করোনার টিকা ভিআইপিরা কেন আগে পাবেন, এমন প্রশ্ন তোলা বিএনপি এখন প্রশ্ন রাখছে, কেন আগে ভিআইপিদের টিকা দেয়া হবে না।
ভারত থেকে টিকা আসা যখন সময়ের অপেক্ষা তখন নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
বিএনপি নেতা বলেন, ‘করোনা টিকা আসছে। এটা ভিআইপিরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পাবেন না। ওনারা ভিআইপিদের আগে গরিবদের ওপর প্রয়োগ করে গরিব বাঁচে না মরে দেখবেন।
‘অথচ নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও আগে করোনা টিকা নিয়েছেন। এমনকি দেশটির শীর্ষ সংক্রামক বিশেষজ্ঞ অ্যান্থনি ফউচিও নিয়েছেন।’
বাংলাদেশ অক্সফোর্ড উদ্ভাবিত তিন কোটি টিকা আনবে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে। দেশটি এর বাইরে ২০ লাখ টিকা দিচ্ছে উপহার হিসেবে। বৃহস্পতিবার এই ২০ লাখ ও বাংলাদেশের কেনা টিকা থেকে ৫০ লাখ আসছে প্রথম ধাপে।
টিকা আসার আগের দিন বুধবার সংবাদ সম্মেলন করে রিজভী বলেন, ‘আগে গরিব মানুষের ওপর এরা ভ্যাকসিন প্রয়োগ করবে। ভারতে এই ভ্যাকসিন নিতে গিয়ে কয়েক জায়গায় মানুষ মারা গেছে। যদিও তারা বলেছেন এটা ভ্যাকসিনের কারণে নয়। ভ্যাকসিন নেওয়ার পর তো মারা গিয়েছে। আর ওনারা বলে ভিআইপিরা আগে পাবে না।’
সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে করোনার টিকা আগে পাবেন স্বাস্থ্যকর্মী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সাংবাদিক, মুক্তিযোদ্ধা, প্রবীণ, জনপ্রতিনিধি ও সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।
তবে প্রথম ২০টি টিকা দেয়া হবে চিকিৎসক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গণমাধ্যমকর্মীরা।
এই সিদ্ধান্ত হওয়ার আগে বিএনপির পক্ষ থেকে বক্তব্য ছিল উল্টো। সরকার ভিভিআইপিদেরকে করোনার টিকা আগে দেবে বলে ফেসবুকে একটি তালিকা ছড়িয়েছিল ডিসেম্বরের। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সেটিকে ভুয়া বলার পরও বিএনপি ওই তালিকাকে সত্য ধরে কথা বলেছিল।
গত ৩ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলনে এসে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা শুনতে পারছি যে, উচ্চ পর্যায়ের মানুষদের জন্য ইতোমধ্যে তালিকা প্রস্তুত হয়ে গেছে। আমরা খবর পেয়েছি যে, গুলশান ক্লাব, ঢাকা ক্লাব, উত্তরা ক্লাব এই সমস্ত ক্লাবগুলোতে যারা সদস্য আছেন তাদের তালিকা করা হচ্ছে। আরও শুনতে পারছি যে, সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা যারা আছেন তাদের জন্য করা হচ্ছে, মন্ত্রীদের জন্য করা হচ্ছে।
‘কিন্তু সাধারণ মানুষ কীভাবে এই ভ্যাকসিনটা পাবে, কখন পাবে-সেই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো বক্তব্য আমরা সরকারের কোনো দপ্তরের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত পাইনি।’
- আরও পড়ুন: করোনার টিকায় বেক্সিমকোর লাভ কত: ফখরুল
সেই বক্তব্যের পুরো বিপরীত অবস্থানে গিয়ে রিজভী এখন বলছেন, “স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিজেরা তো নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকেন। ভাইরাস যেন কোনো ফাঁক দিয়ে ‘বেহুলার বাসর ঘরে সাপ ঢোকার মতো’ ঢুকতে না পারে, প্রধানমন্ত্রীও ঠিক সেভাবেই আছেন। একইভাবে রয়েছেন ওবায়দুল কাদেরও। তাই ভিআইপিদের আগে গরিবদের উপর প্রয়োগ করে দেখবেন গরিবরা বাঁচে না মরে।’
বিএনপি নেতা বলেন, ‘যাদের (ভারত) কাছ থেকে ভ্যাকসিন নিচ্ছেন, তারা তো আপনাদেরকেই (সরকার) বন্ধু মনে করে। বাংলাদেশের আর কাউকে বন্ধু মনে করে না। তো এই ভ্যাকসিন এর ওপর আমাদের সন্দেহ থাকবে কেন?’
রিজভী বলেন, ‘স্বাস্থ্যমন্ত্রী আপনি ভ্যাকসিন গবেষণা টেস্ট হিসেবে গরিবদের ব্যবহার করবেন না। আগে নিজেরা নিয়ে দেখেন। আপনাদের শরীরে কি প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। তারপর গরিবদের দেওয়ার চেষ্টা করেন। যদি দেখেন এটার যথাযথ উপকার হয় তারপর গ্রামে-গঞ্জে পাঠানোর ব্যবস্থা করুন ‘
বিএনপি নেতা অবশ্য এও বলেন যে, টিকাদান কেন্দ্রে গিয়ে জনগণকে হতাশ হয়ে ফিরতে হবে।
এই সংশয়ের ব্যাখ্যা করে রিজভী বলেন, ‘এই সরকারের যে বৈশিষ্ট্য ভোট কেন্দ্র মানেই তো হল ভোটাররা যেতে পারবে না। সুষ্ঠু ভোট হয় না। আওয়ামী লীগের লোকেরা ব্যালটবক্স ভর্তি করেন। ভ্যাকসিনের কেন্দ্র যদি ইউনিয়ন গ্রামে করা হয় তাহলে আওয়ামী লীগের লোকেরা এই ভ্যাকসিন পাবে এবং তারা যাদের সুপারিশ করবে কেবল তারাই তো ভ্যাকসিন পাবে।‘
বিএনপি নেতা বক্তব্য রাখছিলেন জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের আয়োজিত ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প উদ্বোধন করতে গিয়ে। দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষ্যে এই ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়।