বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সিনেমা বাঁচাতে হাজার কোটি টাকার ফান্ড: প্রধানমন্ত্রী

  •    
  • ১৭ জানুয়ারি, ২০২১ ১৩:৩৮

এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এটা নিয়ে আলোচনা করছি। এক হাজার কোটি টাকার একটা ফান্ড আমরা তৈরি করব। অল্প সুদে এখান থেকে টাকা নিয়ে, সিনেমা হল বা সিনেপ্লেক্স তৈরি করা যাবে। এতে মানুষের বিনোদনের ব্যবস্থাটা থাকবে।’

সিনেমা ও সিনেমা হল বাঁচাতে এক হাজার কোটি টাকার একটি ফান্ড গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রোববার সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-২০১৯ প্রদান অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ ঘোষণা দেন।

ফান্ডের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখান থেকে অল্প সুদে ঋণ পাবেন হল মালিকরা। আমরা এটা নিয়ে আলোচনা করছি। এক হাজার কোটি টাকার একটা ফান্ড আমরা তৈরি করব। অল্প সুদে এখান থেকে টাকা নিয়ে, সিনেমা হল বা সিনেপ্লেক্স তৈরি করা যাবে। এতে মানুষের বিনোদনের ব্যবস্থাটা থাকবে।

‘অনেকগুলো সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গেছে। সেগুলো আবার চালু করাই শুধু না, আধুনিকায়ন করা লাগবে। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনেক উন্নত মানের সিনেমা তৈরি করা যায়। সেদিকেই আমরা বিশেষভাবে দৃষ্টি দিচ্ছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘উপজেলা পর্যন্ত সিনেমাটা যাতে ভালোভাবে প্রচলিত হয়। স্থানীয় মানুষ যেন বিনোদনের সুযোগ পায়, সে ব্যবস্থা করে দেয়ার সে চিন্তা থেকেই এই একটা ফান্ড আমরা তৈরি করে দিচ্ছি।’

এ ছাড়াও চলচ্চিত্রের দুস্থ শিল্পীদের জন্য একটি ট্রাস্ট গঠনের কথাও জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমাদের পরিবারের সবাই সাংস্কৃতিক জগতের সঙ্গে জড়িত ছিল। অনেককেই আমি অনেক দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থায় দেখেছি। আমার ছোট বোন রেহানা লন্ডন থাকে। সে নিয়মিত অনলাইনে পত্রিকা দেখবে। আর কারও কোনো কষ্ট দেখলে সঙ্গে সঙ্গে সে আমাকে খবর পাঠায়। আমি চেষ্টা করি ব্যবস্থাটা নিতে।

‘আমি জানি, এখন আমি আছি হয়তো সহযোগিতা করে যাচ্ছি। কিন্তু যখন থাকব না তখন কী হবে? সে বিষয় চিন্তা করেই আমি চলচ্চিত্র শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট নাম দিয়েছি। কিন্তু এখানে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সকলেই যাতে সুযোগ পায়, সে ব্যবস্থাটা আমি করে দিয়েছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যাদের আমরা সরাসরি দেখি না কিন্তু চলচ্চিত্রটাকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে যারা দিন-রাত অক্লান্ত কাজ করেন, জীবনের ঝুঁকি নেন যন্ত্রশিল্পী থেকে কলাকুশলী, তাদের সকলের বিষয়টিও কিন্তু আমরা এই ট্রাস্টে রেখে দিচ্ছি। এই ট্রাস্ট আইনটা আমরা পাস করব পার্লামেন্টে।

‘এরপর আমরা সরকারের পক্ষ থেকে একটা সিড মানিও দেবো। আমরা চাইব যারা আছেন চলচ্চিত্রের সঙ্গে তারাও অর্থের জোগান দেবেন, যাতে প্রত্যেকে এই ট্রাস্ট থেকে যেকোনো সময় বিপদে-আপদে অনুদান নিতে পারেন। চিকিৎসা থেকে শুরু করে সব কাজ যাতে করতে পারেন, এই লক্ষ্য নিয়েই আমি এই ট্রাস্টটা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বিজয়ীদের হাতে তুলে দেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। ছবি: সাইফুল ইসলাম

চলচ্চিত্রের উন্নয়নে নানা প্রকল্প

দেশের চলচ্চিত্রকে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার তাগিদও দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষের বিনোদনের একমাত্র জায়গা হলো চলচ্চিত্র। কিন্তু সেই জিনিসটাই এখন আস্তে আস্তে শেষ হয়ে যাচ্ছে। তা ছাড়া ডিজিটাল যুগে, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যদি না করা হয়, তাহলে কিন্তু এই আকর্ষণটাও থাকে না; মার্কেটও পাওয়া যায় না।

