ঢাকায় অনুষ্ঠেয় ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে গ্রামভিত্তিক রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রস্তাব দেবে বাংলাদেশ।
বৈঠকে রোহিঙ্গা ফেরাতে চীনের কার্যকর ভূমিকা চাওয়া হবে বলেও রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন সচিব মাসুদ বিন মোমেন।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে আগামী ১৯ জানুয়ারি ঢাকায় বাংলাদেশ, চীন ও মিয়ানমারের সচিব পর্যায়ের ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হওয়ার কথা।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘প্রত্যাবাসনের শুরুটা হবে এক, দেড় বা দুই হাজার দিয়ে। একসঙ্গে তো একদিন এক লাখ পাঠাতে পারবেন না। তাই আমরা গ্রামভিত্তিক তালিকা করে হস্তান্তর করেছি। একটি গ্রামে কত জন লোক থাকে, এক বা দুই হাজার। আমরা গ্রামভিত্তিক রোহিঙ্গা পাঠানো দিয়েই শুরু করব। কিন্তু শুরু হওয়াটা দরকার।’
বাংলাদেশের মূল লক্ষ্য যত শিগগির সম্ভব প্রত্যাবাসন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে চীন আমাদের সহযোগিতা করছে। তাদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায়ই এ বৈঠক হচ্ছে। আমরা যেমন লাখ লাখ রোহিঙ্গা নিয়ে বসে আছি, তেমনি তারাও মধ্যস্ততাকারী হয়ে বসে আছে।’
মোমেন বলেন, ‘বিক্ষিপ্তভাবে রোহিঙ্গা নির্বাচন করার বদলে গ্রাম বা অঞ্চলভিত্তিক যদি নির্বাচন করি, সেটি বরং বেশি বাস্তবসম্মত হবে। এভাবেই আমরা আগানোর চেষ্টা করব। একটি গ্রাম বা অঞ্চলের রোহিঙ্গাদের নির্বাচন করে, সেই সংখ্যা এক হাজার বা দুই হাজার হতে পারে, একটি পাইলটভিত্তিতে তাদের ফেরত পাঠালে সেটি বাস্তবসম্মত হবে।’
তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গারা ফেরত যাওয়ার পরে তাদের সহায়ক পরিবেশ দেওয়ার দায়িত্ব মিয়ানমারের এবং আমাদের কাজ হচ্ছে রোহিঙ্গাদের খুঁজে বের করা। তারা স্বেচ্ছায় যেতে চায় কিনা, সেটি নির্ধারণ করে ফেরত পাঠানো হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘একবার চলে যাওয়ার পর তখন কিন্তু তাদের বিষয় মিয়ানমারের দায়িত্ব হয়ে যাবে। রোহিঙ্গারা যাতে নিরাপদ থাকে, ঠিকমতো ফেরত যেতে পারে, সেটি মিয়ানমারকে নিশ্চিত করতে হবে।’
বাংলাদেশ চীনসহ অন্য দেশগুলোকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় আরও সম্পৃক্ত দেখতে চায় বলেও জানান পররাষ্ট্র সচিব।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘চীন এখানে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় রয়েছে এবং তাদের একটি বড় উপস্থিতি আমরা আশা করব। তবে এটি ঠিক যে, শুধু চীনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে সেটি নয়। আমরা চাইব, আসিয়ানের আহা সেন্টার এবং ভারত, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া যদি যুক্ত হয়, তবে রোহিঙ্গারা আত্মবিশ্বাস ফেরত পাবে।’
রোহিঙ্গারা ৮০ দশক থেকেই প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আসতে থাকে। তবে সবচেয়ে বড় স্রোতটা আসে ২০১৭ সালের আগস্টের পর। সব মিলিয়ে কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। এদের মধ্যে এক লাখকে বাংলাদেশ ভাসানচরে স্থানান্তর করতে চায়। এরই মধ্যে দুই বারে দুই হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে সেখানে নেয়া হয়েছে।
তবে বাংলাদেশ চায় রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যাক। এ জন্য দেশটির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি সই হয়েছে। কিন্তু নানা কারণে মিয়ানমার পিছিয়ে আসে আর এ নিয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশ নানাভাবেই বিরক্তি প্রকাশ করছে।
মিয়ানমারের ওপর চীনের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে এবং সাম্প্রতিক উদ্যোগে এই দেশটি যুক্ত হওয়ায় ঢাকা এবার প্রত্যাবাসন শুরুর ব্যাপারে আগের চেয়ে বেশি আশাবাদী।
গত ৯ বা ১০ জানুয়ারি এই ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। চীনই এই তারিখ ঠিক করেছিল। বাংলাদেশও রাজি ছিল। কিন্তু পরে চীন এই বৈঠক পিছিয়ে দেয়।