রাজধানী ও আশেপাশের এলাকায় যানজট নিরসনে সরকারের পরিকল্পনা জানালেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।
বছরের প্রথম অধিবেশনে সংসদে দেয়া ভাষণে সরকারের নানা পদক্ষেপের পাশাপাশি এই বিষয়েও কথা বলেন তিনি।
ভাষণে বর্তমান সরকারের দুই বছরের পাশাপাশি ২০০৯ সাল থেকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন তিনটি সরকারের নানা সাফল্য, উদ্যোগ, চিন্তা, পরিকল্পনা উঠে আসে।
রাষ্ট্রপতি জানান, ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড এর আওতায় সরকার ছয়টি এমআরটি লাইন নির্মাণ হবে।
এর মধ্যে প্রথম লাইনটি নির্মিত হচ্ছে উত্তরা পর্ব থেকে মতিঝিল পর্যন্ত। ২০.১০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই লাইনটির সার্বিক অগ্রগতি প্রায় ৫৫ শতাংশ বলেও জানান রাষ্ট্রপতি।
এই প্রকল্পে ডিপোর ভেতরে ও ভায়াডাক্টের উপর প্রায় ১৪ কিলোমিটার রেল লাইন স্থাপন করা হয়েছে।
এই লাইনটি নির্মাণের পাশাপাশি পাতাল ও উড়াল মেট্রোরেলের সমন্বয়ে ৩১.৪১ কিলোমিটার দীর্ঘ আরও একটি লাইন নির্মাণের লক্ষ্যে পূর্ণাঙ্গ নকশার কাজ চলছে বলেও জানান রাষ্ট্রপতি।
২০ কিলোমিটার দীর্ঘ আরও একটি লাইনের প্রাথমিক নকশা ও জরিপ এবং ১৭.৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ রুটের কাজ চলছে।
মেট্রোরেলের লাইন নির্মাণের পাশাপাশি রাজধানীতে বেশ কিছু উড়াল সড়ক নির্মাণ করবে সরকার।
বিমানবন্দর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত ৪৬.৭৩ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ ২০২৩ সালের জুনে শেষ হবে বলে জানান রাষ্ট্রপতি।
বিমানবন্দর থেকে সাভার ইপিজেড পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ আরও একটি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্প চলছে।
এর পাশাপাশি ঢাকার যানজট নিরসনে ১১টি রুটের ২৫৩ কিলোমিটার দীর্ঘ সাবওয়ে নির্মাণের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা চলছে, যার কাজ আগামী জুনে শেষ হবে।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বালিয়াপুর হতে নিমতলী-কেরানীগঞ্জ-ফতুল্লা-বন্দর হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের লাঙ্গলবন্দ পর্যন্ত ৩৯ দশমিক দুই-চার কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা ইস্ট-ওয়েস্ট এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে সম্ভাব্যতা সমীক্ষাও শেষ হয়েছে।
গণপরিবহনে ভাড়া পরিশোধ পদ্ধতিও আধুনিকায়ন করতে চায় সরকার। এ জন্য ইলেকট্রনিক টোল কালেকশন সিস্টেম এবং র্যাপিড পাস এর পরিধি বৃদ্ধির জন্য প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
ভাষণে পদ্মা সেতু প্রসঙ্গও উঠে আসে। গত ১০ ডিসেম্বর ৪১তম স্প্যান স্থাপনের মাধ্যমে সেতুর ৬.১৫ কিলোমিটার মূল অবকাঠামো দৃশ্যমান হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি জানান, পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ ২০২২ সালের জুলাই নাগাদ শেষ হবে। এর ফলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সাথে অন্যান্য অঞ্চলের সমম্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে।
চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ৩.৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ টানেলের নির্মাণকাজ ২০২২ সালের ডিসেম্বরে শেষ হবে বলেও জানানো হয় ভাষণে।
ইতিমধ্যে টানেলের প্রথম টিউবের নির্মাণ শেষ হয়েছে। গত ১২ ডিসেম্বর থেকে দ্বিতীয় টিউবের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে।
রাজধানীতে যানজট নিরসনে সরকারের পরিকল্পনার পাশাপাশি বর্তমান সরকারের আমলে রেলের অগ্রগতি তুলে ধরেন রাষ্ট্রপতি।
তিনি জানান, ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৩৪৪ কিলোমিটার নতুন রেললাইন, ৩৬৮টি সেতু এবং ৭৪টি স্টেশন ভবন নতুন নির্মাণ করেছে।
এই সময়ে প্রায় ৩৫৪ কিলোমিটার রেলপথ, ৩৫৩টি সেতু এবং ৭৪টি স্টেশন ভবন সংস্কার করা হয়েছে। ২০০টি যাত্রীবাহী কোচ সংস্কার, নতুন ৪৭৮টি যাত্রীবাহী কোচ সরবরাহ এবং বিভিন্ন রুটে মোট ৪৮টি নতুন ট্রেন চালু করা হয়েছে।
যমুনা সেতুতে একটি রেল সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের বিষয়টিও জানান রাষ্ট্রপতি।