প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ রাব্বী হত্যা মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন মামলার প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা কবির হোসেন। তিনি চকবাজার থানার পরিদর্শক তদন্ত (নিরস্ত্র) হিসেবে দায়িত্বরত আছেন।
আবরারের পিতা চকবাজার থানায় মামলা করার পর পরিদর্শক কবির হোসেন ২০১৯ সালের ৮ অক্টোবর এই মামলার তদন্তভার গ্রহণ করেন। এর পরদিন তাকে এই মামলার তদন্তের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নেয়া হয়।
মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) ঢাকার ১ নম্বর দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান এই সাক্ষ্য গ্রহণ করেন।
এ পর্যন্ত এই মামলার ৬০ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪৫ জন আদালতে সাক্ষ্য দিলেন।
সাক্ষ্য দেয়ার পর আইনজীবীরা তাকে জেরা করেন।
আসামি ইশতিয়াক আহমেদ মুন্নার আইনজীবী মিজানুর রহমান তদন্তকারী কর্মকর্তা কবির হোসেনকে প্রশ্ন করেন, ‘আপনি আদালতে যে ভিডিও ফুটেজ ও ৪০টি ছবি জমা দিয়েছেন, তার মধ্যে মুন্নার ছবি দেখাতে পারবেন?’
উত্তরে কবির হোসেন নিশ্চুপ থাকেন এবং ছবি উল্টে-পাল্টে দেখে রেখে দেন।
আইনজীবী আরও প্রশ্ন করেন, ‘আপনি কি আসামিদের কোনো জবানবন্দি লিখেছিলেন? উত্তরে কবির হোসেন না-সূচক উত্তর দেন ।
এ সময় অন্যান্য আসামিদের আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু, মাহবুব আহমেদ, আমিনুল গণি টিটো ও ফারুক আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
জেরা শেষ না হওয়ায় আগামীকাল আবার কবির হোসেনকে জেরা করবেন অন্য আসামির আইনজীবীরা। এরপর অপর এক তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষীর মধ্য দিয়ে এই মামলার সাক্ষ্য শেষ হবে। যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হলে আলোচিত মামলাটির রায় দেবে আদালত ।
গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর চার্জশিটভুক্ত ২৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে এই মামলার বিচার শুরু হয়। এরপর ৫ অক্টোবর আবরারের বাবা বরকতউল্লাহর জবানবন্দি গ্রহণের মধ্য দিয়ে এই মামলার সাক্ষ্য শুরু হয়।
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরে বাংলা হলে ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মীর হাতে নির্দয় পিটুনির শিকার হয়ে মারা যান আবরার ফাহাদ। ওই ঘটনায় নিহতের বাবা বরকতউল্লাহ বাদী হয়ে চকবাজার থানায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।
২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ওয়াহিদুজ্জামান।
অভিযুক্ত ২৫ জনের মধ্যে এজাহারনামীয় ১৯ জন এবং তদন্তে প্রাপ্ত এজাহারবহির্ভূত ছয়জন রয়েছেন। এজাহারভুক্ত ১৯ জনের মধ্যে ১৬ জন এবং এজাহারবহির্ভূত ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারদের মধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন আটজন।
গ্রেপ্তার ২২ জন হলেন: মেহেদী হাসান রাসেল, মো. অনিক সরকার, ইফতি মোশাররফ সকাল, মো. মেহেদী হাসান রবিন, মো. মেফতাহুল ইসলাম জিওন, মুনতাসির আলম জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির, মো. মুজাহিদুর রহমান, মুহতাসিম ফুয়াদ, মো. মনিরুজ্জামান মনির, মো. আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মাজেদুর রহমান, শামীম বিল্লাহ, মোয়াজ আবু হুরায়রা, এ এস এম নাজমুস সাদাত, ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, অমিত সাহা, মো. মিজানুর রহমান ওরফে মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত, মোর্শেদ অমত্য ইসলাম ও এস এম মাহমুদ সেতু।মামলার তিন আসামি এখনও পলাতক। তারা হলেন: মোর্শেদুজ্জামান জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মোস্তবা রাফিদ। তাদের মধ্যে প্রথম দুজন এজাহারভুক্ত ও শেষের জনের নাম অভিযোগপত্রে অন্তর্ভূক্ত করা হয়।
১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এ সময় কারাগারে থাকা ২২ আসামি নিজেদেরকে এই মামলার ঘটনায় নির্দোষ বলে দাবি করেন।