বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সংস্কৃতি চর্চার কেন্দ্র এখন ভাগাড়

  •    
  • ১৭ জানুয়ারি, ২০২১ ১৩:২৬

ঐতিহ্যবাহী সারদা হলকে ভাগাড়ে পরিণত করেছে সিটি করপোরেশন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ডিও লেটার আর সংস্কৃতিকর্মীদের দাবির পরও সংস্কার হচ্ছে না ভবনটি।

সিলেট শহরের সুরমা নদীর তীরে চাঁদনীঘাট এলাকায় ১৯৩৬ সালে নির্মাণ করা হয় ‘সারদাস্মৃতি ভবন’। সংস্কৃতি চর্চার বিকাশে সিলেটের এক ব্যবসায়ী পরিবার ৩৯ শতক জমিতে কলকাতা ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউটের আদলে মিলনায়তনটি নির্মাণ করে।

এরপর থেকে সিলেটের প্রথম এ মিলনায়তনে গান, নাটকসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। পর্যায়ক্রমে সিলেট পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হয়ে আসছে ভবনটি।

তবে কয়েক বছর ধরে ঐতিহ্যবাহী এ ভবনকে ভাগাড়ে পরিণত করেছে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। সারদা হল প্রাঙ্গণে ফেলে রাখা হয়েছে সিসিকের বিকল গাড়িসহ যন্ত্রাংশ। মিলনায়তনের ভেতরে ফেলে রাখা হয়েছে বইয়ের স্তূপ। এর ফলে সারদা হলে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড। ঐতিহ্যবাহী এই ভবনটি অযত্নে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

এ নিয়ে ক্ষুব্ধ সংস্কৃতিকর্মীরা। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিলেট-১ আসনের সাংসদ ড. একে আব্দুল মোমেন সারদা হল চত্বরের জঞ্জাল সরিয়ে দেয়ার জন্য সিসিক মেয়রের কাছে ডিও লেটার পাঠিয়েছেন।

সিলেট নগরীর বন্দরবাজার এলাকার পুরানো নগর ভবন ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণ শুরু হয় ২০১২ সালে। তখন সুরমা নদীর পারে তোপখানা এলাকায় সিটি করপোরেশন পরিচালিত ‘পীর হাবিবুর রহমান’ পাঠাগারের অফিস অস্থায়ীভাবে স্থানান্তর করা হয়। এ পাঠাগারের বই এনে স্তূপ করে রাখা হয় সারদা হলে।

এ ছাড়া হলের মূল ভবনের পাশের ছোট ভবনগুলোতে সিসিকের কয়েকটি দপ্তরের কার্যক্রম চালু করা হয়। সে সময় সিসিকের কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, নতুন নগর ভবনের কাজ শেষ হলে আবার পাঠাগার চালু হলে সারদা হল সংস্কৃতি চর্চার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে।

২০১৮ সালের জানুয়ারিতে নবনির্মিত ভবন উদ্বোধনের পর স্থায়ী ভবনে নেয়া হয় সিসিকের কার্যক্রম। তবে স্থায়ী ভবনে আসার প্রায় তিন বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত চালু হয়নি পীর হাবিবুর রহমান পাঠাগার। সংস্কৃতি চর্চার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়নি সারদা হলও।

সারদা হল কমপ্লেক্সের ভেতরে এখনও সিসিকের বিকল গাড়িগুলো ফেলে রাখা হয়েছে। পানির গাড়ি, বুলডোজারের যন্ত্রাংশও রাখা হয়েছে আঙিনাজুড়ে। সিসিকের কিছু কর্মচারীর আবাসনের ব্যবস্থাও করা হয়েছে এই চত্বরে।

আর পীর হাবিবুর রহমান পাঠাগারের বই দীর্ঘদিন ফেলে রাখায় বেশির ভাগ বই নষ্ট হয়ে গেছে। মূল ভবনটিও নষ্ট হয়ে গেছে।

সারদা হলের পাশেই সিলেটের আরও দুই ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা কিনব্রিজ ও আলী আমজদের ঘড়ি। এসব স্থাপনার আশপাশ দখল করে গাড়ি পার্কিংয়ের স্থান হিসেবে ব্যবহার করছে সিটি করপোরেশন। এতে সেখানে বেড়াতে যাওয়া পর্যটকরা পড়েন বিপাকে।

প্রায় এক যুগ আগে নদী পারের স্থানটির অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে দৃষ্টিনন্দনভাবে সাজিয়েছিল সড়ক ও জনপথ বিভাগ।

এ বিষয়ে সিলেট সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রজতকান্তি গুপ্ত বলেন, ‘হলটি এক ব্যক্তি সংস্কৃতি চর্চার জন্যই নির্মাণ ও দান করেছিলেন। এ ভবনকে ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা অনৈতিক। এটি রক্ষা করা সবার দায়িত্ব।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভবনটি সংস্কার করে পুরো এলাকা নিয়ে একটি সংস্কৃতিক কমপ্লেক্স নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছি। সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনের কাছেও এ দাবি জানিয়েছি।

‘তারা ভবন পরিদর্শন করে দাবির সঙ্গে একমতও হয়েছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ ব্যাপারে সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে ডিও লেটারও দিয়েছেন।’

রজতকান্তি বলেন, ‘সিলেট শহরে কবি নজরুল অডিটরিয়াম নামে একটি সরকারি মিলনায়তন রয়েছে। এর ভাড়া অনেক বেশি এবং সারা বছর সরকারি নানা অনুষ্ঠান লেগে থাকে। ফলে অনেক সাংস্কৃতিক সংগঠন ওই মিলনায়তন ব্যবহারের সুযোগ পায় না। এ অবস্থায় সারদা হল শিগগিরই সংস্কৃতি চর্চার জন্য উন্মুক্ত করার দাবি জানাচ্ছি।’

এ ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বিধায়ক রায় চৌধুরী বলেন, ‘সিসিকের নিজস্ব কোনো পার্কিং এলাকা নেই। ফলে গাড়ি নদী তীরবর্তী এলাকায় পার্কিং করা হয়। পার্কিং প্লেসের জন্য একটি জায়গা অধিগ্রহণের পরিকল্পনা আছে, যেখানে গাড়ি মেরামতের ব্যবস্থাও থাকবে। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ে ডিপিপি পাঠানো হবে। নিজস্ব পার্কিং প্লেস হয়ে গেলে নদী তীরবর্তী জঞ্জাল আর থাকবে না।’

সরদা হল সংস্কার এবং সংস্কৃতি চর্চার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি মেয়র দেখভাল করছেন। তিনিই এ ব্যাপারে ভালো বলতে পারবেন।’

সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে কলটি রিসিভ হয়নি।

এ বিভাগের আরো খবর