘একজন যাত্রী সিডনি থেকে ঢাকা হয়ে টরন্টো যেতে যতটা স্বাচ্ছন্দ বোধ করবেন তিনি কি সিডনি-নারিতা-ঢাকা হয়ে টরন্টো যেতেও একই মনোভাব পোষণ করবেন?’
তিনি বলেন, ‘পাশাপাশি ঢাকা বিমানবন্দর এখন যে অবস্থায় আছে, বৈরি আবহাওয়ায় উড়োজাহাজ চলাচলে সমস্যা হলে তখন কী হবে? এ বিষয়গুলোরও সমাধান খুঁজতে হবে।
‘মনে রাখতে হবে টরন্টো, নারিতা, সিডনি রুটে যারা চলাচল করেন তারা কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের যাত্রীদের চেয়ে এলিট। ৫০০ টাকা কম-বেশির জন্য তারা স্বাচ্ছন্দ বিসর্জন নাও দিতে পারেন। পরিকল্পনা হিসেবে এটি ভালো। কিন্তু সেখানে সেবার মান বৃদ্ধির বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে। না হলে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন কঠিন।’
বিশেষজ্ঞরা এ কথা বললেও বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানিয়েছেন, তাদের পরিকল্পনা চূড়ান্ত। তিনি বলেন, ‘আমরা যে পরিকল্পনা করেছি- এটা সেট। কোভিড পরিস্থিতির উন্নয়ন হলেই আমরা এটা বাস্তবায়ন করব।’
‘চীনের গুয়াংজুতে ফ্লাইট শুরুর পরিকল্পনা আমরা নিয়েছিলাম। গত জুলাই থেকে সেখানে কার্গো ফ্লাইট চালাচ্ছি। পরিস্থিতির পরিবর্তন হলে সেখানে যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ চলাচল শুরু করব। হংকংয়ে সপ্তাহে চারটা কার্গো ফ্লাইট চালু করছি। চেন্নাইয়ে সব রেডি আছে। তবে যাত্রী না থাকায় ফ্লাইট শুরু করা যাচ্ছে না।’