আলোচিত ঠিকাদার গোলাম কিবরিয়া শামীমসহ অনেক আসামির সঙ্গে আঁতাত করে জামিন পাইয়ে দিয়ে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জান্নাতুল ফেরদৌসী রূপাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
রূপা বুধবার দুপুর দুইটায় কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হন বলে নিউজবাংলাকে জানান দুদকের পরিচালক (জনসংযোগ) প্রনব কুমার ভট্টাচার্য্য।
দুদকের উপপরিচালক ইব্রাহিমের নেতৃত্বাধীন একটি টিম তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
রূপাকে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে দুদক সচিব মুহা. আনোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘ক্ষমতার অপব্যবহার, ঘুষ গ্রহণ ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অনুসন্ধান কর্মকর্তা জান্নাতুল ফেরদৌসী রূপাকে তলব করেছিল। আমাদের জানামতে, আদালত তাকে ২৭ জানুয়ারির মধ্যে দুদকে জবাব দেয়ার নির্দেশ দেন। তিনি দুপুর ২টায় দুদকে এসেছেন। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা তার বক্তব্য গ্রহণ করছেন।’
২০২০ সালের ২৮ অক্টোবর দুদকের উপপরিচালক (বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্ত-২) মোহাম্মদ ইব্রাহীম স্বাক্ষরিত একটি তলবি নোটিশ দেয়া হয়।
ওই নোটিশে রূপাকে গত ৪ নভেম্বর জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্টের কপি নিয়ে সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়েছিল।
তবে সেদিন হাজির না হয়ে উল্টো সংস্থাটির তলব আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ১ নভেম্বর উচ্চ আদালতে রিট করেন রূপা। তবে তার আবেদনটি ৩ ডিসেম্বর বিচারপতি মো. মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ খারিজ করে দেয়।
সে সময় আদালত বলেছিল, দুর্নীতি এখন সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। এ অবস্থায় দুদকের কোনো অনুসন্ধানে আদালত হস্তক্ষেপ করলে বাজে নজির তৈরি হবে। দুদককে স্বাধীনভাবে কাজ করতে উৎসাহও দিচ্ছে আদালত।
হাইকোর্ট রিট খারিজ করে দিলে রূপাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করে ১৭ ডিসেম্বর ফের চিঠি পাঠায় দুদক। ওই দিন একই সঙ্গে তার ব্যাংক হিসাব অনুসন্ধানে দেশের ৫৬টি ব্যাংককেও চিঠি দেয় কমিশন।
এর আগে রূপাকে পাঠানো দুদকের ২৮ অক্টোবরের নোটিশে বলা হয়, ‘আপনার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ঘুষ গ্রহণপূর্বক জি কে শামীমসহ বিভিন্ন আসামিকে জামিন পাইয়ে দিয়ে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেওয়া এবং জ্ঞাত আয়-বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে আপনার বক্তব্য শোনার জন্য নোটিশটি দেওয়া হয়েছে।’
২০২০ সালের ৪ ও ৬ ফেব্রুয়ারি অস্ত্র ও মাদকের দুই মামলায় বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা ও ঠিকাদার গোলাম কিবরিয়া শামীমকে (জি কে শামীম) জামিন দেয় হাইকোর্ট। অস্ত্র মামলায় তাকে ছয় মাস ও মাদক মামলায় এক বছরের জামিন দেওয়া হয়েছিল।
বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি এসএম মুজিবুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এবং বিচারপতি রেজাউল হক ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই দুই মামলায় তাকে জামিন দেয়।
জামিনের বিষয়টি গোপন ছিল। মার্চের প্রথম সপ্তাহে ফাঁস হওয়ার পর আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। তথ্য গোপন করে জামিন নেওয়ায় ৮ মার্চ জামিন বাতিল করা হয়।