ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসকে নিয়ে মানহানিকর বক্তব্য দেয়ার অভিযোগে সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে দুটি মামলার আবেদন করা হয়েছে।
সোমবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক রাজেশ চৌধুরীর আদালতে মামলা দুটির আবেদন করা হয়।
আদালতের বেঞ্চ সহকারী রিপন মিয়া নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
একটি মামলার বাদীর নাম কাজী আনিসুর রহমান। অপর মামলার বাদী আইনজীবী মো. সারওয়ার আলম।
বেঞ্চ সহকারী রিপন মিয়া জানান, আদালত বাদীদের জবানবন্দি নেয়ার পর দুটি মামলাই আদেশের জন্য রাখা হয়েছে।
মামলার আবেদনে বলা হয়, গত রোববার সাঈদ খোকনের এক বক্তব্যে মেয়র শেখ ফজলে নুর তাপস ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ভাবমূর্তি নানাভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে ।
বাদী দাবি করেন, ব্যারিস্টার শেখ ফলে নূর তাপসের বিরুদ্ধে মানহানিকর বক্তব্য প্রকাশ করে আসামি সাঈদ খোকন বাংলাদেশ দণ্ডবিধি আইনের ৫০০ ধারায় শাস্তিযাযোগ্য অপরাধ করেছেন।’
ন্যায়বিচারের স্বার্থে আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি ও তাকে জেলহাজতে আটক রাখার আবেদন করা হয়।
দুই মেয়রের মধ্যে বিরোধ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন দুটি মার্কেট থেকে নকশাবহির্ভুত দোকান উচ্ছেদ নিয়ে।
ফুলবাড়ীয়া ও সুন্দরবন মার্কেটে দেড় হাজারের বেশি দোকান ভেঙে দেয়ার কাজ শুরু করেছে সিটি করপোরেশন।
যাদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে, সেই দোকানিরা বলছেন, খোকন মেয়র থাকাকালে তারা টাকা দিয়ে সেগুলোর বরাদ্দ নিয়েছিলেন। আর টাকা নেয়ার রসিদও আছে।
তবে নগর কর্তৃপক্ষ বলছে, রসিদ থাকলেও এই টাকা করপোরেশনের তহবিলে জমা পড়েনি।
এই ঘটনায় সাবেক মেয়র খোকনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বিষয়টি এখন তদন্ত করছে পুলিশের তদন্ত সংস্থা পিবিআই।
খোকন এই অভিযানের সমালোচনা করেছেন। তবে তাকে ইঙ্গিত করে তাপস বলেছেন, কারও আবদারে অভিযান বন্ধ হবে না।
গত ৯ জানুয়ারি ক্ষতিগ্রস্ত দোকানিদের এক মানববন্ধনে অংশ নিয়ে খোকন তাপসের বিরুদ্ধে আনেন গুরুতর অভিযোগ। তার দাবি, তাপস আইন অনুযায়ী আর মেয়র থাকতে পারেন না।
খোকনের দাবি, নিজের মালিকানাধীন ব্যাংকে টাকা রেখে তাপস সিটি করপোরেশন আইন ২০০৯, দ্বিতীয় ভাগের ২ অধ্যায়ের অনুচ্ছেদ ৯ (২) (জ) অনুযায়ী মেয়র পদে থাকার বৈধতা হারিয়েছেন।
এই ধারা অনুযায়ী, মেয়র বা তার কোনো পরিবারের সদস্য সিটি করপোরেশনের ঠিকাদার হতে পারবেন না বা কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অংশীদার হতে পারবেন না। পাশাপাশি সিটি করপোরেশনের কোনো বিষয়ে তার কোনো আর্থিক স্বার্থ থাকতে পারবে না।
২০১৩ সালে অনুমোদন পাওয়া মধুমতি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের এক জন তাপস।
খোকন বলেন, ‘তাপস দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের শত শত কোটি টাকা তার নিজ মালিকানাধীন মধুমতি ব্যাংকে স্থানান্তর করেছেন এবং এই শত শত কোটি টাকা বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লাভ হিসেবে গ্রহণ করেছেন এবং করছেন।’
পরদিন এক অনুষ্ঠানে তাপস বলেন, সব আইন মেনে এই টাকা রাখা হয়েছে। ব্যক্তিগত আক্রোশের বশে সাঈদ খোকন উন্মাদের মতো বকছেন
এরও পরদিন খোকনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার ইঙ্গিত দেন তাপস। বলেন, ‘অবশ্যই তিনি (সাঈদ খোকন) মানহানিকর বক্তব্য দিয়েছেন। আমি তার বক্তব্য শুনে অবাক হয়েছি। তিনি নিজে চুনোপুটি দুর্নীতিবাজ হিসেবে স্বীকার করেছেন। আর আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রেক্ষিতে অবশ্যই এটা মানহানিকর হয়েছে। আমি এ ব্যাপারে ব্যবস্থা অবশ্যই নিতে পারি।… মানহানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে তো আইনি ব্যবস্থাই নিতে হবে।’