‘এত্ত বছর ব্যাংকের সামনে লোম্ফা সিরিয়ালে দাড়াইয়া ট্যাহা নেওয়া লাগতো। তয় এহন আর হেয়া হইবে না। এহন মোবাইলে ট্যাহা পামু। কোনো জায়গায় ধণ্যা দেওয়া লাগবে না। অটো চইল্লা আইয়া পরবে ট্যাহা।’ বয়স্ক ভাতা অনলাইন প্রক্রিয়া অর্থাৎ নগদ ও বিকাশ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে পাওয়া নিয়ে এমন উচ্ছাস প্রকাশ করেছেন বরিশাল নগরীর ২০নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ৮৬ বছর বয়সী ময়নামতি দাস।
১৪ জানুয়ারী সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের (এসএসএন) বিভিন্ন ভাতা সরাসরি উপকারভোগীদের মুঠোফোনে পাঠানোর উদ্যোগের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে ৮৮ লাখ ৫০ হাজার মানুষ বিকাশ ও নগদ এর মাধ্যমে সরাসরি ভাতা পাবেন।
ময়নামতি বলেন, ‘বয়স্ক ভাতা যেডা পাই ওডা দিয়া কিছু উপকার হয়। আগে পাইতে ঝামেলা ছিলো। তয় এহন হুনছি হাসিনা নাকি মোবাইলেই ট্যাহা পাডাইয়া দেবে ডায়রেক্ট। এডায় সুবিধা হইবে মোগো বেশ। কোনো সিরিয়াল-লাইন নাই।’পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি এলাকার বাসিন্দা ৬৫ বছর বয়সী ছবি রানী সিংহ বলেন, ‘ইউনিয়ন দিয়া মোবাইল নম্বর নিয়া গেছে। এহন নাকি মোবাইলেই ট্যাহা পাডাইয়া দেবে। ব্যাপারডা খুবই ভালো হইছে আমরা যারা বিধবা ভাতা পাই তাগো লাইগা। কারো কাছে যাওয়া লাগবে না। ঘন্টার পর ঘন্টা সিরিয়ালে দাড়ান লাগবে না। শেখ হাসিনার উপর আমরা খুশি এইটা চালু করায়।’বরিশাল নগরীর ২০নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জিয়াউর রহমান বিপ্লব বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় নেয়া উদ্যোগে বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধীদের ভাতা এখন বিকাশ বা নগদ একাউন্টের মাধ্যমে পৌছে দেয়া হবে। এতে কষ্ট লাঘবের পাশাপাশি সরাসরিও টাকাটা পেয়ে যাচ্ছেন তারা। এতে করে আমাদেরও সুবিধা হয়েছে।’সরকারি ভাতা মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) মাধ্যমে দেয়ার নতুন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন ভোলা জেলার সুবিধাভোগীরা।ভোলা সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের আব্দুল রব লাল মিয়া জানান, ‘রোদ-বৃষ্টির মধ্যে ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে ব্যাংকে আমাদের বয়স্ক ভাতার টাকা তুলতে হত। অনেকে অসুস্থ হলেও কেউ আমাদের দিকে ফিরে তাকাতো না।
তিনি বলেন, ‘শুনেছি সরকার নতুন নিয়মে আমাদের টাকা দিবে। ওই নিয়ম চালু হলে আর ব্যাংকের লাইনে দাঁড়াতে হবে না। ঘরে বসেই আমরা মোবাইলে ভাতা পেয়ে যাবে। আমাদের কষ্টের দিন শেষ হবে।’
একই ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের ময়ফুল বেগম জানান, লাইনে দাঁড়িয়ে বিধবা ভাতা তুলতে হয়। অনেক সময় দালালরা আগে পাইয়ে দেবার কথা বলে টাকা নিয়ে হয়রানি করত। প্রধানমন্ত্রী আমাদের কষ্টের কথা চিন্তা করে এখন মোবাইলের মাধ্যমে বিধবা ভাতার টাকা দিবে। আমরা দালালদের হয়রানি থেকে মুক্তি পাবে।
কলাবাগান এলাকার নুরজাহান বেগম (৬৩) বলেন, ‘সরকার যে কয় টাকা বয়স্ক ভাতা দেয় তা এখন সবই আমি আমার মোবাইলে পামু। অন্য কেউ আমার টাকা তুলতে পারবেনা। আমি আমার নাম্বার জমা দিছি।’ঝালকাঠি পৌর কাউন্সিলর নাসিমা কামাল বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্যোগকে আমি সাধুবাদ জানাই, আমি কাউন্সিলর হিসেবে এটা নিশ্চিত হতে পারব যে, আমার এলাকায় যারা বয়স্ক এবং বিধবা ভাতা পাবে তারা আর দালাল দ্বারা প্রতারিত হবে না।’