চট্টগ্রাম বন্দর ও মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরের সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ আগামী ১০ থেকে ২০ বছরের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার ম্যানুফ্যাকচারিং হাব হয়ে উঠবে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকায় তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মুস্তাফা ওসমান তুরান।
চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের চেম্বার কার্যালয়ে রোববার দুপুরে এক মতবিনিময় সভায় তিনি মন্তব্য করেন ।
এ সময় চট্টগ্রামে তুরস্কের এলপিজি প্রতিষ্ঠান এ্যাইগ্যাজ ১০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে বলে জানান তুর্কি রাষ্ট্রদূত।
তিনি বলেন, ‘ঢাকা এবং আঙ্কারায় সম্প্রতি দুই দেশের নতুন দূতাবাস নির্মাণের ফলে পারস্পরিক সম্পর্ক নতুন মাত্রা পেয়েছে। এ কারণে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের নানা খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।’
দেশ দুটির ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনলাইন বিটুবি সভা আয়োজনের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তুর্কি রাষ্ট্রদূত জানান, বাংলাদেশে একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে তুরস্কের। এ ছাড়া চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় পার্টনার কান্ট্রি হিসেবেও থাকতে চায় তুরস্ক।
সভায় দ্য চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে ব্যবসায়িক সম্ভাবনার আরও সদ্ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের ২০০ কোটি ডলারের বাণিজ্য লক্ষ্যমাত্রাকে স্বাগত জানাই। এ ক্ষেত্রে উভয় দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানো প্রয়োজন। বাংলাদেশ সরকারের প্রণোদনা কাজে লাগিয়ে তুরস্কের ব্যবসায়ীরা মিরসরাইসহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করতে পারে।’
দুই দেশের মধ্যে অগ্রাধিকার বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) হলে শুল্ক ও অশুল্ক বাধা দূর হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেন চেম্বার সভাপতি। বেসরকারি খাতের উন্নয়নে যৌথ উদ্যোগে ১০ বছর মেয়াদী কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের অনুরোধ করেন মাহবুবুল আলম।
এ সময় স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে তুরস্কের প্রেসিডেন্টকে চট্টগ্রাম ভ্রমণের আমন্ত্রণ জানান তিনি।
মতবিনিময় সভায় চেম্বার পরিচালক ও তুরস্কের অনারারি কনসাল জেনারেল সালাহ্উদ্দীন কাসেম খান, চেম্বার পরিচালকবৃন্দসহ দূতাবাসের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
একই দিন বিকেলে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) কাউন্সিল হলে বিশ্ববিদ্যালয় ডীন, পরিচালক ও বিভাগীয় প্রধানদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় অংশ নেন তুর্কি রাষ্ট্রদূত।
সভায় বাংলাদেশে তুরস্কের বিনিয়োগ বেড়েছে জানিয়ে তুর্কি দূত বলেন, ‘তুরস্ক ও বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সর্ম্পক অত্যন্ত চমৎকার। অর্থনৈতিকভাবেও এগিয়ে যাচ্ছে দুই দেশ। বাংলাদেশের জিডিপি ও মাথাপিছু আয় আশাব্যঞ্জকভাবে এগিয়েছে।’
বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ইনোভেশনে জোর দেন তুর্কি দূত। বেসরকারি সেক্টরে স্কিলস ডেভেলপমেন্টের মাধ্যমে প্রযুক্তিগত দক্ষতা বাড়িয়ে নতুন প্রজন্ম এগিয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেন মুস্তফা ওসমান তুরান।
তিনি বলেন, ‘দুই দেশের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অ্যাকাডেমিক এক্সচেঞ্জ, রিসার্চ প্রোগ্রাম এবং অ্যাকাডেমিক কোলাবোরেশনের বিষয়ে আগ্রহী আমরা।’
সভায় চুয়েটের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম বলেন, ‘তুরস্কের সঙ্গে চুয়েটের সর্ম্পক পুরোনো। ২০১৪ সালে তুরস্কের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত চুয়েট ক্যাম্পাসে এসেছিলেন। বর্তমানে তুরস্কের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অনন্য মাত্রা পেয়েছে। আমরা দ্বিপাক্ষিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী বিনিময় ও যৌথ গবেষণা প্রোগ্রাম চালু করার বিষয়ে আশাবাদী।’
পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. আয়শা আখতারের সঞ্চালনায় ওই মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রামে তুরস্কের অনারারি কনসাল জেনারেল সালাহউদ্দিন কাসেম খান এবং চুয়েটের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম।