বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ইউপি সদস্যের মৃত ছেলে মাটি কাটা শ্রমিক, তুলেছেন টাকাও!

  •    
  • ২০ জানুয়ারি, ২০২১ ২১:১২

আছাদুজ্জামান মেলান্দহ উপজেলার ঘোষেরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের পাঁচ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য কাহেতপাড়া গ্রামের চান মিয়ার ছেলে। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২০১৯ সালের এপ্রিলের শুরুর দিকে মারা যান তিনি।

জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার কাহেতপাড়া গ্রামের আছাদুজ্জামান মারা যান ২০১৯ সালে। অথচ অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি (ইজিপিপি) প্রকল্পে মাটি কাটা শ্রমিকদের তালিকায় আছেন তিনি। তালিকা অনুসারে, কাজ শেষে ব্যাংক থেকে টাকাও তুলেছেন আছাদুজ্জামান।

এমনকি ২০২০-২১ অর্থবছরে ইজিপিপির চলমান প্রকল্পেও শ্রমিকের তালিকায় রয়েছে তার নাম।

মেলান্দহ উপজেলার ইজিপিপি প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে নিউজবাংলার অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে এমন তথ্য।

আছাদুজ্জামান উপজেলার ঘোষেরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের পাঁচ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য কাহেতপাড়া গ্রামের চান মিয়ার ছেলে। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২০১৯ সালের এপ্রিলের শুরুর দিকে মারা যান তিনি।

শুধু মৃত ছেলে নয় ইউপি সদস্য চান মিয়ার আরেক ছেলের নামও রয়েছে এ প্রকল্পের ২০১৯-২০ এবং ২০২০-২১ অর্থবছরের শ্রমিকদের তালিকায়। এরমধ্যে ২০১৯-২০ অর্থবছরে তাদের নামে আসা টাকা ব্যাংক থেকে তোলা হয়েছে।

এ বিষয়ে ইউপি সদস্য চান মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার ছেলে আছাদুজ্জামান ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে দেড় বছর আগে। ইজিপিপি প্রকল্পের ২০২০-২১ অর্থবছরের শ্রমিকদের তালিকায় আছাদের নাম আমি দেই নাই।

‘আমার ছোট ছেলে আপেল আছাদের ভোটার কার্ড দিয়ে নাম দিছে। আমি বিষয়টা জানতাম না। ছোট ছেলেটা অনার্সে পড়ে। ভাবছে ভাইয়ের ভোটার কার্ডটি দিয়ে আমি (আপেল) মাটি কাটমু, তাইলেই হইব। আসলে কাজটা আমাদের ভুল হইছে।’

টাকা উত্তোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে মরার পর ওর নামে ব্যাংক থেকে কোনো টাকা তুলি নাই আমি। কেউ হয়তো বা টাকা তুলে থাকতে পারে। বিষয়টা আমার জানা নেই।’

হতদরিদ্র না হলেও ছেলেদের নাম শ্রমিকের তালিকায় কেন দেয়া হয়েছে এমন প্রশ্নে ইউপি সদস্য চান বলেন, ‘আমার তৃতীয় ছেলে আছাদুজ্জামান তো মারাই গেছে। দ্বিতীয় ছেলে আসলামের নাম দিছি কারণ সে এখন বেকার। আমার তো টাকা-পয়সা থাকতে পারে। কিন্তু আমার ছেলেদের তো নিজের কিছু নাই। তাই নাম দিছি।’

ব্যাংক থেকে টাকা তোলার বিষয়ে সোনালী ব্যাংকের হাজরাবাড়ী শাখার ব্যবস্থাপক মামুনুর রশিদের সঙ্গে কয়েক দফা যোগাযোগ করার পর তিনি নিউজবাংলাকে জানান, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ইজিপিপি প্রকল্পের প্রথম কিস্তির সাত হাজার টাকা ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে চেকের মাধ্যমে শ্রমিকদের দেয়া হয়। ওই সময় আছাদুজ্জামানের সাত হাজার টাকার চেকও দেয়া হয়েছে।

ইউপি সদস্য চান মিয়া

মৃত ব্যক্তি কীভাবে চেক তুলল জানতে চাইলে ব্যাংকটির ম্যানেজার বলেন, ‘আমি ছয় মাস আগে এই শাখায় যোগ দিয়েছি। মৃত ব্যক্তির নামে কীভাবে চেক ইস্যু করা হয় বা মৃত ব্যক্তি কীভাবে চেক নেয়, বিষয়টি আমার জানা নেই। আমার আগের কর্মকর্তা ভালো বলতে পারবেন।’

মৃত ব্যক্তির স্বাক্ষর বা টিপসই জাল করা হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের কোনো জবাব তিনি দিতে পারেননি।

এ বিষয়ে ইজিপিপি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির জেলা সদস্য ও জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, ‘ইজিপিপি প্রকল্পে কেউ মাটি না কাটলে টাকা দেয়া হয় না। আর শ্রমিককে সশরীরে গিয়ে টিপ সই বা স্বাক্ষর দিয়ে ব্যাংক থেকে চেক তুলতে হয়।

‘তাইলে এখানে ধরতে হবে, চান মিয়ার ছেলে মারা যাওয়ার পরও প্রকল্পের মাটি কেটেছে; ব্যাংক থেকে টাকাও তুলেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই প্রকল্পটি বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে হয় শুধুমাত্র হতদরিদ্রদের উপকারের জন্য। কিন্তু বাস্তবে গরীবরা এখান থেকে কোনো উপকার পাচ্ছে না। কিছু অসাধু জনপ্রতিনিধি এই প্রকল্প থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।’

তিনি বিষয়টি তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির দাবি জানান।

এ বিষয়ে মেলান্দহ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তামিম আল ইয়ামিন বলেন, মৃত ব্যক্তির ব্যাংক থেকে টাকা তোলার কোনো সুযোগ নেই। এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ থাকলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শ্রমিকদের তালিকায় মৃত ব্যক্তির নাম থাকলে তদন্ত করে তা বাদ দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা নায়েব আলী নিউজবাংলাকে জানান, বিষয়টি তার জানা নেই। এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগও পাননি। তবে এখন যেহেতু জানতে পেরেছেন, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন।

ইজিপিপি প্রকল্পের ২০১৯-২০ অর্থবছরের কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৯-এর নভেম্বরে। শ্রমিকরা পারিশ্রমিক পান ২০২০ সালে জানুয়ারির শেষ দিকে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ইউপি সদস্য নিউজবাংলাকে বলেন, ওই ইউনিয়নে মৃত ব্যক্তির ছাড়াও ভুয়া শ্রমিক দেখিয়ে এ প্রকল্পের লাখ লাখ হাতিয়ে নেয়া হয়েছে।

প্রতি বছর এ প্রকল্পের প্রায় অর্ধকোটি টাকা এভাবে ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নেয়া হয় বলেও অভিযোগ তার।

এ বিভাগের আরো খবর