ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বর্তমান মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।
তিনি বলেছেন, খোকন তার বিরুদ্ধে যে বক্তব্য রেখেছেন, সেটা মানহানিকর। তিনি এসব কথা শুনে অবাক হয়েছেন।
বর্তমান ও সাবেক মেয়রের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে তুমুল আলোচনার শুরু ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন দুটি মার্কেটের নকশা বহির্ভূত দোকান উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে।
এই দোকানগুলো মেয়র খোকনের আমলে বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। দোকনিরা দাবি করছেন, তারা টাকা দিয়ে বরাদ্দ নিয়েছেন এবং সে টাকা দেয়ার রসিদ আছে। তবে সিটি করপোরেশন বলছে, দোকানিদের কাছ থেকে নেয়া টাকা সংস্থার তহবিলে জমা পড়েনি।
সাবেক মেয়র খোকনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা হয়েছে। পুলিশের তদন্ত সংস্থা পিবিআই তদন্তও করছে।
শনিবার ঢাকায় ক্ষতিগ্রস্ত দোকানিদের এক কর্মসূচিত অংশ নিয়ে খোকন অভিযোগ করেন, বর্তমান মেয়র তাপস দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বললেও তিনি নিজেই এতে জড়িত।
সাবেক মেয়রের দাবি, বেসরকারি মধুমতি ব্যাংকে সিটি করপোরেশনের তহবিল রাখায় তাপস মেয়র থাকার বৈধতা হারিয়েছেন। এই ব্যাংকটিতে তাপসের মালিকানা আছে এবং এ কারণে তার স্বার্থের দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে।
রোববার এক অনুষ্ঠানে মেয়র তাপস বলেন, আইন মেনেই সিটি করপোরেশনের টাকা মধুমতি ব্যাংকে রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক বেসরকারি ব্যাংক আমানত সংগ্রহ করে থাকে, মধুমতি ব্যাংকও আমানত সংগ্রহ করে থাকে। বিভিন্ন সরকারি সংস্থা থেকে আমানত সংগ্রহ করা হয়। এটা আইনবহির্ভূত কিছু না।’
একই দিন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দুই মেয়রের বক্তব্যে দুর্নীতি প্রকাশ পাচ্ছে।
সোমবার রাজধানীর মানিকনগর স্লুইসগেট ও ওয়াসা পাম্প হাউস পরিদর্শনে যান মেয়র তাপস। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েন খোকনের বক্তব্য প্রসঙ্গে।
তাপস বলেন, ‘অবশ্যই তিনি (সাঈদ খোকন) মানহানিকর বক্তব্য দিয়েছেন। আমি তার বক্তব্য শুনে অবাক হয়েছি। তিনি নিজে চুনোপুটি দুর্নীতিবাজ হিসেবে স্বীকার করেছেন। আর আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রেক্ষিতে অবশ্যই এটা মানহানিকর হয়েছে। আমি এ ব্যাপারে ব্যবস্থা অবশ্যই নিতে পারি।’
তাহলে আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছেন কি না- আবার এমন প্রশ্নে তাপস বলেন, ‘মানহানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে তো আইনি ব্যবস্থাই নিতে হবে।’
এর আগে তিনি বলেন, ‘গতকাল ছিল ১০ জানুয়ারি জাতির পিতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। এর আগেই ৯ তারিখে আমরা লক্ষ্য করলাম তিনি ঘটা করে একটা সভা ডেকে আমার বিরুদ্ধে বিষেদাগার করলেন। আমার মনে হয় এটা ওনার ব্যক্তিগত আক্রোশের বহিঃপ্রকাশ।’
খোকনের বিরুদ্ধে তিনি নিজে কখনও কিছু বলেননি উল্লেখ করে তাপস বলেন, ‘আমরা ১৭ মে দায়িত্বভার গ্রহণের পর থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান আরম্ভ করেছি। সেখানে আপনারা লক্ষ্য করেছেন মার্কেট সংক্রান্ত কিছু তথ্য বেরিয়ে এসেছে। সংবাদকর্মীরা আপনারাই সেগুলো অনুসন্ধান করে বের করেছেন। সেখানে বিভিন্নভাবে টাকা লেনদেন হয়েছে, যাদের সাথে টাকা লেনদেন হয়েছে, যারা লেনদেন করেছেন, তারাই অভিযোগ এনেছেন।
আমরা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে অথবা আমি ব্যক্তিগতভাবে কোনোভাবেই কোনো অভিযোগ আনি নাই। সেখানে যারা লেনদেন করেছে, যারা ব্যবসায়ী দোকানদার অবৈধভাবে সেই জায়গাগুলো দখলে ছিল, তারা অর্থ লেনদেন করেছেন। এখন তিনি (খোকন) পুরো দোষ আমার উপর চাপানোর চেষ্টা করছেন। সেটা আমি মনে করি খুবই অনভিপ্রেত। শুধুমাত্র আক্রোশের বশবর্তী হয়ে তিনি এই বিষয়গুলো তুলে ধরছেন।’