বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বাইডেন জমানায় আরও শক্তিশালী সম্পর্কের আশা

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ১৭ জানুয়ারি, ২০২১ ১৯:১৭

ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলার বলেন, ‘আমি মনে করি যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক কেবল দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হবে। আমি এই মুহূর্তে কোনো বড় পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি না।’

জো বাইডেনের আমলে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলার।

বার্তা সংস্থা ইউএনবিকে রোববার দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন তিনি। তার মতে, ২০২১ সাল বাংলাদেশের ইতিহাসের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বছর। ‘সম্ভাবনা ও সুযোগ এতটাই বিকশিত’ যে নতুন বাইডেন প্রশাসনের অধীনেও বড় কোনো পরিবর্তন ছাড়াই বাংলাদেশ-মার্কিন সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে।

গত তিন নভেম্বরের নির্বাচনে ডনাল্ড ট্রাম্পকে বড় ব্যবধানে হারিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন বাইডেন। ২০ জানুয়ারি শপথ নেয়ার মধ্য দিয়ে হোয়াইট হাউজে যাবেন ডেমোক্র্যাটিক এই রাজনীতিক।

বাইডেনের সময়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্ক কেমন হতে পারে, এমন এক প্রশ্নের জবাবে মিলার বলেন, ‘আমি মনে করি যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক কেবল দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হবে। আমি এই মুহূর্তে কোনো বড় পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি না।’

যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত জানান, নতুন প্রশাসনের নীতিগুলো কী তা দেখতে হবে। নতুন মন্ত্রিপরিষদের পদগুলোতে যারা যাবেন তাদের অনেকেই তার সুপরিচিত।

‘তাদের অনেকেরই ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল, বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার দিকে প্রকৃত মনোযোগ রয়েছে’- বলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।

যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি (আইপিএস) এগিয়ে নেবেন কি না?

যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিতে যাচ্ছেন জো বাইডেন। ছবি: নিউজবাংলা

জানতে চাইলে ইউএস মেরিন কর্পসে দায়িত্বপালন করে আসা মিলার বলেন, ‘আমারও তাই মনে হয়। এটিকে যেভাবেই বলা হোক বা যেভাবেই রিব্র্যান্ড করা হোক না কেন, এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের মনোযোগ খুব দৃঢ় থাকবে।’

বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততাকে তার প্রশাসনের অন্যতম সর্বোচ্চ গুরুত্বের স্থানে রেখেছিলেন। ২০১৭ সালের নভেম্বরে ভিয়েতনামে তিনি একটি মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিকের রূপরেখা দিয়েছিলেন, যেখানে সকল দেশ একসঙ্গে সার্বভৌম, স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে সমৃদ্ধ হবে।

এ বিষয়ে মিলার বলেন, ‘আমি আইপিএসকে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) বিরোধী হিসেবে দেখছি না। আইপিএস হলো মার্কিন যুক্তিবাদ যে, এ অঞ্চলটি সুশাসনের নীতি দ্বারা পরিচালিত হওয়া উচিত।’

তিনি আরও বলেন, কোটি কোটি ডলার বিনিয়োগের মাধ্যমে ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো অবশ্যই লাভবান হতে পারে। কারণ এখানে অপার সম্ভাবনা রয়েছে এবং বিনিয়োগকারীরা এ জন্য বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর দিকে নজর রাখবেন।

মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি

মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ থেকে আসা ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে নানা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। এ ব্যাপারে শক্তিশালী দেশগুলোর সহযোগিতাও প্রত্যাশা করছে ঢাকা।

যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মিলার বলেছেন, পরিস্থিতি তৈরির জন্য মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করার জন্য যৌথ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। যাতে সকল রোহিঙ্গা ‘নিরাপদে, মর্যাদার সঙ্গে ও স্বেচ্ছায়’ নিজ দেশে ফিরতে পারে এবং শিগগিরই তা শুরু করতে হবে।

বাংলাদেশ বলেছে, যদি ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার সুযোগ না দেয়া হয়, তাহলে রোহিঙ্গারা ‘আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তাকে বিপদের মুখে ফেলবে’।

মিয়ানমার বাহিনীর অত্যাচারে রাখাইন থেকে ২০১৭ সালে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের ঢল নামে। এসব রোহিঙ্গা এখন বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের জন্য

আগামী ১৯ জানুয়ারি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে ঢাকায় ত্রিপক্ষীয় বৈঠক করবে বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও চীন। কেননা, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনকে এই সংকটের একমাত্র সমাধান হিসেবে দেখছে ঢাকা।

ত্রিপক্ষীয় এ প্রক্রিয়া সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, এই সংকট সমাধানে যেকোনো দেশ সহায়তা করতে পারে এবং এটি কার্যকর।

জেনেভা ও জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ ও রোহিঙ্গাদের সমর্থন করার ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশগুলোকে যুক্তরাষ্ট্র আরও সোচ্চার দেখতে চায় বলে জানালেন মিলার।

