চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী বউয়ের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে নির্বাচনি খরচ মেটাবেন। আর বিএনপির মেয়রপ্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন খরচ মেটাবেন বোনদের টাকায়।
এ দুই প্রার্থীর মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেয়া হলফনামা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য জানা গেছে।আরও পড়ুন: শাহাদাত মাজারে, রেজাউল মায়ের কবরে
নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হলফনামা থেকে আরও জানা যায়, বউ ও ভাইদের টাকার পাশাপাশি নিজের কাছে ক্যাশ থাকা এক লাখ টাকা খরচ করবেন রেজাউল করিম।
স্ত্রী দেবেন পাঁচ লাখ টাকা। তিন ভাই দেবেন সাড়ে ১৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে দুই ভাই দেবেন পাঁচ লাখ টাকা করে এবং এক ভাই দেবেন তিন লাখ টাকা।
অন্যদিকে, পেশায় চিকিৎসক ডা. শাহাদাত হোসেন নির্বাচনী ব্যয় নির্বাহের জন্য নিজের আয় থেকে ২০ লাখ টাকা খরচ করবেন। আর দুই বোনের কাছ থেকে ধার করবেন পাঁচ লাখ করে মোট ১০ লাখ টাকা।
হলফনামায় জানা যায়, আওয়ামী লীগের টিকিটে ভোটের লড়াইয়ে নামা ৬৭ বছর বয়সী রেজাউল নগরীর চান্দগাঁও থানার বহদ্দার বাড়ির সন্তান। এখনও থাকছেন পৈতৃক নিবাসেই। তার নামে কোনো ঋণ নেই। স্ত্রীর নামে অকৃষি জমি আছে দুই গণ্ডা দুই কড়া। উত্তরাধিকারসূত্রে এক লাখ টাকা মূল্যমানের নির্মিত ঘর পেয়েছেন রেজাউল।
নির্বাচনী প্রচারে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী। ছবি: নিউজবাংলা
রেজাউলের নিজের নামে স্থাবর সম্পদের মধ্যে চারটি ফ্ল্যাট রয়েছে। যেগুলো বর্তমান বাজার মূল্যমান এক কোটি ৯ লাখ ১৬ হাজার ৬৬৭ টাকা। তার কাছে নগদ আছে এক লাখ টাকা, স্ত্রীর কাছে নগদ আছে তিন লাখ ৫১ হাজার ৪০৯ টাকা।
রেজাউলের বাড়ি ও দোকান ভাড়া থেকে বার্ষিক আয় চার লাখ ১৪ হাজার টাকা। পাশাপাশি ব্যবসা থেকে তিনি আয় করেন তিন লাখ ৫০ হাজার টাকা। ফার্মের শেয়ার থেকে আয় দুই লাখ এক হাজার টাকা।
এ ছাড়া রেজাউলের নামে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা আছে সাত লাখ আট হাজার ৫৩৯ টাকা। আর স্ত্রীর নামে ২০ হাজার টাকার প্রাইজবন্ডসহ জমা আছে ৩২ লাখ ২৭ হাজার ৯০ টাকা। রয়েছে চার লাখ টাকা মূল্যের একটি প্রাইভেটকার।
তার ব্যবসায়িক মূলধনের মধ্যে রেজাউলের নামে রয়েছে নিজ নামে দুই লাখ টাকা। আর মেসার্স চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ নামের সরবরাহকারী ফার্মের মূলধন ১০ লাখ ছয় হাজার টাকা। এ ছাড়া তার স্ত্রীর নামে ব্যবসায়িক মূলধন দুই লাখ ৮০ হাজার টাকা। স্ত্রীর মেসার্স চৌধুরী ইলেকট্রনিক্স নামের একটি ফার্মের মূলধন দুই লাখ ৫১ হাজার টাকা রয়েছে।
ধানের শীষের প্রার্থী ৫৪ বছর বয়সী শাহাদাত হোসেন নগরের বাকলিয়া ডিসি রোডের স্থায়ী বাসিন্দা। এখন থাকেন নগরের বাদশা মিয়া সড়কের একটি ফ্ল্যাটে। নৌকার প্রার্থী রেজাউল ঋণমুক্ত হলেও ধানের শীষের ডা. শাহাদাত একজন ঋণগ্রস্ত।
উত্তরা ফাইন্যান্স ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে তিন কোটি ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা ঋণ আছে শাহাদাতের। এ ছাড়া ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের কাছেও ঋণ আছে ২৯ লাখ ৮১ হাজার ১৩২ টাকা এবং অন্যান্য ঋণ দুই লাখ ৪৬ হাজার ৩১৩ টাকা।
শাহাদাতের মোট বার্ষিক আয় ২০ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে বাড়ি ভাড়া বাবদ আসে তিন লাখ ৫৩ হাজার ২৫ টাকা। চিকিৎসা, শিক্ষকতা ও পরামর্শক হিসেবে পান ১৭ লাখ ২১ হাজার টাকা। তার ১৫ লাখ টাকার পাশাপাশি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা আছে ৩৪ লাখ ৪৭ হাজার ২৭৭ টাকা। বন্ড ও স্টক এক্সচেঞ্জে আছে ৩ লাখ ৭১ হাজার ৩৫০ টাকা।
নির্বাচনী প্রচারে বিএনপির মেয়র প্রার্থী শাহাদাত হোসেন। ছবি: নিউজবাংলা
পাঁচলাইশ এলাকার ট্রিটমেন্ট সেন্টার নামের হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক শাহাদাত। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসায়িক মূলধন ৩ কোটি ২৮ লাখ ৯০ হাজার ৬০০ টাকা। তার টয়োটা গাড়ির মূল্য ১১ লাখ ৮০ হাজার আর পুরনো একটি জিপের মূল্য ২৭ লাখ ২০ হাজার টাকা।
শাহাদাতের মালিকানাধীন দুটি অকৃষি জমির মূল্য ২৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা। একটি আট তলা আবাসিক ভবনের আট ভাগের একাংশের মালিক তিনি, যার মূল্য ৬৭ লখ ৮৬ হাজার টাকা। আর নিজের মালিকানাধীন একটি ফ্ল্যাট রয়েছে তার। যেটির মূল্য ৩৫ লাখ টাকা।
আগামী ২৭ জানুয়ারি চসিক নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে নৌকার রেজাউল ও ধানের শীষের শাহাদাতসহ মেয়র পদে লড়ছেন সাত জন।
তারাসহ ৪০টি কাউন্সিলর ও ১৪টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে নারী কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোট ২৩৭ জন প্রার্থী।