বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

একটি উদ্যোগ বদলে দিলো চিত্র

  •    
  • ১৩ জানুয়ারি, ২০২১ ১২:৪৯

প্রায় প্রতিদিন সিটি করপোরশেন হকার উচ্ছেদ অভিযান চালাতো। তবে অভিযান শেষে ফের সড়ক ও ফুটপাত দখল করে বসে পড়তেন হকাররা। ফুটপাত দখলমুক্ত হতো না। এ কারণে দুর্ভোগ ছিলো নগরবাসীর নিত্যসঙ্গী।

ফুটপাতের পুরোটা ভাসমান ব্যবসায়ীদের দখলে। ফুটপাত ছাপিয়ে সড়কের অনেকটা জুড়েও পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসে আছেন তারা। ফলে ফুটপাতে হাঁটার সুযোগ পাচ্ছেন না পথচারীরা। আর সড়কজুড়ে দীর্ঘ যানজট। এই ছিল সিলেট নগরের প্রতিদিনকার দৃশ্য।

প্রায় প্রতিদিন সিটি করপোরেশন হকার উচ্ছেদ অভিযান চালাতো। তবে অভিযান শেষে ফের সড়ক ও ফুটপাত দখল করে বসে পড়তেন হকাররা। ফুটপাত দখলমুক্ত হতো না। এ কারণে দুর্ভোগ ছিলো নগরবাসীর নিত্যসঙ্গী।

তবে একটি উদ্যোগে বদলে গেছে এই দৃশ্য। বিশেষ করে নগরের প্রধানতম সড়ক কিনব্রিজ থেকে চৌহাট্টায় নেই হকারদের উৎপাত। ফুটপাত ফাঁকা, নেই পণ্যের বেচাকেনা। ফলে পথচারীরা হাঁটাচলা করতে পারছেন নির্বিঘ্নে। যানজটও কমে গেছে অনেকটা।

পূর্বে এটি ছিল কিনব্রিজ থেকে চৌহাট্টা সড়কের চিত্র। ছবি: নিউজবাংলা

গত ডিসেম্বরে এ উদ্যোগটি গ্রহণ করে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। এতে সহায়তা করে সিলেট মহানগর পুলিশ (এসএমপি)। এই দুই সংস্থার উদ্যোগে নগরের কিনব্রিজ থেকে চৌহাট্টা পর্যন্ত তিন কিলোমিটার সড়ক ও ফুটপাতে ব্যবসা করা ভাসমান ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়া হয়। এতে সহযোগিতায় এগিয়ে আসে সিলেট মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগও।

সিলেট নগরের ব্যস্ততম এলাকা কিনব্রিজ থেকে চৌহাট্টা। নগরের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকাও এটি। ফলে এই সড়কে হকারদের উপদ্রব ছিল সবচেয়ে বেশি।

সিসিক ও এসএমপির উদ্যোগে নগরভবনের পেছনে লালদিঘী পারের খোলা মাঠে ভাসমান ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়।

অস্থায়ী হকারদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা চলছে লালদিঘীর পাড়ের মাঠে। ছবি: নিউজবাংলা

গত ১৬ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় পুনর্বাসন কার্যক্রম। প্রথমে কিনব্রিজ থেকে চৌহাট্টা পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার সড়কের ভাসমান ব্যবসায়ীদের তালিকা করা হয়। এরপর লালদিঘীর পারের মাঠে অস্থায়ী দোকান কোটা নির্মাণ করা হয়। ২২ ডিসেম্বর থেকে তালিকা অনুযায়ী সহস্রাধিক হকারকে সেই মাঠে পুনর্বাসনের কাজ শুরু হয়।

এরফলে কিনব্রিজ-চৌহাট্টা সড়ক ও ফুটপাত এখন অনেকটাই হকারমুক্ত। এতে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন নগরবাসী।

সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী নিউজবাংলাকে জানান, হকার আর যানজট ছিল নগরের অন্যতম প্রধান সমস্যা। এতদিন ধরে এ সমস্যাগুলো দূর করা যায়নি। কিন্তু একটু উদ্যোগ ও আন্তরিক চেষ্টার ফলে যে সব সমস্যা সমাধান করা সম্ভব তা এখনকার কিনব্রিজ-চৌহাট্টা সড়কে গেলে প্রমাণ মিলবে।

