বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পদ্মাসেতুতে চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলাম, আজ সেটা বাস্তব: প্রধানমন্ত্রী

  •    
  • ১১ জানুয়ারি, ২০২১ ১৫:২৮

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের জন্য যেটা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল যখন পদ্মা সেতু নিয়ে প্রশ্ন করা হলো। আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক এর পেছনে আমাদেরই দেশের কিছু লোক এর সঙ্গে জড়িত।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নিজেদের অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণের যে চ্যালেঞ্জ তিনি নিয়েছিলেন সেটি এখন বাস্তবে রূপ পেয়েছে। এই একটা সিদ্ধান্তই সারা বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বদলে দিয়েছে। বিশ্ব এখন জানে বাংলাদেশ পরনির্ভরশীল না।

গত ১০ ডিসেম্বর দেশের সবচেয়ে বড় সেতুর সবগুলো স্প্যান বসে যায়। এরপর থেকে কেবল ওপরে সড়ক আর মাঝে রেল লাইন বসানোর কাজ চলছে।

সোমবার মন্ত্রিসভার আলোচনায় সেতুটি নিয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। সামনে আনেন বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন জটিলতার প্রসঙ্গ।

ড. ইউনূসের নাম উল্লেখ না করে তাকে ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটাই হচ্ছে সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের বিষয় যে সামান্য একটা ব্যাংকের এমডির পদের লোভে একটা দেশের সার্বিক উন্নয়নের বিরাট সুযোগ পদ্মা সেতু, দক্ষিণের ২২ টি জেলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে। আমাদের জিডিপিতে প্রায় দুই শতাংশ যোগ হতে পারে, সেই পদ্মা সেতুটাই বন্ধ করার ব্যবস্থা নিয়েছিল।’

পদ্মাসেতু নির্মাণে ২০১১ সালে ২৮ এপ্রিল বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ঋণচুক্তি হলেও পরে এ নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। দাতা সংস্থাটি দুর্নীতি চেষ্টার অভিযোগ তুলে প্রথমে অর্থায়ন স্থগিত এবং পরে প্রকল্প থেকে সরে আসে। পরে সরকার নিজ অর্থে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। এ কারণে চারটি বছর অতিরিক্ত সময় লেগেছে সেতুতে।

গত ১০ ডিসেম্বর পদ্মাসেতুর সবগুলো স্প্যান বসার পর এখন ওপরে সড়ক ও ভেতরে রেল লাইনের কাজ চলছে

শুরু থেকেই সরকার বলে আসছিল, বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ সত্য নয়। পরে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে কানাডার আদালতে বিশ্বব্যাংকের করা মামলাটি গালগপ্প বলে খারিজ করে দেন বিচারক। এরপর এই সেতু নিয়ে বিতর্ক থামে।

যে সময় বিশ্বব্যাংক এই অভিযোগটি আনে, তখন গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে ড. ইউনূসকে অপসারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। আইন অনুযায়ী ৬২ বছর বয়স পর্যন্ত এই পদে থাকা যায়। তবে সে সময় ইউনূসের বয়স ছিল ৬৭। পদ ধরে রাখতে উচ্চ আদালতে গিয়েও সফল হননি তিনি।

সরকার সে সময় অভিযোগ করে, ইউনূসকে পদে রাখতে পশ্চিমা কয়েকটি দেশের অনুরোধ না রাখায় বিশ্বব্যাংক এই অন্যায় অভিযোগ আনে।

ইউনূসের সঙ্গে সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের বন্ধুত্ব আছে। সে সময় হিলারিও বিষয়টি নিয়ে কল করেছিলেন বলে জানিয়েছেন ক্ষমতানীর দলের নেতারা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের জন্য যেটা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল যখন পদ্মা সেতু নিয়ে প্রশ্ন করা হলো। আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক এর পেছনে আমাদেরই দেশের কিছু লোক এর সঙ্গে জড়িত।’

আঘাত এলে মানুষ সচেতন হয়ে নিজের কাজ করা শেখে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সেটাই শিখেছি। এই আঘাতটা আমাদের উপর এসেছিল, আমরা হতাশ হইনি।’

