রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে আগামী ১৯ জানুয়ারি ঢাকায় বাংলাদেশ, চীন ও মিয়ানমারের সচিব পর্যায়ের ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হতে যাচ্ছে।
বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। চীন ও মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিবদের নিজ নিজ দেশের পক্ষে অংশ নেয়ার কথা রয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বুধবার বিকেলে রাজধানীতে পৌষ উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
রোহিঙ্গারা ৮০ দশক থেকেই প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আসতে থাকে। তবে সবচেয়ে বড় স্রোতটা আসে ২০১৭ সালের আগস্টের পর। সব মিলিয়ে কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। এদের মধ্যে এক লাখকে বাংলাদেশ ভাসানচরে স্থানান্তর করতে চায়। এরই মধ্যে দুই বারে দুই হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে সেখানে নেয়া হয়েছে।
তবে বাংলাদেশ চায় রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যাক। এ জন্য দেশটির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি সই হয়েছে। কিন্তু নানা কারণে মিয়ানমার পিছিয়ে আসে আর এ নিয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশ নানাভাবেই বিরক্তি প্রকাশ করছে।
মিয়ানমারের ওপর চীনের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে এবং সাম্প্রতিক উদ্যোগে এই দেশটি যুক্ত হওয়ায় ঢাকা এবার প্রত্যাবাসন শুরুর ব্যাপারে আগের চেয়ে বেশি আশাবাদী।
পৌষ উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, গত ৯ বা ১০ জানুয়ারি এই ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। চীনই এই তারিখ ঠিক করেছিল। বাংলাদেশও রাজি ছিল। কিন্তু পরে চীন এই বৈঠক পিছিয়ে দেয়।
পেছানোর একটি কারণ হলো চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এখন মিয়ানমারে অবস্থান করছেন। সে কারণে ১৯ জানুয়ারি তারিখ ঠিক হয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আশা করি ফলপ্রসূ কিছু হবে।’
তবে মিয়ানমার নিয়ে এখনও সন্দিহান মন্ত্রী।
গত বছরের ২০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত এমন বৈঠকের কথা উল্লেখ করে মোমেন বলেন, ‘ওই বৈঠকে আমার মনে হয় কিছু প্রোগ্রেস হয়েছিল। কিন্তু তারা (মিয়ানমার) তো কোনও উত্তর দেয় না। শুধু শোনে এবং বলে পরে জানাবে।
‘তখন তারা বলেছিল মিয়ানমারের (বার্মিজ) ভাষায় বুকলেট করবে এবং কিছু আগ্রহ দেখিয়েছিল। এর পরে কোভিড ও মিয়ানমারের নির্বাচনের অজুহাতে আর বৈঠক হয়নি।’
মন্ত্রী জানান, বাংলাদেশ মিয়ানমারের কাছে সাড়ে আট লাখ রোহিঙ্গার তালিকা দিয়েছে। কিন্তু মিয়ানমার কম সংখ্যক যাচাই বাচাই করেছে। সেটাও তারা করছে অত্যন্ত ধীরগতিতে।
‘মাত্র ৪২ হাজার তারা যাচাই বাছাই করেছে তারা। এখানে আন্তরিকতার বড় অভাব আছে’- বলেন মন্ত্রী।
মোমেন জানান, যাদের যাচাই-বাছাই করা হয়েছে, তাদের মধ্যে বেশ কিছু রোহিঙ্গাকে মিয়ানমার নিজ দেশের বাসিন্দা বলে মেনে নিতে রাজি হয়নি।
মন্ত্রী বলেন, ‘একটি অসুবিধা হচ্ছে, তারা বিচ্ছিন্নভাবে যাচাই-বাছাই করছে। যেমন বাবা ও মেয়েকে যাচাই-বাছাই করেছে, কিন্তু স্ত্রীকে করেনি। এ অবস্থায় তারা যাবে কেন?’
সাড়ে আট লাখ রোহিঙ্গা যারা সম্প্রতি এসেছে তাদের বায়োমেট্রিক হয়েছে এবং এর আগে আসা রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা সেগুলোও তৈরি করা শুরু করেছি। কারণ এগুলো না থাকলে পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র তারা সংগ্রহ করতে পারে।’