যুবলীগের কম্পিউটার অপারেটর থেকে দপ্তর সম্পাদক বনে যাওয়া কাজী আনিসুর রহমান ও তার স্ত্রী সুমি রহমানের বিরুদ্ধে দুই মামলায় অভিযোগপত্র অনুমোদন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন।
এক মামলায় বলা হয়, কাজী আনিসু অবৈধ ব্যবসা ও অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে নিজ নামে ১২ কোটি ৮০ লাখ লক্ষ ৬০ হাজার ৯২০ টাকা ও স্ত্রী সুমি রহমানের নামে এক কোটি ৩১ লাখ ১৬ হাজার ৫০০ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন।
অন্য মামলায় বলা হয়, সুমি রহমান ২ কোটি ৬১ লাখ ৬২ হাজার ২১৮ টাকা আয়ের উৎসের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ সম্পদ অর্জন করেছেন।
২০১৯ সালে রাজধানীতে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে কাজী আনিসের নাম আসে। এরপর তাকে বহিষ্কার করে যুবলীগ। তার আগেই তিনি পালিয়ে যান।
বৃহস্পতিবার কমিশন সচিব নোয়ার হোসেন হাওলাদার দুই মামলায় অভিযোগপত্র অনুমোদনের তথ্য জানিয়ে বলেন, তিনি দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে নিজ নাম ও তার প্রতিষ্ঠানের নামে ২৫ টি হিসাবে ২০১১ সাল থেকে ১২৯ কোটি ৯১ লাখ ১৭ হাজার ২১৩ টাকা জমা করেন এই যুবলীগ নেতা। যার মধ্যে ১২৩ কোটি ৫৪ লাখ ৪৫ হাজার ৮৪৮ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সচিব বলেন, আয়ের অবৈধ উৎস গোপন বা আড়াল করার অসৎ উদ্দেশ্যে তা স্থানান্তর, হস্থান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে অবস্থান গোপন করে কাজী আনিস মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের প্রথমিক সত্যতা পাওয়ায় দুদকের উপ পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান এই দম্পতির বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ২৯ অক্টোবর দুটি মামলা করেন।
তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের প্রেক্ষিতে কাজী আনিসের দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় অভিযোগপত্র অনুমোদন করা হয়।
গোপালগঞ্জের মোকসেদপুরে কাজী আনিসের জব্দ করা ভবন
২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে র্যাবের অভিযানে ঢাকায় ক্যাসিনো কারবারে যুবলীগ নেতাদের সম্পৃক্ততার তথ্য বেরিয়ে আসে। সে সময় কাজী আনিসের কয়েক বছরের মধ্যে বিপুল সম্পদের মালিক হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়। পরে তাকে বহিষ্কার করে যুবলীগ।
তার ঢাকার কলাবাগানের পাঁচতলা একটি ভবন, দুটি ফ্ল্যাট এবং পাঁচটি দোকান, গোপালগঞ্জের মোকসেদপুরের বাড়ি-পেট্রোল পাম্পসহ বিপুল পরিমাণ জমিও জব্দ করা হয়েছে।
মোকসেদপুরের বোয়ালিয়ায় বিলসাবহুল বাড়ি, একটি পেট্রোল পাম্প, ৩০ কোটি টাকার ১৫ বিঘা জমি ও কেরাণীগঞ্জে ৪০ কাঠা জমি পেয়েছে দুদক। তার ব্যাংকে ৫০ কোটি টাকা লেনদেনের তথ্যও মিলেছে।
যুবলীগের কেন্দ্রীয় অফিসে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে ২০০৫ সালে কাজ শুরু করেন। সে সময় সংগঠনের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরীর ঘনিষ্ঠার সুবাদে ২০১২ সালে তাকে সংগঠনের উপ-দপ্তর সম্পাদক করা হয়। তখন যুবলীগের দপ্তর সম্পাদকের পদ খালি ছিল। ছয় মাস পর তাকে সে দায়িত্বে দেয়া হয়।
২০১৯ সালের অক্টোবরে আনিস ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ‘ক্যাসিনোর কারবারের মাধ্যমে’ ঘোষিত আয়ের বাইরে ১২ কোটি ৮০ লাখ টাকার সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগে মামলা করা হয়।