জেষ্ঠ্য সাংবাদিক ও দৈনিক প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান খানের জানাজায় গিয়ে ক্ষোভের মুখে পড়েছেন গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী। সাংবাদিকের মৃত্যু নিয়ে তার আপত্তিকর মন্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে।
মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে দুপুর ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
ডিসেম্বর মাসে মিজানুর রহমান করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি হন। সেখানে পাঁচ দিন থাকার পর অবস্থার অবনতি হওয়ায় নিয়ে যাওয়া হয় অন্য হাসপাতালে৷ সেখানেই তিনি সোমবার মারা যান।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জানাজা শুরুর আগে মিজানুর রহমান খানের ভাই সিদ্দিকুর রহমান বলেন, গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের অবহেলার কারণেই তার ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু এরপরও তারা কোনো অভিযোগ করছেন না।
জবাবে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আপনারা না বুঝে কথা বলবেন না। আসলে মিজানুর রহমানের ভাই মশিউরের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে।’
এই কথা বলতেই অনেকে তার দিকে চড়াও হতে থাকেন। প্রেসক্লাবে উত্তেজনা দেখা যায়। তখন জাফরুল্লাহর কাছ থেকে মাইক নিয়ে তাকে দ্রুত গাড়িতে করে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সাংবাদিক মিজানুর রহমান খানের জানাজা। ছবি: নিউজবাংলা
এ প্রসঙ্গে জাফরুল্লাহ চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মশিউরই হত্যা করেছে এটা খুব একটা ভুল কথা নয়। আর আমি তো এটা কথার পরিপ্রেক্ষিতে বলেছি। আমি গিয়েছি জানাজায়। আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে সেটি তারা লিখিত দিতে পারেন। কিন্তু এভাবে জনসমক্ষে ঘোষণা দিয়ে বলছেন এক ভদ্রলোক যে, গণস্বাস্থ্যের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা ভালো না, আমাদের গাফিলতিতে মৃত্যু হয়েছে।’
গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি আরও বলেন, ‘তখন আমি বলেছি যে, আমাদের এখানে মিজান ছিলই পাঁচ দিন। তার এক মাস পর অন্য হাসপাতালে থাকা অবস্থায় সে মারা গেছে। আমরা কেন, তাকে কেউ মারলে সেটা তার ভাই মশিউর।’
‘তখন তারা আমার ওপর চড়াও হয়’-যোগ করেন জাফরুল্লাহ।
মশিউর মেরেছেন এটা কীভাবে জানেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ডিসেম্বরে মিজানুরকে আমাদের এখানে ভর্তি করা হয়। পাঁচ দিনের মাথায় রাত দুইটার দিকে আমার ঘুম ভাঙিয়ে তার ভাই মশিউর বলেন, তাকে (মিজানুরকে) অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাবে। মিজান আমার বন্ধু মানুষ, কিন্তু পরিবার তো সবার আগে। তাই আমি বললাম নিতে চাইলে নেন। সে নিয়ে গেল।’
জাফরুল্লাহ বলেন, ‘পরে আমরা লোক পাঠিয়েছিলাম তার খোঁজ নিতে। কিন্তু হাসপাতাল জানিয়েছে আমাদের কোনো তথ্য দিতে পারবে না। মশিউরকেও অনেকবার আমি নিজে ফোন করেছি সে ধরেনি। এমনকি তাদের যে বাকি ভাইরা আছে তাদেরকেও কোনো তথ্য দেয়া হয়নি৷ সিদ্দিকুরসহ বাকি ভাইরা তাকে বিএসএমএমইউ কিংবা সিএমএইচে নিতে চাইছিল৷ আমাকে অনুরোধ করেছে যেন আমি মশিউরকে বোঝাই৷ মশিউর একচেটিয়াভাবে সব করেছে।’
জাফরুল্লাহ বলেন, ‘আমি বলছি না। আমাদের এখানে থাকলে সে বেঁচে যেত। কিন্তু সেবা পেত।’
পরে মশিউর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘উনি মুরব্বি মানুষ। উনার এখন একটু কথাবার্তায় সীমানা আনা উচিত৷ উনাকে কেউ ব্যক্তিগত আক্রমণ করেনি। গণস্বাস্থ্যের কথা বলেছে। সেখানে উনি আমাকে ব্যক্তিগত অ্যাটাক করে বসলেন। অব্যবস্থাপনার কথা বলেছি মাত্র, অভিযোগও করিনি৷ ভাই হারিয়েছি৷ আপাতত কিছু বলতে চাচ্ছিনা।’