বলাৎকারকে ‘নারী ধর্ষণ’ অপরাধের পাশাপাশি ‘পুরুষ ধর্ষণ’ অপরাধ হিসেবে যুক্ত করতে হাইকোর্টে আবেদন হয়েছে।
সমাজকর্মী সৌমেন ভৌমিক, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী তাসমিয়া নূহাইয়া আহমেদ এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক মাসুম বিল্লাহ আবেদনটি করেছেন।
রিটে দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারায় সংশোধন এনে ‘নারী ধর্ষণ’র অপরাধের পাশাপাশি ‘পুরুষ ধর্ষণ’র বিষয়টিকে অপরাধ হিসেবে যুক্ত করার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ৩৭৫ ধারা সংশোধনের অগ্রগতির প্রতিবেদন জানানোর নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
রিটে বিবাদী করা হয়েছে আইন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব ও পুলিশের আইজিকে।
রিটের পক্ষের আইনজীবী তাপস কান্তি বলেন, ‘দেশে হঠাৎ করেই বলাৎকার তথা পুরুষ ধর্ষণের অপরাধ বেড়ে চলেছে। এ ধরনের নির্যাতনকে ধর্ষণের অপরাধ হিসেবে বিচার করা যাচ্ছে না। এ কারণে দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারায় সংশোধন চেয়ে আদালতে রিট করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে এর শুনানি হতে পারে।’
- আরও পড়ুন: বলাৎকার: সন্তানকে মাদ্রাসা থেকে স্কুলে
বাংলাদেশে বিশেষ করে কওমি মাদ্রাসায় ছেলে শিশুদের বলাৎকারের সমস্যাটি নিয়ে ইদানীং আলোচনা তুঙ্গে।
মাদ্রাসায় এ রকম যৌন নির্যাতনের অভিযোগ পুরনো। এ নিয়ে সমাজে ফিসফাস থাকলেও প্রকাশ্যে আলোচনা হয়েছে কমই। তবে সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে, সভা-সমাবেশে এ নিয়ে কথা উঠছে; তথ্যচিত্র প্রদর্শন হচ্ছে।
- আরও পড়ুন: ফিসফাস ছেড়ে বলাৎকার নিয়ে আওয়াজ
দেশে অপরাধ, নির্যাতন নিয়ে সারা বছর নানা ধরনের জরিপ প্রকাশিত হলেও এতদিন মাদ্রাসায় কতসংখ্যক বলাৎকারের খবর গণমাধ্যমে এসেছে তা জানা যায়নি। কারণ এ ব্যাপারে কোনো লিপিবদ্ধ তথ্য নেই।
তবে গত নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদগুলো সংকলন করে ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ’ নামে একটি সংগঠন জানতে পেরেছে, ওই ৩০ দিনে ৪০টি বলাৎকারের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে দুটি ঘটনায় মারা গেছে দুটি শিশু। একটি শিশু লাঞ্ছনা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে।
সংগঠনটি বলাৎকারবিরোধী ব্যাপক প্রচারে নেমেছে। সম্প্রতি তারা রাজধানীর বিভিন্ন মসজিদে ও মাদ্রাসায় বলাৎকারের সমস্যাটি নিয়ে লিফলেট বিতরণ করেছে।
মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ বলাৎকার নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালাচ্ছে। তারা বিভিন্ন মসজিদেও লিফলেট বিতরণ করছেইদানীং অভিভাবকরা এই সমস্যাটি নিয়ে প্রায়ই মুখ খুলছেন। ছেলে শিশুকে বলাৎকারের ঘটনায় প্রায় নিয়মিত মামলা হচ্ছে। আসামিও গ্রেপ্তার হচ্ছে।
তবে বিচারের ক্ষেত্রে একটি সমস্যা তৈরি হয় আইনি জটিলতায়। কারণ, দণ্ডবিধিতে ধর্ষণের সংজ্ঞা হিসেবে যা উল্লেখ করা হয়েছে, তাতে ছেলে শিশুর বিষয়টি উল্লেখ নেই। এ কারণে ধর্ষণ মমলায় এর বিচার করা যায় না।
- আরও পড়ুন: মাদ্রাসায় বলাৎকার নিয়ে মসজিদে লিফলেট
দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারায় বলা হয়েছ, পাঁচটি অবস্থায় কোনো স্ত্রী লোকের সঙ্গে যৌনসঙ্গম করলে তা ধর্ষণ বলে পরিগণিত হবে। প্রথমত: স্ত্রীলোকটির ইচ্ছার বিরুদ্ধে, দ্বিতীয়ত: সম্মতি ব্যতিরেকে, তৃতীয়ত: মৃত্যু বা জখমের ভয় প্রদর্শন করে সম্মতি আদায় করা হলে, চতুর্থত: স্ত্রীলোকটির সম্মতিক্রমেই, যেক্ষেত্রে পুরুষটি জানে যে, সে স্ত্রীলোকটির স্বামী নয়, এবং পুরুষটি ইহাও জানে যে, স্ত্রীলোকটি তাকে এমন অপর একজন পুরুষ বলে ভুল করেছে, যে পুরুষটির সঙ্গে সে আইন সম্মতভাবে বিবাহিত হয়েছে বা বিবাহিত বলে বিশ্বাস করে। পঞ্চমত: সম্মতি থাকলেও যদি মেয়েটির বয়স ১৪ বৎসরের কম হয়।
অবশ্য এতে বলা আছে, কোনো পুরুষের কর্তৃক নিজ স্ত্রীর সঙ্গে যৌন সঙ্গম ধর্ষণ বলে পরিগণিত হবে না, যদি স্ত্রী ১৩ বছরের কম হয়।
১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারার বৈবাহিক ধর্ষণ সম্পর্কিত বিধানের বৈধতা নিয়ে ১ নভেম্বর রিট করেছিল চারটি সংগঠন। সংগঠনগুলো হলো বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), ব্র্যাক, নারীপক্ষ এবং মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন।
পরে ৩ নভেম্বর রিটের শুনানি নিয়ে রুল জারি করে আদালত। সেই রুল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।