রাজধানীর কলাবাগানে প্রাণ হারানো মেয়েটির নাম পরিচয় গণমাধ্যমে প্রকাশ করায় ক্ষোভ জানিয়েছে তার সহপাঠীরা। তারা বলছে, যে ধরনের ঘটনায় মেয়েটির মৃত্যু হয়েছে, তাতে তার পরিচয় গোপন রাখা গণমাধ্যমের কর্তব্য ছিল।
বাবার অভিযোগ, তার কিশোরী মেয়েকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে। এই অভিযোগে তিনি মামলাও করেছেন। পুলিশ একমাত্র আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে। তিনি আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়ায় পুলিশের রিমান্ড আবেদনের শুনানি আর করতে হয়নি।
এই ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার সন্ধ্যায় ধানমন্ডি ২৭ নম্বর সড়কে মোমবাতি প্রজ্বালন করে মেয়েটির সহপাঠীরা। গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলার পর মিছিলটি যায় রবীন্দ্র সরোবরে। সেখানে মেয়েটির স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে হাতে মোমবাতি নিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
- আরও পড়ুন: ধর্ষণ: মারা গেলেও নাম-ছবি প্রকাশ দণ্ডনীয়
এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘গণমাধ্যমে আমরা দেখতে পাচ্ছি বারবার ভুক্তভোগীর নিজের এবং পরিবারের পরিচয় তুলে আনা হচ্ছে। কিন্তু এখনও অভিযুক্ত দিহানের বাবা-মা কে সেইটা কেউ বলছে না।’
আরেক জন বলেন, 'ভুক্তভোগীর বাবা-মা যখন পাসপোর্টসহ সমস্ত কাগজ দেখিয়ে বলছে তার বয়স ১৮ বছরের কম। সেটি কেন গ্রহণ করা হচ্ছে না আমরা বুঝতে পারছি না।’
মেয়েটির বাবা নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের যে ধারায় মামলা করেছেন, তাতে ভুক্তভোগীর পরিচয় প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা আছে আইনে।
বাংলাদেশে ধর্ষণ বা নারী লাঞ্ছনার ঘটনায় ভুক্তভোগীদের নাম প্রকাশ না হলেও কেউ মারা গেলে কিছু গণমাধ্যম তার নাম পরিচয় প্রকাশ করে থাকে।
কলাবাগানের মেয়েটি মারা যাওয়ার পর বেশ কিছু প্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যম মেয়েটির নাম প্রকাশ করেছে, তার ছবি ছাপিয়েছে, তার মায়ের চেহারা ব্লার না করে তার বক্তব্য প্রচার করেছে।
পুলিশের সহকারী মহাপরিদর্শক (মিডিয়া) সোহেল রানা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, মেয়েটির পরিচয় ও ছবি প্রকাশ বেআইনি হয়েছে।
মেয়েটির সহপাঠীদের কর্মসূচিতে এই বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ জানানোর পাশাপাশি নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টি গুরুত্ব পায়।
এক ছাত্র বলেন, ‘আমরা এখানে আজকে একসঙ্গে দাঁড়িয়েছি শুধু আমাদের বন্ধুর ঘটনার জন্য না। সারা দেশে মেয়েদের নিরাপত্তা আমাদের প্রশাসন নিশ্চিত করতে পারছে না। যতগুলো ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে তার সুষ্ঠ বিচার এখনও হয়নি। আজকের এই মিছিলে আমাদের যে নারী বন্ধুরা এসেছে, তারা নিরাপদে ঘরে ফিরে যাবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই।’
সমাবেশে তিন দাবি
১. আসামি ফারদিন ইফতেখার দিহান ও তার সঙ্গীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হবে এবং এক সপ্তাহের মধ্যে বিচার শুরু করতে হবে।
২. যারা এই অন্যায়ে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ছিল, তাদের সাজাও নিশ্চিত করতে হবে।
৩. যেসব মানুষ গুজব ছড়াচ্ছে এবং মেয়েটির ব্যাপারে অকথ্য কথাবার্তা বলছে এবং মেয়েটির পরিবারকে হুমকি দিচ্ছে তাদেরকেও আইনের আওতায় আনতে হবে।