সাত সুমুদ্দুর ১৩ নদীর পারে নতুন সরকার নিয়ে বাংলাদেশের ময়মনসিংহের নান্দাইলে এখন খুশির বন্যা। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মন্ত্রিসভায় ডেপুটি চিফ অব স্টাফের সিনিয়র অ্যাডভাইজর হওয়া জাইন সিদ্দিকিকে নিজের মানুষ হিসেবেই ভাবছেন নান্দাইলবাসী।
খবরটি প্রকাশ হওয়ার পর এলাকায় মিষ্টিমুখ করানোর ঘটনাও ঘটেছে।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত জাইন নান্দাইলের শেরপুর ইউনিয়নের মাদারী নগর গ্রামের চিকিৎসক দম্পতি মোস্তাক আহম্মেদ সিদ্দিকি ওরফে মামুন ও কামরুন আবেদীন হেলেনা সিদ্দিকির একমাত্র ছেলে।
গত ১৩ জানুযারি বাইডেন প্রশাসন জাইনের নাম ঘোষণা করে। এর আগে বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত কেউ এত উচ্চ পদে নিয়োগ পাননি।
জাইনের বাবা মা তিন দশক আগে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানেই নাগরিকত্ব পেয়ে বসবাস। সেখানেই জন্ম জাইনের। তাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন দাদি মাজেদা আক্তারও। সেখানেই জাইনের লেখাপড়া ও বেড়ে উঠা।
বাবা মোস্তাক আহম্মেদ সিদ্দিকি ও মা কামরুন আবেদীন হেলেনা সিদ্দিকির সঙ্গে জাইনতবে জাইনের অনেক স্বজন এখনও নান্দাইল থাকেন। তারা জানান, তার বাবা মা চিকিৎসা নিয়ে পড়াশোনা করতে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন। ২০১৬ সালে জাইনকে নিয়ে তারা গ্রামের বাড়িতে বেড়াতেও এসেছিলেন।
জাইনের চাচাত দাদা মোবারক আলী বলেন, ‘আমি হুনছি আমরার (আমাদের) জাইন আমরিকা সরহারের বড় পদে চারহি পাইছে। এইডা হুইন্না গর্বে আমার বুকটা ভইড়া গেছে। আমি সবাইরে এই সংবাদ জানাইছি, আমি দোয়া হরি আমার দাদাভাই আরও নাম হরুইক। বাফের মতো মানুসের সেবা হরুইক। দেশের নাম উজ্জ্বল হরুইক।’
জাইনের বাবার চাচাত ভাইয়ের বউ লুৎফুন্নাহার বেগম বলেন, ‘তারা সবাই আমেরিকায় থাকলেও ৩/৪ বছর পর পর গ্রামে আসেন। গ্রামের আত্মীয় স্বজনের খোঁজ খরব রাখেন। প্রায় সময় তারা মোবাইল আমাদের খোঁজ নেয়, এখান থেকে আমরাও মাঝে মাঝে মোবাইলে খবর নেই।
‘তারা ২০১৬ সালে বাড়িতে বেড়াতে এসেছিল। তারা বাড়ি আসলে আমাদের সব আত্মীয়রা আমাদের বাড়ি আসে ঈদের মতো আনন্দে বাড়ি ভেসে ওঠে। গ্রামে মানুষের বিপদ আপদে জাইনের বাবা সাহায্য করেন থাকেন।
প্রতিবেশী বরিলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শাহিন কবির বলেন, ‘জাইনের এমন অর্জন শুধু তার নিজের পরিবারের নয়, সারা বাংলাদেশের গর্ব।’
স্থানীয় মাহবুব সিদ্দিকিয়া নূরানী হাফিজিয়া মাদরাসার প্রধান শিক্ষক আল আমিন বলেন, ‘জাইনের বাবা টেলিফোনে আমাদের জানানোর পর গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর মসজিদে মিলাদ পড়িয়েছি। মুসল্লিসহ গ্রামের মানুষকে মিষ্টিমুখ করানো হয়েছে।’
তিনি জানান, তাদের আমাদের মাদ্রাসায় প্রায় ১২০ জনের মকো ছাত্র আছে। ছাত্রদের খাওয়া দাওয়া ও শিক্ষকদের বেতনসহ যাবতীয় খরচ জাইনের পরিবার দেয়।’
জাইন সিদ্দিকির ফুফু রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের সহকারী একান্ত সচিব নাহিদ পারভীন মনি জানান, জাইন যুক্তরাষ্ট্রেই জন্ম নিয়েছেন। বেড়ে ওঠা নিউ ইয়র্কে। প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি ও ইয়েল ল স্কুল থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেছেন।
জাইন এত বড় একটি পদে নিয়োগ পাওয়ায় খুব আনন্দিত জানিয়ে মনি বলেন, ‘আমরা আশাবাদী জাইন বাংলাদেশের ভাবমুর্তি উজ্জ্বল করবেন।’
রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ টেলিফোনে জাইনের বাবা মোস্তাক আহম্মেদ সিদ্দিকির সাথে কথা বলে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বলেও জানান পারভীন মনি।
মোস্তাক আহম্মেদ সিদ্দিকির চাচাত ভাই রতন সিদ্দিকি বলেন, ‘তারা পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে জাইনের বাবা সবার বড়। তারা কেউ গ্রামে থাকে না, তাদের জমা জমির দেখা শোনা আমিই করি।’