আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহাল না করলে কঠোর আন্দোলন ও উচ্চ আদালতে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ‘মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম’ কেন্দ্রীয় কমিটি।
শুক্রবার বেলা ১১ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও সমাবেশ থেকে এই হুঁশিয়ারি দেয়া হয়।
৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহাল করে প্রিলিমিনারি থেকে শতভাগ বাস্তবায়ন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সব প্রতিষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের নিয়োগসহ ছয় দফা দাবিতে এই কর্মসূচি পালন করেন তারা।
সেই সঙ্গে সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী ১০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখে মন্ত্রিপরিষদে পাঠানোর যে মতামত ব্যক্ত করেছেন, তার বিরোধিতা করে তারা ১০ শতাংশ মানবেন না বলেও জানান।
সমাবেশে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্মের আহ্বায়ক অহিদুল ইসলাম তুষার লিখিত বক্তব্য পড়েন। বলেন, ১৯৯৭-২০০১ সাল পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও প্রধান উপদেষ্টা প্রধানমন্ত্রী প্রতি-স্বাক্ষরিত সনদ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ৩৩ প্রমাণকে নাই, অর্থাৎ বাতিল করা হয়েছে।
এই সনদ বাতিলের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বিতর্কিত করার গভীর ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। যখন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায়, তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি-স্বাক্ষরিত সনদ বাতিল করা হয় তাহলে এ দেশ কারা চালায়? প্রশ্ন করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চাকরিতে প্রবেশের বয়স শেষ হয়ে যাওয়ার পর ১৯৯৭ সালে এই কোটা মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিয়েছিলেন। কিন্তু তা বাতিলের মাধ্যমে তাকে বিতর্কিত করা হয়েছে। যারা বঙ্গবন্ধু ও তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিতর্কিত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, তাদের কড়া জবাব দিতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নতুন প্রজন্ম প্রস্তুত আছে।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ‘যাদের রক্তের ওপর দিয়ে এ দেশের মানচিত্র ও লাল-সবুজের পতাকা রচিত হয়েছে, তাদের সম্মান করে জাতির পিতা মুক্তিযোদ্ধা কোটা দিয়েছেন। কিন্তু কূটকৌশলে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে রেখে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান, অসম্মান এবং হেয়প্রতিপন্ন করা হয়েছে, যা গভীর ষড়যন্ত্র।’
সমাবেশ থেকে সরকারের কাছে জানানো ছয় দফা দাবি হলো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারসহ বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের অবমাননাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে; সরকারি সব চাকরিতে ৩০% মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহাল, সংরক্ষণ, বিশেষ কমিশন গঠন করে প্রিলিমিনারি থেকে শতভাগ বাস্তবায়ন ও স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা কোটায় সংরক্ষিত পদগুলো বিশেষ নিয়োগের মাধ্যমে পূরণ এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিষ্ঠানগুলোর সব পদে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে; বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও পারিবারিক সুরক্ষা আইন, চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতকরণে বিশেষায়িত মুক্তিযোদ্ধা হাসপাতাল নির্মাণ এবং তাদের কল্যাণে মুক্তিযোদ্ধা ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করতে হবে ও দ্রুত মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাচন দিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের দায়িত্ব হস্তান্তর করতে হবে; রাজাকারসহ স্বাধীনতাবিরোধীদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত, রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ, তাদের বংশধরদের সরকারি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি ও নিয়োগে অযোগ্য ঘোষণা এবং চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে চাকরিচ্যুত করতে হবে; সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী সব অপপ্রচার বন্ধ, কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে স্ব-ঘোষিত রাজাকার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসির বাসভবনে হামলাসহ সব ধরনের অরাজকতা সৃষ্টিকারী স্বাধীনতাবিরোধীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে এবং সরকারি সব চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্মের বয়সসীমা ৩৫ করতে হবে।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন রূপনগর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন মোল্লা, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ তাঁতী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মোজাহারুল ইসলাম সোহেল, মুক্তিযোদ্ধা পেশাজীবী পরিষদের সভাপতি ফজলে রাব্বি রানা, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল, সাধারণ সম্পাদক আল মামুনসহ অনেকে।
আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ২০১৮ সালে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করা হয়।