মানবতাবিরোধী অপরাধী জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী এবার জাকাতের অর্থ আত্মসাৎ মামলায় বিচারের মুখোমুখি।
ইসলামিক ফাউন্ডশনের যাকাত তহবিলের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে এই মামলায় সাঈদী ছাড়াও বিচারের মুখোমুখি আরও পাঁচ জন।
সোমবার পুরান ঢাকার বকশীবাজার আলীয়া মাদ্রাসার মাঠে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১ এর বিচারক সৈয়দা হোসনে আরা অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন।
আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি শুরু হবে সাক্ষ্যগ্রহণ।
সকাল ১০টায় সাঈদীসহ অন্যান্য আসামিদের আদালতে হাজির করা হয়। আসামিপক্ষে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করা হয়।
আবেদন নাকচ করে বেলা দুইটার দিকে বিচার শুরুর আদেশ আসে।
দণ্ডবিধির ৪৬৭, ৬৮, ৪০৯, ১০৯, ৫০৬, ৪২০ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। দণ্ডিত হলে এর প্রতিটি ধারায় সাত থেকে আট বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
মামলায় সাঈদী ছাড়া অপর পাঁচ আসামি হলেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ লুৎফুল হক, মসজিদ কাউন্সিল ফর কমিউনিটি এডভান্সমেন্টের সাবেক চেয়ারম্যান মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, বন্ধুজন পরিষদের প্রধান সম্পাদক মিয়া মোহাম্মদ ইউনুস, ইসলামী সমাজকল্যাণ কেন্দ্রের সাবেক সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মসজিদ কাউন্সিলের সহকারী পরিচালক আব্দুল হক।
পলাতক থাকায় আসামি আবুল কালাম আজাদ ও আব্দুল হক এর পক্ষে কোনো অব্যাহতির শুনানি করা হয়নি।
বিএনপি-জামায়াত জোটের ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন শাহজাহানও এই মামলার আসামি ছিলেন। তিনি মারা যাওয়ায় তাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়৷
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের যাকাত তহবিলের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে সংস্থাটির সাবেক পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) আইয়ুব আলী চৌধুরী ২০১০ সালের ২৪ মে শেরেবাংলা নগর থানায় এ মামলাটি করেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজসে ২০০৫-০৬ অর্থ বছরে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জাকাত বোর্ডের এক কোটি ১৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং ২০০৪-০৫ অর্থ বছরের ১৩ লাখ টাকাসহ মোট এক কোটি ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা দুঃস্থদের না দিয়ে নিজেদের দলীয় প্রতিষ্ঠানে বরাদ্দ করে আত্মসাৎ করেন।
এই অর্থের মধ্যে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মোশারেফ হোসেন শাহজাহান জাতীয় বন্ধুজন পরিষদ ভোলার অনুকূলে ৫০ লাখ, কাঠালিয়া মুসলিম এ কে. ইনস্টিটিউটের অনুকুলে ছয় লাখ ৫০ হাজার, মাওলানা আবুল কালাম আযাদের মসজিদ কাউন্সিল ফর কামউনিটি এডভান্সমেন্টের অনুকূলে ৪৫ লাখ, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির তৎকালীন সভাপতি সাঈদীর ইসলামী সমাজকল্যাণ কেন্দ্র পিরোজপুরের অনুকূলে পাঁচ লাখ, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ লুৎফুল হকের দারুল কারার সোসাইটি, শরীয়তপুরের অনুকূলে আট লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয় বলে অভিযোগ আছে মামলায়।
দুদকের সহকারী পরিচালক ওয়াজেদ আলী গাজী ২০১২ সালের ৩০ এপ্রিল আদালতে অভিযোগপত্র দেন।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ২০১৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয় আপিল বিভাগ। যদিও ২০১৩ সালে এই মামলায় তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
সাঈদীর বিরুদ্ধে আয়কর ফাঁকির আরও একটি মামলা চলছে।
ওই মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, জামায়াত নেতা ২ কোটি ২৭ লাখ ৪০ হাজার ১২০ টাকা আয় গোপন করে ৫৬ লাখ ৪৬ হাজার ৮১২ টাকা কর দেননি।
এই অভিযোগে ২০১১ সালের ১৯ আগস্ট এনবিআর মামলা করে মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিরুদ্ধে। পরের বছর ১৫ সেপ্টেম্বর অভিযোগ জমা দেয়া হয় আদালতে।