বিএনপি নেতৃত্বশূন্য দাবি করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন, যে কোনো সময় বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন দলটি ভেঙে পড়তে পারে।
বিএনপি ভেঙে গেলে জাতীয় পার্টির লাভ হবে বলেও মনে করেন সাবেক সেনা শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ভাই। বলেছেন, ‘তারা তো নিশ্চয়ই আওয়ামী লীগে যাবে না এবং আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে না।’
রোববার রাজধানীর বনানীতে তার রাজনৈতিক কার্য়ালয়ে দলের এক সাংগঠনিক মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখছিলেন জাপা চেয়ারম্যান।
সভায় তৃণমূল পর্যায়ে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলায় সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর নির্দেশনাও দেন জাপা নেতা।
সম্প্রতি নানা আলোচনায় জি এম কাদের দাবি করছেন, তারা ক্ষমতায় আসার মতো শক্তি অর্জন করতে যাচ্ছেন। জনগণ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রতি বীতশ্রত হয়ে তাদেরকে ভোট দেবে।
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব যিনি (বেগম খালেদা জিয়া) আছেন উনি মুচলেকা দিয়ে রাজনীতি করবেন না বলে জেল থেকে বেরিয়ে এসেছেন। কাজেই বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বশূন্য। আর তার জায়গায় যিনি (তারেক রহমান) কাজ করছেন, তিনি কনভিকটেড (তিন মামলায় সাজাপ্রাপ্ত) হিসেবে বিদেশে রয়েছেন। তার নেতৃত্ব নিয়েও তাদের দলের মধ্যেই অনেক বিভেদ আছে। তাদের দলেই তাকে মানছে না অনেকে।
‘এবং তার পরের স্তরের নেতৃত্ব নিয়েও আমরা যতটুকু তথ্য পাই, আমরা বুঝতে পারছি যে, একতার অভাব আছে। কাজেই সাংগঠনিকভাবে তারা খুব একটা ভালো অবস্থায় নেই।’
বিএনপির নেতা-কর্মী দলে এলে তাদেরকে স্বাগত জানানোর ইঙ্গিত করে জি এম কাদের বলেন, ‘তাদের যারা নেতা-কর্মী তারা কোথায় যাবে? তাদের যাওয়ার জায়গা খুঁজতে হবে। যারা উনাদের সমর্থক কোথায় ভোট দেবে এর পরে তা খুঁজতে হবে। তারা তো নিশ্চয়ই আওয়ামী লীগে যাবে না।’
আওয়ামী লীগের অবস্থাও ‘ঠুনকো’ বলে উল্লেখ করেন জি এম কাদের। বলেন, ‘উনি (শেখ হাসিনা) যতটুকু আছেন যতটুকু পর্যন্তই দল আছে। দলে তার নিচে পর্যায় পর্যন্ত আমরা নিজেই দেখতে পারছি কী হচ্ছে। প্রকাশ্যভাবে একজন মেয়র ও আর প্রাক্তন মেয়র একজন আরেকজনকে দোষারোপ করছেন।
‘একজন শীর্ষস্থানীয় নেতার (ওবায়দুল কাদের) ভাই দল সম্পর্কে বলছেন, তারা পালানোর পথ খুঁজে পাবেন না।’
বিএনপি অকেজো, দেশ চালায় আমলারা
সভায় জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু মনে করেন বিএনপি এখন শক্তিহীন। তিনি বলেন, ‘বিএনপির নেতৃত্ব আজকে অকেজো হয়ে গেছে। কেউ জোর গলায় প্রতিবাদ করতে পারছে না।’
দেশ আওয়ামী লীগ নয়, আমলারা চালাচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখবেন, যখন কোনো মিটিং হয়, কারা কথা বলে? তারা নির্বাচিত প্রতিনিধি নয়। তারা জনগণের সেবক নয়। তারা সিভিল সার্ভেন্ট। তারা হলো সরকারি কর্মকর্তা। তারাই দেশ চালায়।’
তিনি বলেন, ‘কয়েকটা জায়গায় পৌরসভার নির্বাচন হচ্ছে। সেখানে আমাদের ফোন করতে হচ্ছে ডিসি সাহেবকে, এসপি সাহেবকে। কেন সেখানে ডিসি-এসপিকে ফোন করতে হবে? অবাধ সুস্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের অঙ্গীকার তো সরকারের আছে, দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। কিন্তু কেন সেটা হচ্ছে না?’
সুশাসন ছাড়া পদ্মাসেতুতে লাভ নেই
পদ্মাসেতু দেখতে অনেক সুন্দর মন্তব্য করে বাবলু বলেন, ‘আমরা এটা চাই। কিন্তু সুশাসনও চাই।
‘পদ্মাসেতু হওয়ার পর তখন যদি পদ্মার ওপর দিয়ে ১০টি হোন্ডা, ২০টি গুন্ডা ওপারে গিয়ে সন্ত্রাস করে চলে আসে, তাহলে মানুষ বলবে আমাদের পদ্মাসেতুর দরকার ছিল না।
‘মানুষ তখন বলবে, যে উন্নয়ন আমাদের জীবনের ওপর আঘাত হানে তার আমার দরকার নাই।’
মানুষ শান্তিতে থাকতে না পারলে উন্নয়ন কী কাজে লাগবে এমন প্রশ্নও রাখেন জি এম কাদেরের ডেপুটি।