বাংলাদেশের ঐতিহাসিক দিনগুলোর আরও একটি ফিরে এল। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে আত্মসমর্পণ করিয়ে স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় নিশ্চিত হওয়ার ২৫ দিন পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেশে ফিরে আসার ক্ষণ বছর ঘুরে ফিরে এসেছে।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের দিনও বঙ্গবন্ধুর বেঁচে ফেরাটা নিশ্চিত ছিল না। পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি নেতাকে মুক্ত করে আনতে নানাভাবে চেষ্টা করেছে সদ্যভূমিষ্ট বাংলাদেশ। অবশেষে ৮ জানুয়ারি মুক্তি মেলে তার। পাকিস্তান থেকে লন্ডন ও পরে ভারত হয়ে ১০ জানুয়ারি দেশে ফেরেন তিনি।
এই দিনটি বাংলাদেশে মহাসমারোহে পালিত হয় স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস হিসেবে।
দিনটি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেয়া এক বাণীতে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘১০ জানুয়ারি বাংলার মানুষ তাদের প্রাণপ্রিয় নেতাকে ফিরে পেয়ে অনুভব করেছিল পরিপূর্ণ বিজয়ের স্বাদ।’
তিনি বলেন, ‘এই মহান নেতার অনুপস্থিতিতে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত জয়ের উল্লাস-উদ্দীপনায় অপূর্ণতা ছিল যেমন স্পষ্ট, তেমনি যুদ্ধবিধ্বস্ত সদ্যস্বাধীন দেশ পুনর্গঠনে তার নেতৃত্ব গ্রহণ সার্বজনীন উপলব্ধিতেও ছিল অতি প্রতীক্ষিত।’
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অপারেশন সার্চলাইট শুরুর পর পর বঙ্গবন্ধুকে বন্দি করা হয়। তার আগেই তিনি ঘোষণা করে যান বাংলাদেশের স্বাধীনতা। রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনে তার বিচার শুরু করে পাকিস্তানি সরকার।
স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর জনসভায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
তবে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে বঙ্গবন্ধুকেই মনোনীত করা হয়। তাকে নেতা মেনেই হয় মুক্তিযুদ্ধ।
প্রধানমন্ত্রীর বাণীতে জাতির পিতার দেশে ফেরার ক্ষণটি উঠে এসেছে।
তিনি বলেন, ‘পরাজিত পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। এই দিনে সকাল ছয়টা ৩৬ মিনিটে তিনি লন্ডনে অবতরণ করেন। সেখানে কমনওয়েলথ মহাসচিবের আহ্বানে বাংলাদেশের সদস্যপদ গ্রহণে তাৎক্ষণিক সম্মতি জানান। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং সংবাদ সম্মেলন করেন।’
বঙ্গবন্ধু লন্ডন থেকে দিল্লিতে যাত্রাবিরতি দিয়ে বেলা একটা ৪০ মিনিটে বাংলার মাটিতে পদার্পণ করেন। সেদিন রেসকোর্স ময়দানে বিশাল জনসমুদ্রে এক ভাষণে তিনি পাকিস্তানি সামরিক জান্তার নির্মম নির্যাতনের বর্ণনা দেন। সেই সঙ্গে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা সংঘটনের দায়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে বিচারের মুখোমুখি করতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বাণীতে বলেন, ‘জাতির পিতা ১২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে সর্বশক্তি নিয়োগ করেন। তার বলিষ্ঠ পদক্ষেপে ভারতীয় মিত্রবাহিনী ১৯৭২ সালের ১৫ মার্চের মধ্যে বাংলাদেশ ত্যাগ করে। তিনি ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭২, বাংলাদেশের প্রথম সংবিধানে স্বাক্ষর করেন।
‘তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং বন্ধু দেশসমূহ দ্রুত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে। বঙ্গবন্ধুর ঐন্দ্রজালিক নেতৃত্বে অতি অল্পদিনের মধ্যে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়ায় এবং একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে মাত্র সাড়ে তিন বছরে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।’
বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার বন্ধ করতে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি, জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সেই অধ্যাদেশ সংবিধানের অংশ করা, খুনিদের পুরস্কৃত করার প্রসঙ্গও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
সেই সঙ্গে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের সরকারে ফেরা, একই বছর ১২ নভেম্বর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল আইন সংসদে পাস, বঙ্গবন্ধুর বিচার শুরু, ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে জয়ের পর জাতির পিতার খুনিদের বিচারের রায় কার্যকরের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টিও জানান তিনি।
দিবসের কর্মসূচি
দিবসটি উপলক্ষে রোববার সকাল সাড়ে ৬টায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবন ও সারাদেশে সংগঠনের সকল কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। সকাল ৯টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন এবং বিকাল সাড়ে ৩টায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সীমিত পরিসরে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এখানে ভিডিও কনফান্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্য দেবেন।