বঙ্গবন্ধুর উদ্ধৃতি দিয়ে তার কন্যা বলেন, ‘জাতির পিতা বলেছিলেন দাবায়ে রাখতে পারবে না। দাবায় রাখা যে যায় না সেটা আমরা প্রমাণ করেছি। আমাদের এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের যতটুকুই আছে, আমাদের যে বিশাল জনগোষ্ঠীর কর্মক্ষম করে তাদের নিয়েই আমরা কাজ করতে পারব। আমাদের বিশাল উর্বর ভূমি এবং আমাদের দেশের মানুষ তাদেরকে নিয়েই আমরা দেশকে গড়ব।’

লম্বা সময় ক্ষমতায় থাকায় উন্নয়ন

২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি সরকার গঠনের পর থেকে টানা ক্ষমতায় থাকায় দেশে উন্নয়ন সহজ হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন সরকারপ্রধান।

তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ সময় রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়াতে একটা সুযোগ আমাদের হয়েছে যে আজকের বাংলাদেশ সারা বিশ্ব সম্মান জানায়। আগে যেমন বাংলাদেশের কথা শুনলেই বলত প্রকৃতিক দুর্যোগ, ঝড়, বন্যা, দারিদ্র্য। এখন আর সে কথা কেউ বলে না।

‘বরং বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটা দৃষ্টান্তে স্থাপন করেছে কীভাবে উন্নয়ন করা যায়, দারিদ্র্য বিমোচন করা যায়, কর্মসংস্থান করা যায়, কীভাবে দেশের মানুষের জীবনমান উন্নত করা যায়।’

মন্ত্রিসভার সদস্যদের নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০২১ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীর পাশাপাশি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীও আমরা উদযাপন করতে যাচ্ছি।

‘বাংলাদেশের জন্য এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সৌভাগ্য আমি কৃতজ্ঞতা জানাই বাংলাদেশের জনগণের প্রতি, তারা আমাকে ভোট দিয়ে তাদের সেবা করার সুযোগ করে দিয়েছেন। তাই আমরা ক্ষমতায় থেকে মানুষের সেবা করাতে পারছি।’

নতুন বছরে সরকারের পরিকল্পনা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আজকে আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার সকল শর্ত পূরণ করেছি।

‘জাতির পিতা চেয়েছিলেন বাংলাদেশকে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে। আমরা তার জন্মশত বার্ষিকীতে করোনা ভাইরাসের কারণে অনেক অনুষ্ঠান করতে পারিনি। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য স্থির করেছি, এ দেশে একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না, প্রতিটি ঘর আলোকিত হবে, শিক্ষা স্বাস্থ্যসেবা থেকে শুরু করে মৌলিক চাহিদাগুলো আমরা পূরণ করব, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করব, দেশের আমরা এগিয়ে নিয়ে যাব।’

পদ্মাসেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন নিয়ে যা যা হয়েছে

২০০৯ সালের ১৯ জুন সেতুর নকশা প্রণয়নের প্রস্তাব মন্ত্রিসভা অনুমোদন করে। এরপর ২৯ জুন পরামর্শকের সঙ্গে চুক্তি হয়। পদ্মা সেতুর কাজ ২০১৩ সালের মধ্যে শেষ করার সময় নির্ধারণও করা হয় সে সময়।

২০১০ সালে প্রিকোয়ালিফিকেশন দরপত্র আহ্বান করা হয়। পদ্মা সেতুতে অর্থায়নে আগ্রহ দেখায় বিশ্বব্যাংক। সেই সঙ্গে সহযোগী হতে চায় এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিপি), ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি) ও জাইকা।

২০১১ সালের ২৮ এপ্রিল সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ১২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি হয়। পদ্মা নদীতে ‘ভাষা শহীদ বরকত’ নামের ফেরিতে এই চুক্তিতে বাংলাদেশের পক্ষে সই করেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া আর বিশ্বব্যাংকের পক্ষে বাংলাদেশে সংস্থাটির আবাসিক প্রতিনিধি অ্যালেন গোল্ডস্টাইন। বিশ্বব্যাংকের ইতিহাসে কোনো একক প্রকল্পে এটাই হতো সবচেয়ে বড় ঋণ।

পদ্মাসেতু নির্মাণে ২০১১ সালের ২৮ এপ্রিল বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ১২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি সই হয় বাংলাদেশের

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া সেদিন জানান, ওই বছরের শেষ দিকে সেতুর কাজ শুরু হবে। আর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে তিন বছর সময় দেয়া হবে। অর্থাৎ সেতুর কাজ শেষ হবে ২০১৫ সালের আগেই।

একই প্রকল্পে ২০১১ সালের ১৮ মে জাইকার সঙ্গে, ২৪ মে আইডিবির সঙ্গে এবং ৬ জুন এডিবির সঙ্গে ঋণচুক্তি হয়। এডিবি ৬১ কোটি, জাইকা ৪০ কোটি ও আইডিবি ১৪ কোটি ডলার দেবে বলে ঠিক হয়।

কিন্তু বিশ্বব্যাংক উড়ো কথার ভিত্তিতে পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতি চেষ্টার অভিযোগ তোলার পর শুরু হয় টানাপড়েন। সংস্থাটির অভিযোগ ছিল, কানাডার প্রতিষ্ঠান এসএনসি লাভালিন কাজ পেতে বাংলাদেশের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ঘুষ দেয়ার ষড়যন্ত্র করছে।

সরকার শুরু থেকেই এই অভিযোগ নাকচ করলেও বিশ্বব্যাংক চাপ দিতে থাকে। এক পর্যায়ে ২০১১ সালে ঋণচুক্তি স্থগিত করে।

পরে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগের সচিব মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়াকে প্রধান আসামি করে সাত জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন। কিন্তু বিশ্বব্যাংক চাপ দিতে থাক সে সময়ের যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে আসামি করতে।

সরকারি রাজি না হওয়ার পর ২০১২ সালের ৩০ জুলাই ঋণচুক্তি বাতিল করে বিশ্বব্যাংক। পরে চুক্তি অনুযায়ী বিশ্বব্যাংক সরে যাওয়ায় সরে যায় এডিবি, জাইকা ও আইডিবি।

২০১২ সালের ১০ জুলাই নিজ অর্থে সেতু নির্মাণের বিষয়ে প্রথম কখা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেদিন তিনি বলেন, নিজ অর্থায়নে সেতু নির্মাণের ব্যাপারে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়াও পাওয়া যাচ্ছে।

২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর মুন্সিগঞ্জের মাওয়ায় পদ্মা সেতুর মূল পাইলিং কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে শরীয়তপুরের জাজিরার নাওডোবায় পদ্মা সেতু প্রকল্পের মূল কাজ উদ্বোধন করেন তিনি।

সেতুর কাজ শুরুর দুই বছর পর ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে কানাডার আদালত রায় দেয় পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি চেষ্টার অভিযোগ বায়বীয়, গালগপ্প। বাংলাদেশের পাশাপাশি সে দেশেও একই অভিযোগ এনেছিল বিশ্বব্যাংক। এসএনসি লাভালিনের তিন কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করে তারা।

কিন্তু বাংলাদেশের মতো কানাডা আদালতেও কোনো তথ্য প্রমাণ দিতে পারেনি বিশ্বব্যাংক। পরে বিচারক দাতা সংস্থাটির প্রতি বিরক্তি প্রকাশ করে।

সে সময়ে কানাডার পত্রিকা টরেন্টো স্টারের প্রতিবেদনে বলা হয়, রায়ের আদেশে বিচারক লেখেন, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যে তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছিল, তা জল্পনা, গুজব আর জনশ্রুতি ছাড়া কিছুই না। কানাডার সুপিরিয়র কোর্টের বিচারক ইয়ান নর্দেইমার এ রায় দেন।

কানাডা আদালতের রায় আসার পরেই সরকার বিরোধীরা দুর্নীতিচেষ্টার অভিযোগ নিয়ে আর কিছু বলেনি।

এ বিভাগের আরো খবর