রাজধানীর কলাবাগান এলাকায় স্কুলছাত্রীকে ‘ধর্ষণের পর হত্যার’ ঘটনায় দ্রুত ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়েছেন সেই ছাত্রীর মা।
বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি জানান।
তিনি বলেন, ‘৭ তারিখে আমার মেয়েকে অপহরণ করে দিহান ও তার সঙ্গীরা। তার বাসায় নিয়ে আমার মেয়েকে অমানবিক নির্যাতন, ধর্ষণ এবং হত্যা করে আমাকে ফোন করা হয়। দিহান আমাকে ফোন করে জানায় আমার মেয়ে সেন্সলেস হয়ে গেছে। আমি হসপিটালে এসে দেখি দিহানসহ তার তিন সঙ্গী বসে আছে। আমার পা জড়িয়ে ধরে বলে আন্টি আমাকে বাঁচান। যখন আমার মেয়েকে দেখতে চাই, তখন আমাকে দেখতে যেতে দেয়া হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ডাক্তার আমাকে জানায় সে মারা গেছে। পরে দিহানকে জিজ্ঞেস করি, আমার মেয়েকে তোমরা কোথায় পেলে, কেন মারা গেল? তখন সে আমাকে বলে, আমরা চার জন ওকে আমাদের বাসায় নিয়ে যাই এবং সেখানে সে সেন্সলেস হয়ে যায়। তখন আবার জিজ্ঞেস করি, বাসায় আর কোনো মেয়ে ফ্রেন্ড ছিল না বা তোমার বাবা-মা ছিল না? তখন বলে, না আমরা চার জনই তাকে নিয়ে গিয়েছিলাম। এরপর আমার বুঝতে বাকি থাকে না সেখানে কী হয়েছে।’
ওই ছাত্রীর মা বলেন, ‘আমরা যেভাবে মামলাটি করতে চেয়েছি পুলিশ সেভাবে মামলাটি নেয়নি। একটি মহল দিহান ও তার সঙ্গীদের আড়াল করার এবং আমার মেয়ের চরিত্র হননের চেষ্টা করছে। বলা হচ্ছে, আমার মেয়ের সাথে দিহানের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এটি একদমই ঠিক না। কিছু কিছু কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার বিকৃত করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেটি প্রচার করা হয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে স্কুলছাত্রীর বাবা বলেন, ‘মেয়েকে প্রতি মুহূর্তে আমি আমার মায়ের মতো করে রাখছি। আমার পারমিশন ছাড়া অথবা আমার সাথে কথা না বলে সে কোথাও কিছু করত না। আগামীতে প্রতি মুহূর্ত কী করবে সেটা আমার সাথে কথা বলেই করবে, আমি আমার মেয়েকে সেভাবে গড়ে তুলেছি। এভাবে ওইদিনও যখন সে বিপদে পড়েছে বা কোনো ডিসিশন নিতে হবে ভেবেছে তখন আমাকে জানাতে ফোন করেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমার কষ্টের বিষয় ওই মুহূর্তে আমি কলটা ধরতে পারিনি। যদি সে সময় কলটি ধরতে পারতাম তাহলে হয়ত এত বড় দুর্ঘটনা ঘটতো না। আমার একটাই চাওয়া, আমি যেটা হারিয়েছি এটা যেন আর কোনো বাবা-মা কখনও না হারায়।’
সংবাদ সম্মেলনে পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে আরও কিছু দাবি জানান সেই ছাত্রীর মা।
এগুলো হলো ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে ন্যায় বিচার করা, মামলাটি দ্রুত বিচার আইনে করা, দিহান ও তার সঙ্গীদের বিচারের আওতায় আনা, একটি স্বচ্ছ ডিএনএ পরীক্ষা করা এবং পরিবার যেন কোনো অযাচিত অসুবিধার শিকার না হয় তার ব্যবস্থা করা।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ‘দিহানের এই পথে যাওয়ার পেছনে পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের দায় মেনে নিতে হবে। হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন নিপীড়ন অভিযোগ সেল গঠন করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে উদ্যোগ নিতে হবে। চিকিৎসক বলছেন, ময়নাতদন্তে সেই ছাত্রীকে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু তার মায়ের দেখানো একটি ছবিতে দেখা গিয়েছে পিঠে কালশিটে দাগ রয়েছে। যা ময়নাতদন্তের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়নি।’
বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) কলাবাগান এলাকায় ওই স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ ওঠে। ছাত্রীর বাবার করা হত্যা মামলায় ফারদিন ইফতেখার দিহান নামে এক তরুণকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে শুক্রবার আদালতে পাঠায় পুলিশ। সেখানে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন দিহান।
দিহানের তিন বন্ধুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ আটক করলেও শুক্রবার দুপুরে মুচলেকা দিয়ে পরিবারের জিম্মায় তাদের ছেড়ে দেয়া হয়।
পুলিশ জানায়, ওই তিন বন্ধু দিহানের ফোন পেয়ে হাসপাতালে এসেছিলেন। এর বাইরে ঘটনার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, সহসাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাসুদা রেহানা, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক শিমা মুসলেম, ঢাকা মহানগর কমিটির সভাপতি মাহাতাব নেছা, সাধারণ সম্পাদক রেহানা ইউনুসসহ অনেকে।