রাজধানীর দক্ষিণখান থেকে কারওয়ানবাজারে আসছিলেন সবজি ব্যবসায়ী আপন মিয়া। কাওলা ফুটওভার ব্রিজের পূর্ব পাশে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন তার সঙ্গী নজরুল ইসলাম।
কারওয়ান বাজারের দিকেই যাচ্ছে বলে একটি পিকআপ ভ্যানে দুই জনকে উঠানো হয়। ভ্যানে উঠার পরই চিত্র পাল্টে যায়। গাড়ির পেছনে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা ডাকাতদল লুটে নেয় টাকা ও মোবাইল ফোন।
এক পর্যায়ে আপনকে চলন্ত গাড়ি থেকে মাঝ রাস্তায় ফেলে দেয় ডাকাতরা। এতে মারা যান তিনি।
নজরুলকেও ফেলে দেয়া হয় একইভাবে। তবে তিনি বেঁচে যান।
গত ২৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় বিমানবন্দর সড়কে এ ঘটনা ঘটে। পুরো ঘটনাটি ধরা পড়েছে সড়কের সিসিটিভি ক্যামেরায়। প্রায় তিন সপ্তাহ পর্যবেক্ষণ ও তদন্ত শেষে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে সন্দেহভাজন ছয় জনকে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের গুলশান অঞ্চল যাদেরকে ধরেছে তারা হলেন সজল, মুসা, বাচ্চু, সজীব, মুন্না ও সিদ্দিক।
তাদের কাছ থেকে ডাকাতিতে ব্যবহৃত পিকআপ ভ্যান, চাকু এবং লুট করা সাত হাজার টাকা ও একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
চলন্ত ট্রাক থেকে ফেলে দেয়া হচ্ছে এক জনকে। ছবি: সিসিটিভির ফুটেজ থেকে সংগৃহীতবুধবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে ঘটনার বিস্তারিত জানান ডিবির (গোয়েন্দা) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।
তিনি বলেন, ‘রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ বেশ কয়েকটি স্থানে পাইকারি সবজির আড়ত বসে। স্বল্প আয়ের ব্যবসায়ীরা আড়ত থেকে সবজি কিনে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করেন।
‘একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত দল সাধারণত রাত ১১টা বা ১২ টার পর হতে একটি ভাড়া করা পিকআপ নিয়ে ডাকাতি করতে বের হয়। তারা আড়তে আসা স্বল্প আয়ের ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে। তাদের আড়তে নেয়ার কথা বলে সুকৌশলে গাড়িতে তোলে।
‘গাড়িতে তোলার পর যাত্রীবেশে থাকা ডাকাতদলের সদস্যরা ব্যবসায়ীদের কাছে থাকা নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। এরপর চলন্ত গাড়ি থেকে তাদেরকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।’
ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার জানান, সেদিন আপন মিয়া ও তার সঙ্গী নজরুল ইসলাম দক্ষিণখানের বাসা থেকে কারওয়ান বাজারের উদ্দেশে বের হন। কাওলা ফুটওভার ব্রিজের পাশে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এ সময় ডাকাতরা কারওয়ান বাজার যাওয়ার কথা বলে তাদেরকে পিকআপে তোলেন।
গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, ‘পিকআপে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে পেছনে যাত্রীবেশে বসে থাকা ডাকাতরা তাদের টাকাসহ মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে চলন্ত গাড়ি হতে ভিকটিমকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এ ঘটনায় ভিকটিম আপন মিয়া মারা যান।’
এই ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় সে সময় একটি মামলা হয়। থানা পুলিশের পাশাপাশি মামলাটি তদন্ত শুরু করে গোয়েন্দা পুলিশ।
রাতে ট্রাকে না উঠার পরামর্শ দিয়ে গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, ‘স্বল্প আয়ের ব্যবসায়ীরা প্রায়ই এমন ঘটনার সম্মুখীন হলেও সাধারণত থানায় কোন অভিযোগ জানান না। তাই এ ঘটনাগুলো পুলিশের অজানাই থেকে যায়।’
এমন ঘটনার শিকার হলে পুলিশকে জানানোর পরামর্শও দেয়া হয় সংবাদ সম্মেলনে।
গোয়েন্দা বিভাগ জানায়, যাদেরকে ধরা হয়েছে তারা আব্দুল্লাহপুর থেকে কারওয়ান বাজার, রামপুরা থেকে যাত্রাবাড়ী ও যাত্রাবাড়ী থেকে ভুলতা গাউছিয়া এলাকায় পিকআপ ভ্যান চালিয়ে এই প্রক্রিয়ায় ডাকাতি করেন।
ভ্যানের সামনের বসেন তিনজন। বাকিরা যাত্রীবেশে পেছনে থাকেন।
পুলিশ জানায়, ঘটনার দিন গ্রেপ্তার হওয়া মূসা ও রফিক ভুক্তভোগীদের বুকে চাকু ধরেন। পিকআপের সামনে বসা সজল তখন পিছনে চলে এসে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেন।
পুলিশ জানায়, এই দলটি কয়েকটি ডাকাতির ঘটনা ঘটায় বলে তাদের তদন্তে উঠে এসেছে।