নগরের বন্দরবাজার এলাকায় কমলা বিক্রি করতেন রমিজ উদ্দিন। তাকে লালদিঘীর পার মাঠে পুনর্বাসন করা হয়েছে। রমিজ জানান, সড়কের তুলনায় এখানে ক্রেতা কিছু কম। তবে ব্যবসা করে শান্তি আছে। পুলিশ-সিটি করপোরেশনের দৌড়ানি খেতে হয় না। কাউকে বখরাও দিতে হয় না।

সিলেট সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা জানান, হকারমুক্ত করার পাশপাশি ১ জানুয়ারি থেকে এই সড়কে রিকশা, ভ্যান ও লেগুনা চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ফলে আগের মতো এই সড়কে যানজট তৈরি হচ্ছে না।

সিসিক সূত্রে জানা যায়, সিলেট নগরে সড়ক আছে ৫৬৮.৫০ কিলোমিটার। আর ফুটপাত রয়েছে ২৭০ কিলোমিটার। এর মধ্যে ১৫০ কিলোমিটার ফুটপাত হাঁটার উপযোগী। তবে এই হাঁটার উপযোগী ফুটপাতের প্রায় পুরোটাই ছিলো হকারদের দখলে। মাছ, ফলমূল, সবজি, কাপড়, বাসনপত্র সবই বিক্রি হতো ফুটপাতে। নগরের বাসিন্দাদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় ফুটপাত দখলমুক্ত করার দাবি জানানো হলেও তা কার্যকর হয়নি।

সিসিক কর্মকর্তাদের দাবি, বিভিন্ন সময় সিসিকের পক্ষ থেকে ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদে অভিযান চালানো হয়েছে। প্রায় নিয়মিতই অভিযান চালিয়ে সড়ক থেকে হকারদের সরিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু অভিযান শেষ হলেই তারা আবার ফুটপাত ও সড়কে বসে পড়েন। ফলে সড়ক ও ফুটপাত দখলমুক্ত করা যায়নি।

ফুটপাত দখলমুক্ত করে হাঁটার জন্য উম্মুক্ত করতে ২০১৭ সালে সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে আদালতে একটি আবেদন করা হয়। এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মহানগর মুখ্য হাকিম আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে ফুটপাতে হকার ও তাদের প্রশ্রয়দাতাদের তালিকা প্রনয়ণ করার নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশে তালিকা তৈরি করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ। সেই মামলায় জেলও খাটেন অবৈধভাবে ফুটপাত দখলদারদের কয়েকজন। মামলার কার্যক্রম এখনো চলামান রয়েছে।

তবে সোমবার বিকেলে কিনব্রিজ থেকে চৌহাট্টা ঘুরে দেখা যায়, সড়ক ও ফুটপাতে কোনো হকার নেই। ফাঁকা ফুটপাত দিয়ে নির্বিঘে চলাচল করছেন পথচারীরা। সড়ক হকারমুক্ত ও রিকশা চলাচল বন্ধ হওয়ায় নেই যানজটও। সড়কের বিভিন্ন স্থানে ‘হকারমুক্ত এলাকা’ লিখে সিসিকের পক্ষ থেকে সাইনবোর্ড টাঙানো হয়েছে। সড়কের বিভিন্ন মোড়ে অবস্থানে রয়েছে পুলিশ।

সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক) ফয়সল মাহমুদ জানান, পরিকল্পিত ও সমন্বিতভাবে উদ্যোগ নিলে যে কোনো উদ্যোগেই সুফল পাওয়া যায়। আগে হকারদের কেবল উচ্ছেদ করা হয়েছে। পুনর্বাসনের চিন্তা করা হয়নি। ফলে সুফল মিলেনি।

এ উদ্যোগ প্রসঙ্গে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘সিলেট নগরকে একটি স্মার্ট ও ডিজিটাল সিটি হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। ভাসমান ব্যবসায়ীরাও এই নগরের বাসিন্দা। মানবিক চিন্তা থেকে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর