একে তো সেতুর গার্ডারে ফাটলের কারণে যানজটের দুর্ভোগ। তার ওপর ভোগান্তির নতুন মাত্রা পেয়েছে ধুলা। অতিরিক্ত ধুলার কারণে নাভিশ্বাস ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের যাত্রীদের।
রাজধানীগামী মানুষের ভোগান্তি এখন নিত্য। মাঝেমধ্যে যানজটের কারণে বাহনে ধীরগতি হলে ধুলোঝড়ে নাস্তানাবুদ যাত্রীরা।
মঙ্গলবার ঝুঁকিপূর্ণ সালেহপুর সেতুতে পৌঁছানোর আগে দেখা যায়, ধুলার সাদা চাদরে ঢাকা পড়েছে পুরো সড়ক। সেতুর সামনের অংশে যেখানে ডাইভার্শন হচ্ছে, সেখানে ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশ যানবাহনগুলোকে দাঁড় করাচ্ছেন। যখন যে-পাশে যানবাহনের সংখ্যা বেশি হচ্ছে, সেই পাশের যানগুলোকে আগে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। এভাবে কখনও ঢাকামুখী ও আবার কখনও মানিকগঞ্জমুখী যানবাহনের স্রোত ছাড়ছেন পুলিশ সদস্যেরা।
ঢাকামুখী লেনে যখন সিগনাল ছাড়া হচ্ছে, তখন বেপরোয়া গতিতে চলতে শুরু করছে যানবাহন। কে কার আগে যাবে, এ নিয়ে হুড়োহুড়িতে মূল সড়ক থেকে মাটির পথে নেমে পড়ছে বাস, ট্রাক, প্রাইভেটসহ অন্যান্য যানবাহন। এ সময় পুরো সড়ক ধুলায় অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যাচ্ছে।
কোনোভাবে এই ধুলা থেকে বাঁচতে যাত্রীরা তড়িঘড়ি জানালা আটকে দিলেও ততক্ষণে ধুলোতে আচ্ছন্ন হয়ে যাচ্ছে পুরো বাস। এতে চরম বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে শিশু ও বয়স্ক যাত্রীসহ সাধারণ যাত্রীদের।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সালেহপুরে এমন ভোগান্তির কথা নিউজবাংলাকে জানান সাভারের বাসিন্দা প্রিন্স ঘোষ। তিনি বলেন, ‘পরশু দিন সকাল সাড়ে নয়টায় দিকে ঢাকায় গিয়েছিলাম। যতটুকু দেখলাম তখন সালেহপুর ব্রিজে নির্মাণকাজ চলছিল। খুব একটা জ্যাম দেখলাম না। তবে ওইদিনই আমার চোখের সামনে একটা এক্সিডেন্ট হইছে। রাস্তায় তো গাড়িগুলো একসাইড দিয়ে যাচ্ছে। তখন লেন চেঞ্জ করতে গিয়েই এক জনকে ধাক্কা মেরে রেখে চলে গেছে বাস।’
তিনি আরও বলেন, ‘গাবতলী থেকে শুরু করে সালেহপুর ব্রিজ পর্যন্ত ধুলাবালি দিয়ে পুরা অবস্থা খারাপ।’
গত বুধবার ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আমিনবাজারে সালেহপুর সেতুর একাংশের গার্ডারে ফাটল দেখা দেয়ার পর থেকে দুর্ভোগ বাড়ে এই পথের যাত্রীদের।
সেতুর অপেক্ষাকৃত ভালো অংশ মানিকগঞ্জমুখী লেন দিয়ে সব যানবাহন চলাচল করায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানিয়েছে হাইওয়ে পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার থেকেই সালেহপুর সেতুর সামনের অংশে ঝুঁকিপূর্ণ সাইনবোর্ড টানিয়ে রাজধানী অভিমুখের যানবাহনগুলোকে লেন পরিবর্তনের নির্দেশনা দিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এই অংশে হাইওয়ে ও ট্রাফিক পুলিশকে সার্বক্ষণিক তদারকি কাজে নিয়োজিত থাকতে দেখা গেছে।
পর্যবেক্ষণ শেষ হলে সেতুটির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে সোমবার নিউজবাংলাকে জানিয়েছিলেন ঢাকা সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মারুফ হোসেন।
যানবাহন চলাচলে হুড়োহুড়ি অরাজকতা সম্পর্কে জানতে চাইলে সাভার হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘আমরা এরকম দেখি নাই। স্টিয়ারিং তো আর আমাদের হাতে নাই। চালকের মনের ভিতর কী আছে, কীভাবে যায়, একটু সিগন্যাল ছাড়লে আগে-পরে যাওয়ার চেষ্টা করে। এটা তো মনমানসিকতার ব্যাপার। এখানে কাকে আমরা কীভাবে বলব, বলেন? ওখানে যদি গাড়ি ধরে মামলা দিতে যান, তাহলে যানজট লেগে যাবে।’
ধুলার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘রাস্তার ধুলা তো আমরা কী করব? রোডস অ্যান্ড হাইওয়ে হয়তো পানি দিয়া কমাইতে পারে। সেটা আপনারা ফোন দিয়া বলে দেন। তাহলে ওরা দেবে।’
সড়ক ও জনপথ বিভাগের ঢাকা ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম আল মামুন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঠিক আছে আমরা বলে দিব। ধুলার বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে।’