‘চাপটা মিয়ানমারের ওপর থাকতে হবে। এই বিশাল বোঝা বাংলাদেশ বহন করবে এটি ন্যায়সঙ্গত নয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এমন অনেক দাতা আছেন যারা এগিয়ে এসেছেন। অন্যরাও আমাদের সঙ্গে যোগ দেবে আশা করি।’

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংকটের প্রতিক্রিয়ায় মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রে অগ্রণী অবদান রেখে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৭ সালের আগস্টে সহিংসতা বৃদ্ধির পর থেকে প্রায় ১.২ বিলিয়ন ডলার সরবরাহ করেছে দেশটি, যার মধ্যে প্রায় ৯৬২ মিলিয়ন ডলার দেয়া হয়েছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ কর্মসূচির জন্য।

নিপীড়িত সম্প্রদায়ের (রোহিঙ্গা) জন্য সীমানা খুলে দিয়ে বিশ্বে একটি উদাহরণ স্থাপন করায় বাংলাদেশের প্রশংসা করে মার্কিন রাষ্ট্রদূত।

‘আমরা বাংলাদেশের আরও শক্তিশালী অংশীদার ও সমর্থক হিসেবে সহায়তা (রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায়) অব্যাহত রাখব।’

ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলার। ছবি: ইউএনবি

জনগণের সঙ্গে জনগণের বন্ধন

মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেছেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক আরও জোরদার করতে তারা নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

তিনি বলেন, ‘বাইডেন প্রশাসনের অধীনেও এটি অব্যাহত থাকবে।’

রাষ্ট্রদূত মিলার মার্কিন সিনেটর এডওয়ার্ড এম কেনেডির কথা স্মরণ করেন, যিনি ১৯৭২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ সফরে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ভাষণ দিয়েছিলেন। এ দেশের জনগণের সঙ্গে জনসম্পর্ক সম্পর্ক গড়ে তোলার ওপর আলোকপাত করেছিলেন।

রাষ্ট্রদূত মিলার সিনেটর কেনেডির উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের মূল পররাষ্ট্রনীতি হলো নাগরিকের সঙ্গে নাগরিক, বন্ধুর সঙ্গে বন্ধু, জনগণের সঙ্গে জনগণের এবং ভ্রাতৃত্বের বিদেশি বন্ধন, যা কোনো দৌরাত্মেই হ্রাস পায় না।’

রাষ্ট্রদূত বলেন, এই বছরটি সবার জন্য অপার সম্ভাবনা এবং সুযোগের। কারণ বাংলাদেশ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উদযাপন করছে; অসাধারণ দেশটি স্বাধীনতার ৫০ বছরও উদযাপন করতে যাচ্ছে।

রাষ্ট্রদূত মিলার জানান, গত পাঁচ দশক ধরে বাংলাদেশের অসাধারণ যাত্রার প্রশংসা করার সর্বোত্তম উপায় নিয়ে ভাবছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তিনি বলেন, ‘আমাদের বেশ কিছু পরিকল্পনা রয়েছে।’

বাংলাদেশের তরুণদের প্রশংসা করে মিলার জানান, বাংলাদেশের তরুণ শিক্ষার্থীদের মতো এতো কর্মচাঞ্চল্য এবং ভবিষ্যতের জন্য এত উৎসাহ তিনি কখনও কোনো দেশে দেখেননি। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাম্পাসের সুপারস্টার।’

মিলার বলেন, ‘বিশ্ব বাংলাদেশের মতো দেশের গুরূত্ব সম্পর্কে আরও সচেতন হচ্ছে। কেবলমাত্র এর ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব বা অবস্থানের জন্য নয়, এখানে যে সুযোগ-সুবিধা রয়েছে তার জন্যও। বাংলাদেশে এখন কী ঘটছে এবং ভবিষ্যতে কী হতে চলেছে সেটিও চিত্তাকর্ষক।’

করোনা প্রাদুর্ভাবের পর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মহামারি মোকাবিলার জন্য বাংলাদেশকে ৬৮.৭ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছে বলে জানান মার্কিন রাষ্ট্রদূত।

বাংলাদেশ চলতি বছরের মার্চে স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপন করবে। ২০২২ সালে বাংলাদেশ-মার্কিন কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্ণ হবে। দুটি উপলক্ষই উদযাপনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র মুখিয়ে আছে বলে জানালেন রাষ্ট্রদূত মিলার।

তিনি জানান, জনগণের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক এবং বন্ধুত্ব ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার ওপর ভিত্তি করে প্রায় পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে সহযোগিতার ক্ষেত্র বৃদ্ধি করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ।

শান্তি, সমৃদ্ধি এবং একটি মুক্ত, ও সুরক্ষিত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য সুরক্ষা, উন্নয়ন, বাণিজ্য, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও জ্বালানি খাতে যৌথ প্রতিশ্রুতি নিয়ে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র কাজ করছে বলেও জানালেন মিলার।

এ বিভাগের আরো খবর