জঙ্গি জীবন ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে বাংলাদেশের র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) কার্যালয়ে আত্মসমর্পণ করেছেন নয় জঙ্গি সদস্য।
তাদের আত্মসমর্পণ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার ঢাকার উত্তরায় র্যাব সদর দপ্তরে আয়োজিত ‘নব দিগন্তের পথে’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
আত্মসমর্পণ করা নয় জঙ্গি সদস্য হলেন- সিলেটের শাওন মুনতাহা ইবনে শওকত, ডা. নুসরাত আলী জুহি, কুমিল্লার আবিদা জান্নাত আসমা অরফে তারাদ অরফে রামিসা, চাঁদপুরের মোহাম্মদ হোসেন অরফে হাসান গাজী, মো. সাইফুল্লাহ, ঝিনাইদহের মো. সাইফুল ইসলাম, চুয়াডাঙ্গার মো. আবদুল্লাহ আল মামুন, মো. সাইদুর রহমান ও কুমিল্লার আবদুর রহমান সোহেল।
তাদের মধ্যে ছয় জন জেএমবি সদস্য ও তিন জন আনসার আল ইসলামের।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ কখনও জঙ্গিবাদকে আশ্রয় প্রশ্রয় দেয় না। প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন জিরো টলারেন্সের কথা। এটা আমরা কখনও বলি না জঙ্গিবাদকে মূলোৎপাটন করেছি। বলেছি জঙ্গিবাদকে আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি।’
বাংলাদেশ জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে সাফল্যের পরিচয় দিয়েছে বলে দাবি কামালের। বলেন, ‘আমি অনেক দেশেই গিয়েছি। জিজ্ঞাসিত হয়েছি যে, তোমরা কিভাবে জঙ্গিবাদকে মোকাবিলা করতেছো? বলেছি, বাংলাদেশের জনগণ কখনও জঙ্গিবাদকে সমর্থন করে না বলেই আমরা জঙ্গিবাদকে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি।’
মন্ত্রী জানান, বিষয়টি এক সময় চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছিল। প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় সিদ্ধান্তে সবার সহায়তায় পরিস্থিতি মোকাবিলা করা গেছে।
তিনি বলেন, ‘একের পর এক যখন জঙ্গিরা উত্থাপন ঘটাচ্ছিল তখন আমরা সবাই চিন্তিত হয়ে পড়েছিলাম। তখন প্রধানমন্ত্রী সারাদেশের মানুষকে, কৃষক, শ্রমিক-শিক্ষকসহ দলমত ধর্ম নির্বিশেষ মেহনতি জনতাকে ডাক দিয়েছিলেন ঘুরে দাঁড়াবার জন্য। সবাই ঘুরে দাঁড়িয়েছে, মানববন্ধন হয়েছে, সমাবেশ হয়েছে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে। স্কুলের ছাত্রটিও ঝুলিয়েছিল, আমরা জঙ্গিবাদকে সমর্থন করি না।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, সরকার শুধু জঙ্গিবাদ কঠোর হস্তে দমনই করছে না। পাশাপাশি ডি-রেডিকালাইজশনের মাধ্যমে তাদের ভুল পথ থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনারও চেষ্টা চলছে।
জঙ্গি জীবন ছেড়ে মায়ের কোলে ফেরা এক তরুণ। ছবি: নিউজবাংলা
মন্ত্রী বলেন, ‘আজ দেখছেন যারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরছেন তাদের ট্রাক্টর, কৃষিজ উপকরণ, নগদ টাকা দিচ্ছে র্যাব।
‘যারা বিভ্রান্ত হয়েছিল, পথ হারিয়েছিল, যারা ভুল পথে ভুল আদর্শ বুকে নিয়েছিল তারা আজ বাবা মার কাছে ফিরেছেন, বাবা মার মুখে হাসি ফুটিয়েছেন যা অনেক দিন পর দেখছি। ক্যামেরাবন্দি এ দৃশ্য দেখবে দেশের মানুষ। এ জন্য র্যাবকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি, এ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’
আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের দাবি, উন্নয়নের রোল মডেলের সঙ্গে সঙ্গে জঙ্গিবাদ দমনেও রোল মডেল হচ্ছে বাংলাদেশ।
র্যাব মহাপরিচালক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের সভাপতিত্বে জঙ্গি আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার।
এ ছাড়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রফেসার ও সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের পরিচালক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ, এফবিসিসিআই এর শেখ ফজলে রহিম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের প্রধান খন্দকার ফারজানা রহমান, ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক ইত্তেফাকের সিটি এডিটর আবুল খায়ের।