মিজানুর রহমানের হারিয়ে যাওয়া মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করেছে পুলিশ। সেটি নিতে এসেছেন গাজীপুর মেট্রোপলিটনের টঙ্গী পূর্ব থানায়।
উপপরিদর্শক (এসআই) মো. রাজীব হোসেন টেবিলের ওপর রাখা নীল রংয়ের অ্যান্ড্রয়েড সেট দেখিয়ে বললেন, দেখুন তো এটি আপনার সেই হারিয়ে যাওয়া মোবাইল ফোন কি না।
ঢাকা থেকে আসা মিজানুর রহমানের চিনতে ভুল হয়নি। তার চোখেমুখে আনন্দের ঝিলিক। নিজের চোখকেও যেন বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। সত্যি সত্যিই হারিয়ে যাওয়া ফোনটি তার হাতে তুলে দিচ্ছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।
মিজানুর নিউজবাংলাকে বলেন, ২৪ ডিসেম্বর বিকেল পাঁচটার দিকের ঘটনা। টঙ্গী রেলস্টেশন এলাকায় ঢাকাগামী বাসে উঠছিলেন। তার কাঁধে একটা ব্যাগ ছিল। আর মোবাইলটা ছিল হাতে। একটা বাস এসে থামে। তখন তার পেছনে চার-পাঁচ জনের একটা জটলা। তাদের এক জন মিজানুরের গায়ের সঙ্গে ধাক্কা খান। তিনি ঘুরে দাঁড়াতেই লোকটা সরি বলেন। তিনি ‘ইটস ওকে’ বলে বাসে উঠতে যাওয়ার সময় হাতের ফোন পকেটে রাখেন।
তিনি জানান, বড়জোর ৩০ সেকেন্ড পরই টের পান মোবাইল ফোনটা হাওয়া হয়ে গেছে। একজন সহযাত্রী কল দিলেন, দুইবার রিং হলো। তৃতীয়বার বন্ধ পেলেন। বাসের চালকের সহকারী এসে বললেন, ভাই আপনার ফোন তো পকেটমাররা নিয়ে গেছে।
সহযাত্রীদের কেউ কেউ তাকে বাস থেকে নেমে পুলিশের কাছে অভিযোগ দেয়ার পরামর্শ দেন। বলেন, পুলিশ চাইলে পারবে। এক তরুণ বললেন, ডিডিটাল বাংলাদেশে অ্যান্ড্রয়েড ফোন উদ্ধার করা পুলিশের জন্য কোনো ব্যাপারই না।
হারানো মোবাইল উদ্ধারে পুলিশ সত্যিই সক্ষম
জানতে চাইলে টঙ্গী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. রাজীব হোসেন বলেন, পুলিশ কর্মকর্তারা নানা কাজে ব্যস্ত থাকেন। তারপরও তারা পেশাদার। অভিযোগ পেলে হারানো বা খোয়া যাওয়া মোবাইল ফোন উদ্ধারে আন্তরিকতার সঙ্গে চেষ্টা করেন। তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় ও আইএমই নম্বর সার্চ করে তিনি অনেক মোবাইল ফোন উদ্ধার করে দিয়েছেন।
মিজানুরের মোবাইল ফোন উদ্ধারের বিষয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, তিনি গত ২৮ ডিসেম্বর অভিযোগ পেয়ে অভিযান শুরু করেন। প্রথমে আইএমই নম্বর চারটি মোবাইল কোম্পানির কাছে পাঠান। এরপর একটি কোম্পানি থেকে ওই আইএমইর নম্বরের অ্যাগেইনস্টে সিম ব্যবহারের তথ্য পান। এর সূত্র ধরে রাজধানীর যাত্রাবাড়ি এলাকার সজীব (থার্ড পার্টি) নামের এক জনের কাছে যান। কৌশলে তার কাছ থেকে জেনে নেন মোবাইলটি ব্যবহার করছেন রায়হান নামের এক ছাত্র। তিনি থাকেন বরিশালে।
এসআই রাজীব আরও বলেন, বরিশাল সদর থানার এসআই মহিউদ্দিন তার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। বিষয়টি তাকে জানিয়ে সহযোগিতা চান। বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া রায়হানকে আটক করে থানায় আনা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পারে রিফাত নামের এক জনের কাছে থেকে রায়হান ফেসবুকে কথা চালাচালি করে ১১ হাজার টাকায় সেটটি কেনেন। তার তথ্য খতিয়ে দেখার পর রায়হানকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। আর সেটটি পাঠিয়ে দেয় টঙ্গী থানায়।
এক মাসে উদ্ধার ২৫টি ফোন
এ ব্যাপারে টঙ্গী পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, টঙ্গী পূর্ব থানা-পুলিশ গত এক মাসে প্রায় ২৫টি হারিয়ে যাওয়া বা চুরি হওয়া মোবাইল ফোন উদ্ধার করেছে। এসব মোবাইল ফোন ফিরে পেয়ে মানুষজন অবাক ও খুশি হন। পুলিশের এই তৎপরতা আরও গতিশীল করা হবে।
তিনি জানান, টঙ্গী বাজার, স্টেশন রোড, কলেজ গেট, টিঅ্যান্ডটি বাজার এলাকায় চুরি-ছিনতাই বেশি হচ্ছে। এগুলো প্রতিরোধে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের নির্দেশে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হচ্ছে। তিনি আশা করছেন, তখন চুরি-ছিনতাই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।