‘এ জন্য এফডিসিকে উন্নত করার জন্য একটা প্রজেক্ট যেমন আমরা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। আর কবিরপুরে যে জায়গাটা জাতির পিতা দিয়ে গিয়েছিলেন সেটাকেও শুটিংয়ের জন্য একটা আধুনিক জায়গা হিসেবে উন্নয়নের কাজ করে যাচ্ছি। মোটামুটি সেটটা তৈরি হচ্ছে। সেখানে যেকোনো সিনেমা করতে গেলে যা যা প্রয়োজন, সে ধরনের সকল সুবিধা আমরা রেখে দিচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের দিকেও আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। শুধু দেশেই না, আমাদের চলচ্চিত্র যেন বাহিরেও যেতে পারে সে ব্যবস্থাও আমরা করতে পারি। বঙ্গবন্ধু ফিল্ম সিটি যেটা, সেটাকেও আমরা এমনভাবে তৈরি করে দিচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রী জানান, কারওয়ান বাজার থেকে হোলসেল মার্কেট সরিয়ে এফডিসিকে ঘিরে ওই এলাকায় উন্নয়ন পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘এফডিসির ওখানে কারওয়ানবাজার। এটা একটা হোলসেল মার্কেট। এটা এখান থেকে সরিয়ে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে হোলসেল মার্কেটটা নিয়ে যেতে চাচ্ছি। এখানে হয়তো অল্প কিছু থাকবে। কিন্তু মূলটা আমরা সরিয়ে দেবো।

‘এখন তো হাতিরঝিল হওয়াতে ওই জায়গাটার গুরুত্বও বেড়ে গেছে। এ জায়গাটা আরও সুন্দরভাবে আমরা গড়ে তুলতে চাই। এখানে একটা প্রজেক্ট আমরা নিয়েছি প্রায় ৩০০ কোটি টাকার উপরে। অর্থাৎ এ শিল্পটা যাতে কোনোভাবে শেষ না হয়ে যায়। এখানে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা দিয়েই আমরা এ কমপ্লেক্সটা করে দেবো, যাতে শিল্প গড়ে ওঠে।’

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে অভিনেত্রী অপু বিশ্বাসের পারফরম্যান্স। ছবি: সাইফুল ইসলাম

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি যখন থেকে সরকারে এসেছি আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা অনেকগুলো কাজ করেছি। যেমন চলচ্চিত্র সংসদ নিবন্ধন আইন ২০১১ প্রণয়ন করেছি জাতীয় চলচ্চিত্র নীতিমালা ২০১৭, যৌথ প্রযোজনায় চলচ্চিত্র নীতিমালা ২০১৭ সেটাও আমরা করে দিয়েছি।

‘সরকারি অনুদানে যাতে সিনেমা হয় সে পদক্ষেপ নেয়া, আর্থিক সংস্থানটা বৃদ্ধি করা সেটাও আমরা করেছি’, যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী জানান, করোনার কারণে বঙ্গবন্ধুর জীবনীনির্ভর চলচ্চিত্রের শুটিং দেশে করা যাচ্ছে না।

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘ভারতের পরিচালক শ্যাম বেনেগাল সিনেমা বানানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। আমাদের দেশের শিল্পীরাই কিন্তু সেখানে অংশগ্রহণ করছে। আমাদের দেশেই শুটিং করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু করোনার কারণে সেটা সম্ভব হলো না। এখন বম্বেতেই শুটিং করবে।’

সিনেমায় প্রতিফলন হোক মুক্তিযুদ্ধের

দেশের সিনেমায় মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ যাতে প্রতিফলিত হয় সে তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কিন্তু ১৫ আগষ্টে জাতির পিতাকে হত্যার পর বিকৃত করা হয়েছে। সেই ইতিহাসটা যাতে সবাই জানে। আমাদের বিজয়ের ইতিহাসটা প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন মনে রাখতে পারে, সেই ধরনের চলচ্চিত্র আরও নির্মাণ হওয়া দরকার।

‘আমাদের শিল্প সংস্কৃতি সেগুলো যেমন থাকবে, আবার বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়েও চলতে হবে। পাশাপাশি আমাদের যে মহান অর্জন, লাখো শহিদের রক্তের বিনিময়ে যে বিজয় আমরা অর্জন করেছি, সেই বিজয়ের ইতিহাস মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, আমাদের আদর্শ-নীতি সেগুলি প্রতিফলিত হওয়া একান্ত দরকার।’

চলচ্চিত্রে মুক্তিযুদ্ধের প্রতিফলন চান প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমি এক জন রাজনীতিবিদ। যত বক্তৃতা, যত কথাই বলি না কেন, একটা নাটক, একটা সিনেমা বা একটা গান-কবিতার মধ্য দিয়ে অনেক কথা বলা যায়, মানুষের অন্তরে প্রবেশ করা যায়; মনের গহীনে প্রবেশ করা যায়। কাজেই এর একটা আবেদন কিন্তু রয়েছে।’

করোনায় জনসচেতনতা তৈরি করার জন্য চলচ্চিত্র শিল্পী কলাকুশলীদের ধন্যবাদও জানান প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি সিনেমা শিল্পকে এগিয়ে নিতে সকলের দায়িত্বও স্মরণ করিয়ে দেন সরকারপ্রধান।

‘এ শিল্প নষ্ট হয়ে যাক, এটা আমরা চাই না। টেলিভিশন আসার পর সিনেমা একটু থমকে যায়। সিনেমা হলেও মানুষ টানতে হবে।

‘সিনেমা সেভাবেই বানাতে হবে যেন পরিবার নিয়ে দেখা যায়। শিশুদের জন্য সিনেমা তৈরি করা একান্ত দরকার। আপনাদের অনেক দায়িত্ব রয়েছে। সেটাও পালন করতে হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর