বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নারীর কাজি হতে নিষেধ: ৯০ নাগরিকের প্রতিবাদ

  •    
  • ১৩ জানুয়ারি, ২০২১ ২১:৪৩

বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, ‘হাইকোর্টের নির্দেশনা: নারীরা বিয়ের কাজি হতে পারবে না’– শিরোনামে একটি প্রতিবেদন গত ১০ জানুয়ারি দেশের বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।

‘নারীরা নিকাহ রেজিস্ট্রার (কাজি) হতে পারবে না’, হাইকোর্টের এই রায় নারী সমাজের জন্য অপমানজনক বলে মনে করছেন ৯০ জন নাগরিক।

এ রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি প্ল্যাটফর্ম গঠন করা হয়। বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়ে বলা হয়, সেখানে ওই ৯০ জন স্বাক্ষর করেছেন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘হাইকোর্টের নির্দেশনা: নারীরা বিয়ের কাজি হতে পারবে না’– শিরোনামে একটি প্রতিবেদন গত ১০ জানুয়ারি দেশের বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।

‘হাইকোর্টের এমন নির্দেশনার খবরে আমরা সাধারণ নাগরিকরা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়েছি। হাইকোর্টের এমন নির্দেশনা কোনোভাবেই ন্যায্য ও সংবিধানসম্মত নয় বলে আমরা মনে করি। এ নির্দেশনা একচ্ছত্র পুরুষাধিপত্যদুষ্ট এবং অনেকাংশেই পশ্চাৎপদ ধারণার অনুবর্তী। আমাদের বাংলাদেশের সংবিধান নারী, পুরুষসহ সব জেন্ডার, সব ধর্মের এবং সব বর্ণের সমঅধিকার ও মর্যাদার সুরক্ষা দিয়েছে। কিন্তু এ নির্দেশনা সেই সাংবিধানিক নীতিকে পুরোপুরিই ভূলুণ্ঠিত করেছে।’

দিনাজপুরের এক নারী নিকাহ রেজিস্ট্রার প্রার্থীর রিট খারিজ করে বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই রায় দেয়।

রায়ের পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট বলেছে, ‘নারীরা মাসের একটি নির্দিষ্ট সময় ফিজিক্যাল ডিসকোয়ালিফেশনে থাকেন। সেক্ষেত্রে মুসলিম বিবাহ হচ্ছে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং আমাদের দেশে বেশির ভাগ বিয়ে পড়ানো মসজিদে হয়ে থাকে। ওই সময়ে নারীরা মসজিদে প্রবেশ করতে পারেন না এবং তারা নামাজও পড়তে পারেন না। সুতরাং বিয়ে যেহেতু একটা ধর্মীয় অনুষ্ঠান, সেহেতু এই বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে নারীদের দিয়ে নিকাহ রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পালন সম্ভব নয় ‘ এই পর্যবেক্ষণ দিয়ে হাইকোর্ট এ-সংক্রান্ত রিট মামলার ওপর জারি করা রুল খারিজ করে দিয়েছেন। ফলে নারীরা নিকাহ রেজিস্ট্রার (কাজি) হতে পারবেন না।’

মঙ্গলবার নারীর প্রতি সংহিসতা রোধে সংগঠন ‘আমরাই পারি জোট’ আরেক বিজ্ঞপ্তিতে বলে, ৩০ লাখ শহিদের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের সংবিধানের ২৯ (২) অনুচ্ছেদে স্পষ্টত উল্লেখ রয়েছে, কেবল ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী, নারী-পুরুষভেদে বা জন্মস্থানের কারণে কোনো নাগরিক প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের অযোগ্য হবেন না, কিংবা সেক্ষেত্রে তার প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন করা যাবে না। বিয়ে নিবন্ধন করানো একটি রাষ্ট্রীয় আইনগত কাজ। এক জন সরকারি লাইসেন্সপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার বা কাজিই এই বিয়ের নিবন্ধন কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেন। তাই বিয়ে নিবন্ধন করার কাজে নারীকে নিষেধ করার নির্দেশনাটি বাংলাদেশের সংবিধানকে লঙ্ঘন করেছে এবং একই সঙ্গে মানবাধিকার সনদ, সিডো সনদ এবং জাতীয় নারী উন্নয়ননীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

এতে বলা হয়, নারীর মাসিক বা ঋতুস্রাব বিয়ের কাজি হওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায়, আদালতের এই পর্যবেক্ষণ অযৌক্তিক ও হাস্যকর। কারণ মাসিক প্রাকৃতিক নিয়মে সংঘটিত একটি শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। সন্তান জন্মদানের প্রক্রিয়াটি নারীর মাসিকের সঙ্গে ‍যুক্ত, যা সভ্যতাকে এবং মানব প্রজন্মকে টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে অত্যাবশ্যকীয়।

মাসিক নিয়েই নারীরা ঘরের কাজ করেন, অফিসের দায়িত্ব সামলান, ভ্রমণ করেন এবং সরকারি ও বেসরকারি দাপ্তরিক কাজ সম্পাদন করেন।

‘বিভিন্ন সংবাদপত্র মারফত আমরা জেনেছি, রায়ের পর্যবেক্ষণে নারী নিকাহ রেজিস্টার হিসেবে রাতে সব জায়গায় যেতে পারবে না, তাও উল্লেখ করা হয়েছে। নারীর রাতে চলাফেরায় যে প্রতিবন্ধকতা বিদ্যমান, তার দায় নারীর নয়। বরং নারীর রাতের ভ্রমণ যেন নিরাপদ হয় সে দায়িত্ব রাষ্ট্রের। তাই এই নির্দেশনা দিয়ে মূলত নারীর বিরুদ্ধে বিদ্যমান সামাজিক কূপমণ্ডূকতাকে প্রশ্রয় দেয়া হয়েছে’, বলেন স্বাক্ষরকারীরা।

হাইকোর্টের এই নির্দেশনা বাংলাদেশের নারী আন্দোলনের অগ্রযাত্রাকে পশ্চাৎপদতার দিকে ঠেলে দিয়েছে উল্লেখ করে আমরাই পারি জোট বলছে, এই রায় প্রমাণ করে, দেশে এক জন নারী রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত থাকলেও বিয়ের কাজির মতো রাষ্ট্রীয় পেশাতে তার স্থান হয় না। তাই এই বিষয়ে আমরাই পারি জোট সরকার এবং বিচার বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। এই নির্দেশনাকে পুনর্বিবেচনার মাধ্যমে বিয়ে নিবন্ধনের রাষ্ট্রীয় কাজে নারীর অংশগ্রহণকে বৈধ করা এবং ধর্মভিত্তিক বিবাহ নিবন্ধন আইন বাতিল করে অভিন্ন বিবাহ নিবন্ধন আইন প্রবর্তনের দাবি জানাচ্ছে।

২০১৪ সালে দিনাজপুরের ফুলবাড়িয়া পৌরসভার ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নিকাহ রেজিস্ট্রার (কাজি) হিসেবে তিন জন নারীর নাম প্রস্তাব করে উপদেষ্টা কমিটি। তিন সদস্যের ওই প্যানেলের বিষয়টি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।

এরপর ২০১৪ সালের ১৬ জুন আইন মন্ত্রণালয় ‘বাংলাদেশের বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে নারীদের দ্বারা নিকাহ রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়’ মর্মে চিঠি দিয়ে তিন সদস্যের প্যানেল বাতিল করে।

পরে আইন মন্ত্রণালয়ের ওই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন নিকাহ রেজিস্ট্রারের প্যানেলের এক নম্বর ক্রমিকে থাকা আয়েশা সিদ্দিকা। সেই রিটের শুনানি নিয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের চিঠি কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে হাইকোর্ট।

গত বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি রুল খারিজ করে রায় দেয় হাই কোর্ট। তাতে আইন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তই বহাল রাখা হয়। গত ৯ জানুয়ারি শনিবার প্রকাশিত হয় পূর্ণাঙ্গ রায়।

প্রতিবাদলিপিতে স্বাক্ষর করেছেন

লেখক ও গবেষক দিলশানা পারুল, সাংবাদিক ও অ্যাক্টিভিস্ট ইশরাত জাহান ঊর্মি, বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্রের সীমা দত্ত, নারী সংহতির কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক নাসরিন আকতার সুমি, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শর্মি হোসেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সহযোগী অধ্যাপক নাসরিন খন্দকার, সাংবাদিক সাইদিয়া গুরলুখ, লেখক ও গবেষক মাহা মির্জা, চলচ্চিত্র নির্মাতা সাকি ফারজানা অ্যাক্টিভিস্ট ও সামাজিক উদ্যোক্তা তাসলিমা মিজি, লেখক, আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী প্রমা ইশরাত, উন্নয়নকর্মী তামান্না রহমান, অ্যাকটিভিস্ট ফেরদৌস আরা রুমী, স্পেস এর সম্পাদক শিমুল খান, উন্নয়নকর্মী পূরবী তালুকদার, সহকারী কমিশনার শামিমা আক্তার জাহান, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ও পরিবেশ বার্তার সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জ্বল, কবি রহমান মুফিজ, কবি, সাংবাদিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আফরোজা সোমা, কবি ও সাংবাদিক সৈকত আমীন, শিল্পী শৈলী আখন্দ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক শোভন রহমান, ডেফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র লেকচারার আশিকুর রহমান, অ্যাক্টিভিস্ট লিলিথ অন্তরা, লেখক, অনুবাদক ও গবেষক মুহাম্মদ ইরফানুর রহমান, লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট আরিফ রহমান, রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য দিদারুল ভূঁইয়া, লেখক ও গবেষক চারু হক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মী হাসান আজারকাত, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক অ্যাক্টিভিস্ট মাহমুদ মামুন, শিক্ষক সুস্মিতা চক্রবর্তী, নাট্যকর্মী সুরভী রায়, নাফিয়া ফারজানা অমিয়া, মো. হারানুজ্জামান, মো. রিয়াজ উদ্দীন আহমেদ, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার নীলিমা তানজিন সুমি, ফাইয়াজ ফিরোজ, দিলারা, ইফফাত, চিকিৎসক জোসেফ এলিজাবেথ, ডেন্টিস্ট মাহাবুব, ডেন্টাল সার্জন নাজমুস সাকিব, বীথিকা, মানবাধিকারকর্মী তুহিন চাকমা, শৈলী জারিন তাসনিম, আইনুল হক, চিত্রশিল্পী মোরসালিনা আনিকা, চিত্রশিল্পী ইশতিয়াক আহমেদ, মানবাধিকারকর্মী শরীফ হাসান, সানন্দা দেব, নারীর স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফোরাম আহ্বায়ক মারজিয়া প্রভা, ফারিয়া, রুকাইয়া সুলতানা. সাইফ রাসেল, অ্যাক্টিভিস্ট মিতা নাহার, সানজিদা হৃদি, মো. আসিফ ই আলম, আনিকা তাবাসসুম জিনিয়া, তুরানুর ইসলাম, মো. জুবায়ের, শিক্ষার্থী মেহনাজ নিগার, হোসেইন আহমেদ, জাকিয়া বেগম দোলা, সুমনা খান কণা, কবি ও ব্যাংকার মো. শাহিদা খাতুন, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার প্রতীক নাগ, শিক্ষার্থী শ্রাবণী ভট্টাচার্য্য, ব্যাংকার ফারহানা পারভীন, মাসিয়াত জাহিন, সুমনা শারমীন শম্পা, রাজনৈতিক কর্মী উৎসব মোসাদ্দেকসুমাইয়া বিনতে সেলিম, অ্যাক্টিভিস্ট সাকির ইব্রাহিম মাটি।

প্রকৌশলী কানিজ ফাতেমা, গণসংহতি আন্দোলনের কর্মী হাসান মারুফ রুমী, মো. আবু সাঈদ দিপু, সাংবাদিক হৃদয় দাশ শুভ, সমাজকর্মী স্বাক্ষর অধিকারী, সামিরা ফারজানা, সুলতানা তৃষা, মাইমুনা আক্তার, সেগুফতা মেহজাবিন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষার্থী কাজী তাজনেহেল সুলতানা অহনা, উমামা ফাতেমা, সাদিয়া বিনতে সেলিম, শিক্ষার্থী, প্রান্ত প্রতিম চৌধুরী, সৃষ্টু ঘোষ, নিয়াজুল, শিক্ষার্থী, আহমেদ এবং মিডিয়াকর্মী তির্থক আহসান রুবেল।

এ বিভাগের আরো খবর